গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেরদিন রবিবার নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের নানা গুজব শোনা গেছে। এদিন একাধিক প্রার্থী বিভিন্ন সংগঠণ ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বি অন্য প্রার্থীদের সমর্থন আদায়ের জন্য নানাভাবে জোর লবিংয়ের মাধ্যমে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। রবিবার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জামায়াতের মহানগর শাখার আমীর এস এম সানাউল্লাহ দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এদিন তিনি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের সঙ্গে তার বাসায় সাক্ষাত করে সমর্থন জানিয়েছেন। এদিকে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সমর্থনে মহাজোটের শরীক জাসদ মনোনীত অপর মেয়র প্রার্থী রাশেদুল হাসান রানার মনোয়নপত্র প্রত্যাহারের বিষয় নিয়ে দিনভর নানা গুজব শোনা গেছে। তবে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থনের ব্যাপারে তিনি বিকেল পর্যন্ত দলের হাই কমান্ডের কোন নির্দেশ পান নি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, রবিবার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এস এম সানাউল্লাহ, সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী ২৮ নং ওয়ার্ডের ডা. আজিজুর রহমান ও ৩৭ নং ওয়ার্ডের সাদ্দাম হোসেন তন্ময় প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এনিয়ে এ পর্যন্ত মেয়র প্রার্থী একজন ও সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী ৩জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।

আগামী ১৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে প্রার্থীরা বিজয়ী হতে তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ভোটের হিসাব নিকাশ করে নানা পরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারনে ব্যাস্ত দিন কাটিয়েছেন। এ নির্বাচনের প্রার্থীতা (মনোনয়নপত্র) প্রত্যাহারের শেষ দিন সোমবার (২৩ এপ্রিল)। এ দিনটিকে সামনে রেখে তারা বিভিন্ন সংগঠণ ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বি অন্য প্রার্থীদের সমর্থন আদায়ের জন্য নানাভাবে জোর লবিং চালিয়েছেন। এতে তারা সুফলও পেয়েছেন। যা নির্বাচনের জয়লাভে অনেকটা প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় ভোটাররা। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগেরদিন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিশ দলীয় জোটের শরীক জামায়াতের মহানগর শাখার আমীর এস এম সানাউল্লাহ দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এদিন তিনি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের সঙ্গে তার বাসায় সাক্ষাত কওে আনুষ্ঠাণিকভাবে সমর্থন জানিয়েছেন। এসময় তিনি ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে দলের সকল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণা চালাতে এবং প্রার্থীর জন্য ভোট চাইতে ভোটারদের ঘরে ঘরে যেতে অনুরোধ করেন। এসময় গাজীপুর মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মো. খায়রুল আনাম, নায়েবে আমির মো. জামাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সেক্রেটারি মো. আফজাল হোসাই, মহানগর ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি মিজানুর রহমান, সেক্রেটারি ফখরুল আলম সিফাতসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটির নেতৃবৃন্দসহ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, টঙ্গী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম শুক্কুর, গাজীপুর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াত নেতা সানাউল্লাহ বলেন, জামায়াতের হাইকমান্ডের নির্দেশে আমরা জোটগতভাবে গাজীপুর সিটি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর সমর্থনে আমার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছি।

এদিকে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, জামায়াতের সমর্থনে বিশ দলীয় জোটের ঐক্য আরো দৃঢ় হলো।

এছাড়াও গাজীপুর জেলা হেফাজতে ইসলাম এর যুগ্ন সম্পাদক মাওলানা নাসির উদ্দিন, জেলা যুব জমিয়তের সভাপতি হাফেজ শাহ আলম, জেলা জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম এর সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মূসা কালিমুল্লাহ, জেলা ছাত্র জমিয়তের সভাপতি মুফতি শাহাদাত হোসেন প্রমুখ নেতারা হাসান উদ্দিন সরকারের বাসায় গিয়ে তাকে সমর্থন দেন এবং ২০ দলীয় জোটের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন।

অপরদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম রবিবার দুপুরে ছয়দানা এলাকার নিজ বাসায় গাজীপুর মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নির্বাচনী নানা কৌশল নিয়ে মতবিনিময় করেন। এসময় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মোঃ মোহর আলীর সভাপতিত্বে সাবেক সাংসদ মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার জননেতা কাজী মোজাম্মেল হকসহ মহানগরের ৫৭ ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ নয়ন, এমদাদ হোসেন, আব্দুল হামিদ, মোঃ লিয়াকত আলী, এ্যাড. জালাল উদ্দিন আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, মোঃ হাতেম আলী, মোঃ মোজাফফর প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সভায় মুক্তিযোদ্ধারা শেখ হাসিনার মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে সমর্থন জানান।

এসময় মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমেদ, অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মহি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ শহিদুল্লাহ, যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক এসএম মোকছেদ আলম, সহ-দপ্তর সম্পাদক মোঃ মাজহারুল ইসলাম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সমর্থন জানিয়ে মহাজোটের শরীক জাসদ মনোনীত অপর মেয়র প্রার্থী রাশেদুল হাসান রানা তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাড়াচ্ছেন- এমন সংবাদ দিনভর শোনা গেলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন নি। নানা গুজবের একপর্যায়ে তিনি চান্দনা এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থনের ব্যাপারে বিকেল পর্যন্ত দলের হাই কমান্ডের কোন নির্দেশ পাওয়া যায়নি। ফলে তিনি এখন পর্যন্ত মেয়র পদে প্রার্থী রয়েছেন।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সোমবার (২৩ এপ্রিল) প্রার্থীতা (মনোনয়নপত্র) প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ২৪ এপ্রিল এবং ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৫ মে। এবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫লাখ ৬৭হাজার ৮০১। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর হতে এটি হবে দ্বিতীয় নির্বাচন।