বাণিজ্যমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মণিরামপুর উপজেলা কন্ট্রোলর অব ফুড (ইউসিএফ) ফাতেমা সুলতানা। হতদরিদ্রের ডিলারদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, ফুডগ্রেন ও চালকলের লাইসেন্স বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায়,নি¤œমানের ধান-চাল সংগ্রহ করে মোটা অংকের বাণিজ্যসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যা তিনি করছেন না। আর নিজেকে বাণিজ্য মন্ত্রীর নিকটতম আতœীয় বলে পরিচয় দিয়ে সব অনিয়ম জায়েজ করে যাচ্ছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মণিরামপুর উপজেলা কন্ট্রোলর অব ফুড (ইউসিএফ) ফাতেমা সুলতানার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। সদ্য সমাপ্ত হওয়া আমন চাল সংগ্রহ মৌসুমে এই অসাধু কর্মকর্তা খাওয়ার অনুপোযোগী ১৪শ’টন চাল সংগ্রহ করে। ফাতেমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি, টন প্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা রেট বেঁধে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর এই ঘুষের টাকা উঠাতে মিলার মতিয়ার রহমান ও জগদীশ চন্দ্রকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ফাতেমা সুলতানার স্বেচ্ছারিতা ও অনিয়মের কারনে বিগত সময়ে মনিরামপুরে নিম্ন মানের চাল ক্রয় এবং বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রেরন-বিতরনে উক্ত চালের মান নিয়ে ভোক্তাদের অভিযোগ পাওয়া যায়।

সূত্র বলছে, মনিরামপুরে ১৭ টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা সমন্বয়ে যশোর জেলার সবচেয়ে বড় আয়তনের উপজেলা। বর্তমানে হতদরিদ্রদের মাঝে স্বল্প মূল্যে খাদ্য সরবরাহের কাজ চলছে। এখানে মোট ৪৬ জন ডিলার রয়েছে। কিন্তু ওই চাল উত্তোলনের ডিও দিতে ফাতেমা সুলতানা অফিস খরচ বাবদ প্রতি ডিলারের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা করে উৎকোচ গ্রহণ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডিলার জানান, ‘ম্যাডামকে ঘুষ না দিলে ডিওতে স্বাক্ষর হয় না, বাধ্য হয়ে তারা অনৈতিক সুবিধা দেন। এই অসাধু কর্মকর্তাকে সুবিধা দিতে গিয়ে হতদরিদ্রদের চাল ওজনে কম দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। ফলে সরকারের ১০ টাকা দরে ভর্ত্তুকী মূল্যে খাদ্য সরবরাহ প্রকল্প এখানে হুমকীর মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করে ওই ডিলার।’

সূত্র বলছে, মণিরামপুরের একমাত্র খাদ্য পরিদর্শককে প্রায় ৪ মাস যাবত অঘোষিত ছুটিতে রেখেছেন ইউসিএফ ফাতেমা সুলতানা। ফলে প্রত্যন্ত এলাকায় ডিলারেরা হতদরিদ্রদের মাঝে চাল বিক্রি করছে কিনা তা সঠিক তদারকির কেউ নেই। হত দরিদ্র জনগন তাদের ন্যায্য প্রাপ্ত ও বুঝে পাচ্ছেন না বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তদারকি না করে ভোক্তাদের ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।সূত্র বলছে, ফুডগ্রেন লাইসেন্স নিয়েও নয়ছয় করছেন ফাতেমা সুলতানা। তিনি লাইসেন্সের সরকারি খরচ ৫শ’ টাকার স্থলে কৌশলে ৩/৪ হাজার টাকা আদায় করেন। ফলে তার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ীরাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘ইউসিএফ তার কাছ থেকে ফুডগ্রেন লাইসেন্স বাবদ ৪ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।’ ওই ব্যবসায়ী লাইসেন্সের জন্য কয়েক দফা ধর্ণা দেয়ার পর ঘুষ দিতে বাধ্য হন। সরকারি চালকলের লাইসেন্স দিতে তিনি রেট বেঁধে উৎকোচ আদায় করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কয়েক মাস আগে ৩/৪ জন চালকল মালিক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলে তিনি তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৬/৭ হাজার টাকার উৎকোচ দাবী করেন। ওই টাকা না দেয়ায় আবেদন ফাইল জেলা অফিসে না পাঠিয়ে আটকিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র বলছে, ফাতেমা সুলতানা এর আগে চৌগাছায় ছিলেন। সেখানে হতদরিদ্র ডিলার নিয়োগে অনিয়ম করে বড় ধারণের অর্থ বাণিজ্য করেন। এ সংক্রান্ত অভিযোগ দপ্তরে পৌঁছালে তার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি বিষয়টি যাচাই বাছাইয়ের জন্য যশোরে আসলে তিনি বিশেষ একটি সুপারিশের মাধ্যমে সে পর্বে রক্ষা পান বলে অভিযোগ রয়েছে।এর পর তার দুর্নীতি ও অনিয়ম আরও লাগাহীনভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তিনি নিজেকে বাণিজ্য মন্ত্রীর নিকটতম আত্তীয় বলে পরিচয় দিয়ে সব অনিয়ম জায়েজ করে যাচ্ছেন। ৩ বছরের অধিক সময় পার করায় সম্প্রতি খাদ্য অধিদপ্তর থেকে তাকে বাঘারপাড়ায় বদলী করা হয়। কিন্তু সেখানে যোগদান না করে বিশেষ সুপারিশের মাধ্যমে তিনি বদলী স্থগিত করে পূর্বের কর্মস্থলেই বহাল রয়েছেন। ফলে এই অসাধু কর্মকর্তার খুঁটির জোর কোথায় তা নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন খাদ্য কর্মকর্তা বলেন,‘ফাতেমা ম্যাডামের পরিবারের সাথে বাণিজ্যমন্ত্রীর সু সম্পর্ক রয়েছে বলে সবাই জানে। তিনি ওই মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছেন। ফলে উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে কথা বলেন না।’অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মণিরামপুর উপজেলা কন্ট্রোলর অব ফুড (ইউসিএফ) ফাতেমা সুলতানা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। পরিচ্ছন্ন ভাষায় হুমকিও দেন। বলেন, আপনি রিপোর্ট করার আগে সবার কাছে ভাল করে খোঁজখবর নিয়ে লিখেন।

এব্যাপারে ডিসি ফুড নকিব সাদ সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এমন ধরনের কোন অভিযোগ আমি পাইনি বা আমাকে কেউ এব্যাপারে বলেনি। আর প্রধান মন্ত্রীর হতদরিদ্র খাদ্য কর্মসূচির বিষয়টি আমরা কড়াকড়ি ভাবেই দেখছি। হতদরিদ্র খাদ্র কর্মসূচির বিষয়ে আমরা কোথাও কোন অভিযোগ পাইনি। আপনি যখন বলেছেন আমি খাঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখছি।