আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যদি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না-ও থেকে থাকে, তাহলেও তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে। তারেক রহমানকে আপাতত বাংলাদেশের নাগরিক নন বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী। এই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমান যদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নাগরিক হতে চান, তাহলে তিনি তা পারবেন বলেও মনে করেন আনিসুল হক।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন। ২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদ্যাপনের তথ্য জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।আনিসুল হক বলেন, মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাক্টের অধীনে তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।প্রয়োজনে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি করা হবে জানিয়ে তিনি বলছেন, এ বিষয়ে আলোচনাও চলছে।২০০৮ সাল থেকে সপরিবারে লন্ডনে থাকা তারেক রহমানের পাসপোর্ট জমা দেওয়া নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে নানা আলোচনার মধ্যে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের আদালতে দুটি মামলায় তার সাত ও দশ বছরের সাজার রায় হয়।

যে পাসপোর্ট নিয়ে তারেক লন্ডন গিয়েছিলেন, তার মেয়াদ ২০১৩ সালে ফুরিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গত ২৩ এপ্রিল বলেছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তার পাসপোর্ট যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে সারেন্ডার করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তারেক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন বলেই তিনি মনে করেন।প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৪ এপিল যে সংবাদ সম্মেলন করেন, সেখানে প্রথমবারের মত দলটি স্বীকার করে নেয় যে, তারেক তার পাসপোর্ট ব্রিটিশ হোম অফিসে জমা দিয়েছেন রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য। ফখরুলের দাবি, তারেক নাগরিকত্ব ত্যাগ করেননি।

এর আগে গত শনিবার লন্ডনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আদালতে দন্ডিত তারেক রহমানকে ‘যেভাবেই হোক’ দেশে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন।তারেককে কিভাবে দেশে ফেরানো হবে তার ব্যাখ্যায় আনিসুল হক জাতিসংঘের নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিটেন্স অ্যাক্ট করার কথা বলেন।জাতিসংঘের যে সকল সদস্য আছে তাদের মধ্যে এই আইন থাকলেৃ যে কোনো অপরাধী যদি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায় তাকে যেন ধরে আনার সুবিধা থাকে। আজকাল অনেক ট্রান্স বর্ডার, ট্রান্স ন্যাশনাল ফৌজদারী অপরাধ ঘটে যাচ্ছে সেজন্য এই মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিটেন্স অ্যাক্টের আন্ডারে তারেক রহমান যদি বাংলাদেশের নাগরিক নাও এখন থেকে থাকেন তাহলে তাকে আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব।
তারেক রহমানের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব থাকা না থাকার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যদি আপনি থাকেন এবং আপনার যদি পাসপোর্ট না থাকে তাহলে আপনার নাগরিকত্ব অ্যাফেকটেড হয় না।পাসপোর্ট হচ্ছে ট্রাভেল ডকুমেন্টের মত, আপনাকে বাইরে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট প্রয়োজন হয়। বাইরে গিয়ে আপনি যে বাংলাদেশের নাগরিক এই পাসপোর্টই কিন্তু সেটার আইডেনটিটি।

আনিসুল হক বলেন, আমি যতটুকু তথ্য জানি একজন পলাতক দন্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার জন্য পাসপোর্ট সারেন্ডার করেছেন। তার মানে তিনি বলেছেন যে, আপাতত আমি বাংলাদেশের নাগরিক থাকতে চাই না, আমি পাসপোর্টটা সারেন্ডার করলাম, আপনারা আমাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিন। সেটা যদি তিনি করে থাকেন তিনি কিন্তু যখন গিয়েছিলেন মুচলেকা দিয়ে গিয়েছেন এবং গিয়ে পাসপোর্ট সারেন্ডার করেছেন। তার মানে তিনি স্বেচ্ছায় বলেছেন, আমি বাংলাদেশের নাগরিক থাকতে চাই না। এখন তার স্ট্যাটাস হচ্ছে তিনি ব্রিটেনের রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন, যুক্তরাজ্য তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে কি না আমার কাছে সে সম্বন্ধে কিন্তু কোনো তথ্য নাই।তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ডিনাই করেছেন, কিন্তু তার মানে এই না ভবিষ্যতে তিনি যদি বাংলাদেশের নাগরিক হতে চান তাহলে আর পারবেন না, এটা তো না।আমাদের ভূখন্ডে তিনি অপরাধ করেছেন, তখন তিনি বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের কোনো বন্দি বিনিময় চুক্তি নাই। কিন্তু এটা করতে কোনো বাধা নেই, আমরা সে রকম আলাপ-আলোচনাও করছি।