বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বুঝে আসে না আগামী একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমস্যা কোথায়?দেশের যেকোনো ধরনের দুর্যোগ উত্তরণে সেনাবাহিনীর অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। তাহলে একটি নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে এই বাহিনীর ভূমিকা থাকলে ক্ষতি কী’, যোগ করেন বিএনপির নেতা।শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় খসরু এ কথা বলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারটি সরকারের কাছে এত স্পর্শকাতর হয়ে গেল কেন-তা দেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে। কারণ সেনাবাহিনী মোতায়েন করে এতগুলো নির্বাচন হলো একটিও প্রশ্নবিদ্ধ হলো না। কিন্তু সেনাবাহিনী ছাড়া নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলো। তাহলে তাদের তদারকিতে নির্বাচনের বিষয়টি স্পর্শকাতর হলো কেন?তাদের (আওয়ামী লীগ) কাছে সেনাবাহিনী স্পর্শকাতর। কারণ,তাঁরা ভয় পাচ্ছেন নিজেদের দুর্বলতার কারণে। সেনাবাহিনীর প্রতি কোনো রাজনৈতিক দলের দুর্বলতা থাকলে বুঝতে হবে তাঁরা দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি অন্যায় করছেন। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের ভূমিকা পালন করলে তাদের ভয় হতো না। সেনাবাহিনী দেশের মানুষের যেকোনো দুর্যোগের সামনে দাঁড়িয়েছে। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার মতো এত বড় বিপদ বা দুর্যোগ আর নেই।এমন দুর্যোগে সেনাবাহিনীর ভূমিকা থাকলে তাদের সমস্যা কোথায়? নিশ্চয়, ডাল মে কুচ কালা হয়া। কোনো সমস্যা অবশ্যই আছে, না হলে তাদের ভয় কেন?

আগামী সংসদ নির্বাচনে মানুষ নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রত্যাশা করছে বলেও দাবি করেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।সরকার ক্ষমতায় থাকতে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে উন্নয়নের মিথ্যাচার করছে অভিযোগ করে আমির খসরু বলেন, তারা মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে উন্নয়নের কথা বলে যাচ্ছে। অধিকার কেড়ে নিয়ে যখন বারবার উন্নয়নের কথা বলতে থাকে তখন আপনাকে বুঝতে হবে এটা একটা নিশ্চিত স্বৈরাচার সরকার। যুগে যুগে এটা হয়ে আসছে। উন্নয়নের কথা বিক্রি করে ক্ষমতা ধরে রাখা।সরকার উন্নয়নের নামে ধোঁকা দিচ্ছে দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, উন্নয়নের যে মূলভিত্তি সেগুলো হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান। গত আট বছর আগে দেশের মানুষের যে জীবনযাত্রার মান ছিল আজকে সেই অবস্থান থেকে ৯-১০ শতাংশ কমে গেছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে আমরা আজ সর্বনিম্ন। আজকে দেশে সাড়ে চার কোটি মানুষ বেকার। যাদের চাকরি আছে তাদের জীবনযাত্রার মানও কমে গেছে। বাংলাদেশে আজকে ব্যক্তিগত কোনো বিনিয়োগ নেই। বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে না।সরকারি বিনিয়োগে যে মেগাদুর্নীতি হচ্ছে এর টাকাটা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এই টাকা সুইস ব্যাংকে যাচ্ছে, লন্ডনে মায়েশিয়া, কানাডাও যাচ্ছে, বাড়ি করছে। এগুলো সব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিশ্ব এখন ওপেন। কার বাড়ি কোথায় সব জানা যায়। এগুলো লুকানো সম্ভব নয়। পানামা পেপারসে তাদের নাম এসেছে। ব্যাংকগুলো খারাপ পরিস্থিতি করে রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে দুই বছর আগে, এখনো তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করছে না। কারণ, এই টাকা চুরি করার পেছনে তাদের লোকজন জড়িত, বলেন দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

সরকার প্রবৃদ্ধি নিয়ে মিথ্যাচার করছে অভিযোগ করে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তন হলে বিষয়টি তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, যে দেশে মানুষের চাকরি নেই, ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে- এই পরিস্থিতিতে যদি বলেন সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তাহলে এর চেয়ে মিথ্যা আর কিছুই হতে পারে না। বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বলছে, এই খবর সত্যি নয়। কারণ অর্থনীতির মাঠপর্যায়ের যে খবর তার সঙ্গে এই প্রবৃদ্ধির খবরের মিল নেই। এটি বানোয়াট। যখন সরকার পরিবর্তন হবে এটার তদন্ত হওয়া উচিত যে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে মিথ্যা প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে।দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এই সভার আয়োজন করা হয়। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এস এম হাসান তালুকদার, জিনাফের সভাপতি লায়ন মিয়া মো. আনোয়ার, বিএনপি নেতা শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।