বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারণার সুযোগ দিলে তা হবে সংবিধান ও নির্বাচনী আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন। গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে সাংসদদের প্রচারে নামার সুযোগ দিতে নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনাকে ‘সংবিধান পরিপন্থি’ বলেছে বিএনপি।

জাতীয় প্রেসক্লাবে শুক্রবার দুপুরে জাতীয়তাবাদী নাগরিক দল আয়োজিত দোয়া ও স্মরণসভায় মোশাররফ হোসেন এ কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির প্রয়াত সভাপতি মো. খোরশেদ আলমের স্মরণে এ সভা হয়। মোশাররফ বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি, নির্বাচন কমিশন সংসদ সদস্যদের প্রচারে যাওয়ার সুযোগ দিতে পারে। আমরা বলতে চাই, এটা স্পষ্টভাবে সংবিধানের লঙ্ঘন হবে, আইনের লঙ্ঘন হবে, নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন হবে।২০১৫ সালে দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তের পর সরকারি সুবিধাভোগীদের নির্বাচনী সফর ও প্রচারে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করে আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মন্ত্রী-সাংসদের প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়।এ নিয়ে শুরু থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের দাবির মুখে সম্প্রতি স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেয় নির্বাচন কমিশন।খন্দকার মোশাররফ বলেন,নির্বাচন কমিশনকে আবারো আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনারা স্বাধীন, আপনারা নিরপেক্ষ ।

আপনাদের যে বিধি, সেই বিধি যাতে লঙ্ঘন না হয়, সেটা আপনারা দেখবেন। অন্যথায় জনগণই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে যে আগামী সংসদ নির্বাচন আপনারা (ইসি) নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে পারবেন না।সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি আবারও তুলে ধরে এই বিএনপি নেতা বলেন, আমরা ইসিতে গিয়েছিলাম। তাদের বলেছি, এই দুটি সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। আমরা শুনলাম এখন পর্যন্ত তাদের কোনো চিন্তাভাবনা নাই।আমরা আবারও বলতে চাই, আপনারা (ইসি) চিন্তায় আনেন। দুটি সিটি করপোরেশনের ভোটাররা নির্ভয়ে নিজের ভোটটা ইচ্ছামত দিতে পারবে না। এই দুটি সিটি নির্বাচন এই ইসির জন্য অগ্নিপরীক্ষা।

প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা সারাদেশে নৌকায় ভোট চেয়ে প্রকারান্তরে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকেও প্রভাবিত করছে বলে অভিযোগ করেন খন্দকার মোশাররফ।তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা নৌকায় ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছে। তাহলে সেটা কী হয়? এই মিডিয়ার সৌজন্যে এটা সারাদেশের মানুষ জানতে পারে যে নৌকায় ভোট চাচ্ছে।গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনেও আওয়ামী লীগ নৌকায় ভোট চাচ্ছে। প্রকারান্তরে ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দরা সিটি করপোরেশনেও ভোট চাচ্ছেন। এটা তারা চাইতে পারেন না। এটা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।দুর্নীতি মামলার সাজায় কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, এই মামলা ষড়যন্ত্রের অংশ। সরকার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি মত প্রহসন করে ভোট ছাড়া জনগণ ছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচন করতে চায়।আমরা বলতে চাই, অনেক পানি গড়িয়েছে। এখন ২০১৪ সাল নয়, এখন ২০১৮ সাল। ২০১৪ সালের মত নির্বাচন আর হতে দেওয়া হবে না।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, ইতিমধ্যেই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের যে প্রান্তেই প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও এমপিরা নৌকায় ভোট চান, তা পক্ষান্তরে সিটি নির্বাচনে নৌকায় ভোট চাওয়ার শামিল। এ কারণে সিটি নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও এমপিরা নৌকায় ভোট চাইতে পারবেন না। যদি চান, তা সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে।বিএনপির এই নেতা বলেন, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইসির জন্য অগ্নিপরীক্ষা। বিএনপি গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা শুনলাম এ বিষয়ে ইসির কোনো চিন্তা নেই। আমি ইসিকে বলতে চাই, চিন্তায় আনুন। অন্যথায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণ নির্ভয়ে ও নিজ হাতে তাদের ভোটটা দিতে পারবে না।

সরকারের উদ্দেশে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সামনে দুটি পথ আছে। প্রথমত, নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সংসদ ভেঙে দিয়ে সেই নির্বাচন করতে হবে এবং নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এগুলো চাইবে না। আমরা আশাও করি না, কোনো স্বৈরাচার স্বেচ্ছায় জনগণকে এ সুযোগ দেবে।খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সুযোগ আমাদের তৈরি করে নিতে হবে। এ জন্য জনগণ ঐক্যবদ্ধ আছে। সুতরাং ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো ভোট ও ভোটার ছাড়া আর কোনো পাতানো খেলা হতে দেওয়া হবে না। সংগঠনের সভাপতি মো. ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে মনজুর হোসেন ঈসার পরিচালনায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম, সাবেক সাংসদ আব্দুল গফুর ভূঁইয়া, আতাউর রহমান আঙ্গুর কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার মারুফ হোসেন, প্রয়াত খোরশেদ আলমের ছেলে আতিকুল আলমসহ চান্দিনা ও হোমনার বিএনপির নেতারা আলোচনায় অংশ নেন।