নতুন নেতৃত্ব ঠিক করতে দুদিনের এক অধিবেশনে বসছেন কিউবান সাংসদরা, যার মধ্য দিয়ে চার দশকেরও বেশি সময় পর কমিউনিস্টশাসিত কিউবা বরণ করতে যাচ্ছে কাস্ত্রো পরিবারের বাইরে নতুন এক প্রেসিডেন্টকে।হাভানার কনভেনশন সেন্টারে বুধবার থেকে শুরু হওয়া এ অধিবেশনে বিভিন্ন এলাকা ও শ্রেণির ৬০৫ সাংসদ রাউল কাস্ত্রোর স্থলাভিষিক্ত নির্বাচনের পাশাপাশি নতুন ৩০ স্টেট কাউন্সিলরও ঠিক করবেন, আগামী দিনগুলোতে এ কাউন্সিলররাই দেশটির প্রতিনিধিত্ব করবেন।
তুলনামূলকভাবে তরুণ এ নেতৃত্বকে রাউলের শুরু করা অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াসহ প্রবৃদ্ধি বাড়ানো এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নানামুখী হুমকি মোকাবেলা করতে হবে, মন্তব্য রয়টার্সের।৮৬ বছর বয়সী রাউলের জায়গায় নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশটির বর্তমান ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-কানেলের নামই ঘুরেফিরে আসছে। উদারপন্থি হিসেবে পরিচিত ৫৭ বছর বয়সী এ প্রকৌশলীর প্রযুক্তিতে ঝোঁক আছে; যার হাতে ক্ষমতা সপে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাইছেন কিউবা বিপ্লবের সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া গেরিলা প্রজন্ম। প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়লেও ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিতে কাস্ত্রো এবং ১৯৫৯ সালে হওয়া কিউবা বিপ্লবের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের প্রভাব আগের মতই বলবৎ থাকবে বলেও মনে করছে রয়টার্স। ফিদেলের নেতৃত্বে ওই বিপ্লবেই মার্কিন মদতপুষ্ট একনায়ক বাতিস্তা ক্ষমতাচ্যুত হন।এরপর থেকেই ক্ষমতায় ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। ১৯৫৯ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সংবিধানে প্রেসিডেন্টের হাতে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়ার পর ওই বছরই পদ বদলে রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে বসেন এ কিংবদন্তি বিপ্লবী। তার হাত ধরেই দেশটি প্রবেশ করে সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায়।শারিরীক অসুস্থতার কারণে এক দশক আগে ক্ষমতা ছেড়ে দেন ভাই রাউলের হাতে।

নতুন নেতৃত্বকে প্রথম থেকেই কিউবার অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে নজর দিতে হবে, যার বর্তমান আয়তন নেমে এসেছে ১৯৮৫ সালে থাকা আয়তনেরও নিচে। সেসময় সোভিয়েত রাশিয়ার কাছ থেকে নানা ধরনের অর্থনৈতিক সহায়তা পেত ফ্লোরিডার মিয়ামি থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরের এ দেশটি।২০০৮ সালে ফিদেলের কাছ থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নসহ অভ্যন্তরীণ খাতে বেশকিছু সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছিলেন রাউল। তার সময়েই কিউবার পর্যটন খাত নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজানো হয়।ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের পুরস্কারস্বরূপ বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ব্র“নো রড্রিগেজ নতুন সরকারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন বলেও ধারণা পর্যবেক্ষকদের। শীর্ষ পদগুলোর একটিতে দেখা যেতে পারে হাভানার কমিউনিস্ট পার্টি প্রধান ৫৩ বছর বয়সী মার্সেডেজ লোপেজ আসিয়াকেও।বিপ্লব পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্বে কিউবায় নাটকীয় পরিবর্তন আসবে না বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। আগের মতোই ক্যারিবীয় দেশটি একদলীয় গণতন্ত্রের পথে হাঁটবে বলেও ধারণা তাদের।যদিও নেতৃত্ব পরিবর্তন নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত।এই মুহুর্তে আমি আসলে বলতে পারছি না ভবিষ্যতে কী হবে। রাউল শেষ, ফিদেল ইতিহাস। কিউবার জনগণের জীবনযাত্রা এর চেয়ে বেশি ভালো হওয়ার উপায় দেখছি না; বেতন একই রকম, পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে তার কোনো লক্ষণও নেই। এর মধ্যে ট্রাম্প আবার অবরোধের কড়াকড়ি বাড়িয়েই যাচ্ছেন, কি হতে পারে ভাবুন,” উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন হাভানার ৪৫ বছর বয়সী শিক্ষক আদ্রিয়ানা ভালদিভিয়া।খানিকটা ভিন্নমত আছে মার্কিন সিনেটর প্যাট্রিক লিহির। নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন ভাবনা থাকতেই পারে,” কিউবার রাজনীতি নিয়ে রয়টার্সকে দেওয়া মন্তব্যে এমনটাই বলছিলেন তিনি।অনেক কিউবান অবশ্য এ নিয়ে একদমই ভাবছেন না।আমার মনে হয় না (রাষ্ট্র) প্রধান বদলে আমার জীবনের তেমন কোনো বদল ঘটবে, বলেন ভেদাদোর রাষ্ট্র মালিকানাধীন রেস্তোরাঁয় কাজ করা ৩৪ বছর বয়সী দিয়াদেনিস সানাব্রিয়া।