সম্পদ নিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি কথা চলছেই।আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের সংবাদ সম্মেলনের পরদিন বুধবার বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা অভিযোগ তোলেন।নৌকার প্রার্থীর তালুকদার খালেক সংবাদ সম্মেলনটি করেছিলেন আগের দিন ধানের শীষের প্রার্থী মঞ্জুর সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায়।আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে দুজনের মনোনয়নপত্র বৈধতা পাওয়ার পর গত সোমবারের ওই সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জু অভিযোগ করেছিলেন, খালেক তার হলফনামায় আয় সংক্রান্ত তথ্য গোপন করেছেন।তার জবাব দিতে গিয়ে তালুকদার খালেকের সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতারা মঞ্জুর হলফনামায় সম্পদ কম দেখে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, তার আয় ২০ হাজার টাকা হলে ব্যক্তিগত গাড়িচালকককে বেতন দেন কীভাবে?ওই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে আসা মঞ্জু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কোটিপতি হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

বিএনপির এই কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, তিনি (খালেক) নয় বছর আগে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন। কী এমন ব্যবসা করলেন যে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেলেন!মঞ্জুর ‘হাঁড়ি’ ভেঙে দেওয়ার যে হুমকি খালেকের সংবাদ সম্মেলন থেকে দেওয়া হয়েছিল, তার জবাবে তিনি বলেন, “খালেকের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অনেক তথ্য আছে, যা বললে তিনি মুখ লুকাতে পারবেন না।কিন্তু আমরা তা বলব না। আমরা কাদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না, বলেন মঞ্জু।আগের দিন খালেকও কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে মঞ্জুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া হলফনামায় কোটিপতি তালুকদার খালেক তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৪১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫৫ টাকা। মৎস্য ঘেরে থেকে আয় বেশি আসে তার। অন্যদিকে মঞ্জু বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।গাড়ি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার কথা জবাবে মঞ্জু বলেন, আমার ড্রাইভার হাওয়া খায় না। তার মাসিক বেতন ৭ হাজার টাকা।সংসদ সদস্য থাকাকালে ব্যাংক ঋণ ২০লাখ এবং নিজস্ব পৌনে ৪ লাখ টাকা দিয়ে একটি ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি কিনেছিলাম। তেল কেনার পয়সা থাকলে গাড়ি চড়ি, না থাকলে রিকশায় বা দলের নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেলে চড়ি।বাড়ির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২৬ বছরের পারিবারিক জীবনে পুরনো আসবাবপত্র ও টিভি দিয়ে সংসার চলছে। একটি ডাইনিং টেবিল আছে শশুর বাড়ির দেওয়া। এই শহরে ৯ হাজার টাকায় দুই রুমের একটি ছোট ভাড়া বাসায় আমরা বসবাস করি।সম্পদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ও স্ত্রীর মিলিয়ে পৌনে ৫ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। আমার ছেলে ও মেয়ের দায়িত্ব তাদের মামারা নিয়েছেন। আমার ছেলে ও মেয়ে টিউশনি করে তাদের লেখাপড়ার খরচ চালায়।বাংলাদেশের এমন কোনো সংসদ সদস্য আছে বলে আমার জানা নেই যে তার ছেলে-মেয়েরা টিউশনি করে লেখাপড়া করছে। এ নিয়ে আমি গর্ববোধ করি।
এক প্রশ্নের জবাবে মঞ্জু বলেন, কয়েকজনে মিলে খুলনা প্রপার্টিজ লিমিটেড নামে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান গঠন করি। কিন্তু ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় তা শুরুতেই মৃত্যুবরণ করে। বিএনপি করি বলে কোনো ব্যাংক ঋণ দিতে সাহস পায়নি।সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান মনির সঙ্গে যোগসাজসে কর্পোরেশনের টাকা ভাগ বাটোয়ারার অভিযোগকে ‘আষাঢ়ে গল্প’ বলে উড়িয়ে দেন তিনি।
নির্বাচনের খরচ কীভাবে মেটাবেন- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জু বলেন, আমার দলের নেতা-কর্মীরা এবং শশুর বাড়ির থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে নির্বাচনী ব্যয় বহন করব।সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জুর সঙ্গে ছিলেন খুলনা মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, সেকেন্দার জাফর উল্লাহ খান সাচ্চু, সাবেক সাংসদ কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম ও সৈয়দা নার্গিস আলী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক তারিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম।রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলীকে উদ্দেশ করে মঞ্জু বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরির জন্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে ৯ দফা দাবি পেশ করি আমরা। কিন্তু তার একটি দাবিও পূরণ হয়নি।বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে ইউনুচ আলী বলেন, ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব খুলনায় এসে লেভেল প্লেইং ফিল্ড সম্পর্কে বক্তব্য দিয়ে গেছেন। আমি তাদের অধস্তন কর্মকর্তা হয়ে আর কী বলতে পারি। বিএনপি ঢালাওভাবে অভিযোগ করলে করার কী আছে?খালেকের সম্পদ নিয়ে মঞ্জুর অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা এর আগে বলেছিলেন, প্রার্থীদের হলফনামা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলে এগুলো তদন্ত করে দেখতে পারে।