প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বেসরকারি নিন্মমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষকের কোনো পদ নেই। অতিরিক্ত শ্রেণি শাখার শিক্ষক সরকারি বেতন ভাতা দাবী না করার শর্তে নিয়োগ দেয়া যাবে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে যাই থাক টাকা দিয়ে নিয়োগ, এমপিও দু’টোই হয়েছে। অবৈধ ভাবে এমপিও ভুক্তি নিয়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম (ইনডেক্স নং- ১০৭৫১৮১) ও অতিরিক্ত শ্রেণি শাখার শিক্ষক মোস্তফা হাসান (ইনডেক্স নং- ১১১৮৮১৩) সরকারী কোষাগারের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে ম্যানেজ করে টাকা দিয়ে এমপিও ভুক্ত হয়েছেন তারা আর এসব অপকর্মের সাথে প্রধান শিক্ষক সরাসরি জড়িত। লাখ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য, এমপিও জালিয়াতি থেকে শুরু করে নানা দূর্নীতি আর অপকর্মে বিদ্যালয়টি ধব্বংশের দিকে। প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন কম্পিউটার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ও অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষক মোস্তফা হাসান অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সবই ষড়যন্ত্র।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সরকারি প্রজ্ঞাপনে নিন্মমাধ্যমিক বিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনুমোদন না পেলে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাবে না স্পস্ট উল্লেখ থাকলেও নিম্নমাধ্যমিক স্তরের মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে রফিকুল ইসলামকে নিয়োগ দেখিয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে। বিধি- বিধানকে পাশ কাটিয়ে অতিরিক্ত শ্রেণি শাখার শিক্ষক হিসেবে মোস্তফা হাসানকেও নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগের ২ বছরের মধ্যে অবৈধ পন্থায় মোটা অংকের টাকা দিয়ে এমপিও ভুক্ত হন মোস্তফা হাসান (ইনডেক্স নং- ১১১৮৮১৩)। কম্পিউটার শিক্ষকের কোনো পদ না থাকলেও টাকার জোরে এমপিও ভুক্ত হয়ে গোটা উপজেলার মধ্যে একমাত্র সরকারি বেতন, ভাতা ভোগী পদধারি কম্পিউটার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম (ইনডেক্স নং- ১০৭৫১৮১)।

বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষক নিয়োগ, এমপিও জালিয়াতিসহ নানা ধরণের দূর্নীতি করে অর্ধকোটি টাকা লোপাট করেছেন প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন। প্রতিষ্ঠানটির স্বার্থে দূর্নীতিগ্রস্থ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও শাস্তি দাবী করেন তাঁরা।

বিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালের অক্টোবরে এক প্রজ্ঞাপনে বিদ্যালয়ে কর্মরত বৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত এমপিও বর্হিভুত শিক্ষকদের তালিকা চেয়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষকদের তালিকা যথানিয়মে পাঠানো হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক এমদাদুল হক, গোলাম মোস্তফা, শিব চরণের নাম বাদ পরে আবারও অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ এবং এমপিও প্রাপ্ত শিক্ষক মোস্তফা হাসানের নাম এমপিও ভুক্তি তালিকায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে আসে। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়। তালিকায় একই নাম একাধিকবার আসা ও অন্য শিক্ষকদের নাম উধাওয়ের ঘটনায় মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক এমদাদুল হক ও গোলাম মোস্তফা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করে অভিযোগের কপি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে প্রেরণ করেন।
মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন বলেন, তার বিদ্যালয়ে নিয়োগকৃত অতিরিক্ত শ্রেণি শাখার শিক্ষক ৪ জনের মধ্যে মোস্তফা হাসানের এমপিও হয়েছে। এ রকম ঘটনা অনেক প্রতিষ্ঠানেই আছে। তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি অসুস্থ্য ছুটিতে আছি, পরে কথা হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া অভিযোগ প্রাপ্তি স্বীকার করে বলেন, একাডেমিক সুপার ভাইজারসহ তদন্ত করেছি। তদন্তে তাঁদের বিষয়টি দেখেছি সেগুলোর সত্যতা আমার কাছে প্রতিয়মান হয়। সে জন্য ওই দুই শিক্ষকের বেতন ও উপস্থিতি শিটে প্রতিস্বাক্ষর দেয়া বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত রিপোর্ট উর্দ্ধতন কর্র্তৃপক্ষের নিকট পাঠানোর ব্যাপার প্রক্রিয়াধীন।

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর কুতুবুল আলম বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছে- যে সময় থেকে সরকারি ভাবে এমপিও ভূক্তকরণ বন্দ রয়েছে, তারপরে দু’জন শিক্ষকের এমপিও ভূক্তির বিষয়টি তাঁর দৃষ্টিতে আসে। বিষয়টি তদন্ত করে লিখিত ভাবে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে বলেছি। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যে নির্দেশনা দিবে আমরা তা বাস্তবায়ণ করব।