ঢাকামেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সদ্যজাত এক শিশুকে চিকিৎসকরা ‘মৃত’ ঘোষণা করলেও কবরস্থানে নিয়ে গোসল দেওয়ার সময় নড়েচড়ে উঠেছে সে। তাৎক্ষণিক শিশুটিকে শ্যামলীর ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে তাকে। সোমবার (২৩ এপ্রিল) সকালে ঢামেকে শিশুটির জন্ম দেন শারমিন আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ। তার স্বামীর নাম মিনহাজ উদ্দিন। তাদের বাড়ি ঢাকার ধামরাইয়ের শ্রীরামপুরে।গত শনিবার (২১ এপ্রিল) শারমিনকে ঢামেকের ১০৫ নং ওয়ার্ডের ৪ নং বেডে ভর্তি করা হয়। শারমিনের ভাই শরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সকাল ৮টায় তার বোনের বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু ঢামেকের চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি মৃত। তখন তার মরদেহ দাফনের জন্য আজিমপুর গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ‘মৃত’ ঘোষিত সেই নবজাতকই গোরস্থানে ‘জীবিত’ শনাক্ত শিশুটি কি-না, সে বিষয়ে সন্দিহান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এজন্য বিষয়টি তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে তারা। কমিটি পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখছে। সোমবার বিকেলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। নবজাতকের মামা শরিফুল ইসলামের ভাষ্যে, সকালে ঢামেকে শিশুটির জন্ম দেন তার বোন শারমিন আক্তার (২০)। তখন চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি মৃত। এরপর তার মরদেহ দাফনের জন্য আজিমপুর গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু গোরস্থানে নেওয়া হলে গোসল দেওয়ার সময় সে নড়েচড়ে ওঠে এবং শ্বাস নিতে থাকে। ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ২৭ সপ্তাহ প্রেগন্যান্সি নিয়ে শারমিন নামের ওই নারী ঢামেকে ভর্তি হন। সকালে তার একটি স্টিলবর্ন বেবি (মৃত বাচ্চা) হয়। এখনও ওই নারীর ব্লেডিং হচ্ছে। তার চিকিৎসা চলছে। মৃত বাচ্চা হওয়ার বিষয়টি তার স্বজনদের জানানো হয় এবং মৃত বাচ্চাটিও হ্যান্ডওভার করা হয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের তদন্ত করে দেখতে হবে যে শিশুটিকে ‘জীবিত’ দাবি করা হচ্ছে সে এই নারীরই কি-না। তদন্ত করা হবে এবং কী হয়েছে তা জানা হবে। তবে এ বিষয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। শরিফুল ইসলাম জানান, শিশুটিকে গোরস্থান থেকে তাৎক্ষণিক আজিমপুর ম্যাটার্নিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় শ্যামলীর ঢাকা শিশু হাসপাতালে। এখন ওই হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউতে (হৃদরোগের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাকে। শারমিনের স্বামীর নাম মিনহাজ উদ্দিন। তাদের বাড়ি ঢাকার ধামরাইয়ের শ্রীরামপুরে। গত শনিবার (২১ এপ্রিল) শারমিনকে ঢামেকের ১০৫ নং ওয়ার্ডের ৪ নং বেডে ভর্তি করা হয়।

শিশু হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আবু তৈয়ব বলেন, শিশুটিকে আইসিইউতে রেখে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার অবস্থা ভালো না। চিকিৎসকরা তাকে সুস্থ করে তুলতে চেষ্টা করবেন।শিশুটির বাবা মিনহাজ উদ্দিন সাভারের নয়াডিঙ্গির একটি পোশাক কারখানায় আয়রনম্যান পদে কাজ করেন। আর মা শারমিন আক্তার এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। জীবিত শিশুকে মৃত ঘোষণার অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. বিদ্যুৎ কান্তি পালকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. বাচ্চু মিয়া জানান, শনিবার সাভার থেকে এসে গাইনি বিভাগের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন শারমিন আক্তার। সোমবার সকালে তিনি কন্যা সন্তান প্রসব করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।এরপর শিশুটিকে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় আজিমপুর কবরস্থানে। সেখানে গোসলের সময় শিশুটির দেহে প্রাণ থাকার বিষয়টি টের পান ঢাকা সিটি করপোরেশনের ড্রেসার জেসমিন বেগম।দাফনের আগে গোসল দেওয়ার সময় বাচ্চাটা নড়াচড়া শুরু করে। তখনই বিষয়টা আমি ওর অভিভাবকদের জানাই। তারা ওই বাচ্চাকে নিয়ে শিশু হাসপাতালে চলে যায়।শিশু হাসপাতালের উপ পরিচালক আবু তৈয়ব বলেন, শিশুটির মায়ের রক্তশূন্যতা ছিল। সাত মাসে তিনি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। শিশুটির অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়।আমরা মনে করছি, সকালে শিশুটির হার্ট কাজ করছিল না। তাকে কবরস্থানে নেওয়ার পর হার্ট সামান্য কাজ করা শুরুরুরে। এরপর তার পরিবারের সদস্যরা তাকে শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসেন।