সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, সরকার একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্য কোটি কোটি মানুষের জীবনের ওপরে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এটাকে আমি মনে করি, শুধু অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা তা না, এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) নতুন মূল্য নির্ধারণ প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন।শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনা সভায় অংশ নেন আবুল মকসুদ। ভোক্তাস্বার্থ উপযোগী-পরিবেশবান্ধব এলএনজি ও এলপিজির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের দাবিতে নাগরিক কমিটি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

বারবার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করে সরকার মানুষের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছে বলে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে মন্তব্য করেছেন সৈয়দ আবুল মকসুদ।তিনি বলেন, ‘ছোট ছোট গোষ্ঠীর স্বার্থে সরকার কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপনের মূল্যবৃদ্ধি করছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন।সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ নয়। এটা রাজনৈতিক অঙ্গীকারের কাজ।’ এ সময় তিনি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি বন্ধ করার দাবি জানান।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের মহাজন-ব্যবসায়ীদের মতো আচরণ করছে। সরকার পার্টনারশিপ ব্যবসায়ী হয়ে গেছে। বছরে দুবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করছে। সরকার কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করছে। উন্নয়নের নামে পরিবেশ নষ্ট করছে।তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ টেকসই উন্নয়ন চায়। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা করতে চায়। আর সরকার এসবের ধারে কাছেও নেই।’ এভাবে চলতে থাকলে সরকারকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।সভায় নগর পরিকল্পনাবিদ স্থাপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে সরকার আমদানি গ্যাসের বৃদ্ধি করা দাম যৌক্তিক করছে।তিনি বলেন, ‘সাগর জয় করে সরকার নানা উৎসব করছে। কিন্তু সাগর থেকে গ্যাস উত্তোলনের দিকে তাদের নজর নেই।তিনি জানান, ভারত ও মিয়ানমার সাগর থেকে গ্যাস উত্তোলন করছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও শুরু করতে পারেনি। ফলে বাংলাদেশের গ্যাস ভারত ও মিয়ানমারের দিকে চলে যাচ্ছে।’ এসব দিকে কেন সরকারের নজর নেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইসলাম বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবেশ দূষণ নৈরাজ্যের দিকে চলে যাচ্ছে।তিনি বলেন, সরকার একসময় বলছে দেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে। আবার একই মুখে বলছে গ্যাস শেষের দিকে। মূলত নিজেদের স্বার্থে সরকার এমন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।সরকার বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কেনে তিন ডলারে। আর দেশি কোম্পানির কাছ থেকে কেনে এক ডলারে, এমন তথ্য তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘গ্যাসের দাম সঠিক করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং ন্যায় সমতা দরকার হবে।এদিকে সভা থেকে দাবি তোলা হয়, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আগে অবশ্যই যেন গণশুনানি নিশ্চিত করা হয়।সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম, কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশের (সিপিবি) সভাপতিমন্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।