দেশের একমাত্র মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা-মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাইশ) নমুনা ডিম ছেড়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে ডিম সংগ্রহকারীরা হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার গড়দুয়ারা নয়াহাট, আজিমের ঘাট, অংকুরী ঘোনা, কাগতিয়ার টেক এলাকার বিভিন্ন স্পটে নমুনা ডিম আহরণ করেছে বলে জানান ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর।

তিনি আরো জানান, নমুনা ডিম সংগ্রহের পর থেকে ডিম ছাড়তে পারে এমন আশায় ডিম সংগ্রহকারী সহ¯্রাধিক জেলে এখন নদীর পাড়ে নৌকা, জাল ও ডিম আহরণের সরঞ্জাম নিয়ে এখন হালদার বুকে অবস্থান করছে। প্রবল বর্ষণ ও মেঘের তুমুল গর্জন তথা নদীতে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ থাকলে আজ-কালের মধ্যে যে কোন সময় মা মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভবনা বেশি বলে মনে করেন হালদা বিষয়ে বিজ্ঞমহল। সরজমিনে দেখা গেছে, গতকাল বুধবার মধ্য রাত থেকে আকাশে ব্রজপাত ও বৃষ্টি শুরু হলে নৌকা, জাল ও ডিম আহরণের সরঞ্জাম নিয়ে সহস্রাধিক জেলে অপেক্ষা করছে হালদার বুকে। এছাড়া জেলে পল্লীর অন্যান্য সদস্য বস্ত সময় পার করছেন নদী থেকে ডিম সংগ্রহ পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য সনাতন পদ্ধতিতে ডিম পরিস্ফুটনের জন্য স্থান নির্ণয় ও কৃত্রিম পুকুর নির্মাণসহ আরো অনেক কাজে। আবার অনেকে এসব কার্য সর্ম্পন্ন না করে আধুনিক পদ্ধতিতে হ্যাচারীর মাধ্যমে ডিম পরিস্ফুটনের জন্য ঠিক করে রেখেছেন বিভিন্ন হ্যাচারী।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, হাটহাজারী ও রাউজান দুই উপজেলায় ৭টি হ্যাচারী রয়েছে। এসব হ্যাচারী গুলো হল-হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট হ্যাচারী, শাহা মাদারী হ্যাচারী, মাছুয়াঘোনা হ্যাচারী, গড়দুয়ারা নয়াহাট হ্যাচারী ও রাউজান উপজেলার কাগতিয়া হ্যাচারী, পশ্চিম গহিরা হ্যাচারী, মোবারক খিল হ্যাচারী। তবে হ্যাচারী গুলোর মধ্যে মোবারক খিল হ্যাচারী ও মদুনাঘাট হ্যাচারী দুইটির অবস্থা মোটামুটি হলেও বেশ কয়েকটির অবস্থা শোচনীয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আজহারুল আলম মুঠোফোনে হ্যাচরীর অবস্থা বেশ শোচনীয় বলে স্বীকার করে বলেন, মোবারক খিল ও মদুনাঘাট হ্যাচারী দুইটি মধ্যে মদুনাঘাট হ্যাচারীর পাম্পটি গত বুধবার নষ্ট হয়ে গেছে। তবে আমার হাটহাজারী উপজেলার ৪টি হ্যাচারী সংস্কারের জন্য কাজ শুরু করেছি। তারমধ্যে আমাদের লোকবলও কম।তবে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউ-েশন (আইডিএফ) কর্তৃক হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায় বাস্তাবায়িত হয়েছে প্রায় ৪০টি মাটির কুয়ায় হ্যাচিং পদ্ধতির আধুনিকায়ন প্রযুক্তি। আর ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিম সংগ্রহকারীরা নিরাপদে নিষিক্ত ডিম থেকে রেণু উৎপাদন করতে পারবে বরে এ প্রতিবেদকে জানান আইডিএফ কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন। উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র মিঠা পানির এই হালদা নদী বিশ্বের একমাত্র অন্যতম জোয়ার-ভাঁটার নদী। এখানে প্রতি বছর এই সময়ে কার্প জাতীয় রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাইশ সহ বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছের নিষিক্ত ডিম ছাড়ে এবং জেলেরা ডিম সংগ্রহ করে পরে তা কয়েক দফায় বিকিকিনি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে। অপার এই জীব বৈচিত্র ও মৎস্য সম্পদের অন্যতম রূপালী খনি জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রেখে চলেছে বহু বছর ধরে।