বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মাসুদ রেজোয়ান বলেছেন, পাসপোর্ট সমর্পণ করার সঙ্গে নাগরিকত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। নাগরিকত্ব ত্যাগ করা আলাদা। বিষয়।সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাসপোর্ট নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন।বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিজি বলেন, কারও পাসপোর্ট না থাকলে তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল হয় না। যদি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর নাগরিকত্ব বাতিলের আবেদন করেন, তবে সেটা হবে ভিন্ন বিষয়। তবে তারেক এ বিষয়ে কোনো আবেদন করেছেন কি না, তা আমাদের জানা নেই।

ডিজি জানান, তারেক যদি এখন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন, তা তিনি পাবেন না। বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধ্যাদেশ ১৯৭৩ দেখিয়ে তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি দুই বছরের জন্য দন্ডিত হন, তবে পাঁচ বছরের মধ্যে তিনি পাসপোর্ট পাবেন না। ২০১৪ সালে লন্ডনে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার পর বিএনপির এই নেতা নতুন করে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেননি।মহাপরিচালক বলেন, তারেককে পাসপোর্ট পেতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে, যা তাঁর নেই। পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে হলে তাঁকে দেশে ফিরতে হবে।এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, দেশে ফিরতে তারেক রহমানের কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস নিয়ে তিনি আসতে পারবেন। এটা যে-কেউই পারবেন। ২০০৮ সালে দেশ ছাড়ার পর লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে তারেক রহমান ২০১০ সালে তার পাসপোর্ট নবায়ন করেন। দেশ ছাড়ার সময় তিনি অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত ছিলেন না।

২৩ এপ্রিল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী-কন্যা তাঁদের পাসপোর্ট যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সমর্পণ করেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাসপোর্ট নিয়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তার এমন বক্তব্য আসে।২০০৮ সালে সপরিবারে লন্ডন যাওয়ার পর আর ফেরেননি তারেক। সেখানে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের আদালতে দুটি মামলায় তার সাত ও দশ বছরের সাজার রায় হয়। যে পাসপোর্ট নিয়ে তারেক লন্ডন গিয়েছিলেন, তার মেয়াদ ২০১৩ সালে ফুরিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গত ২৩ এপ্রিল বলেছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তার পাসপোর্ট যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে ‘সারেন্ডার’ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তারেক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন বলেই তিনি মনে করেন।প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৪ এপিল যে সংবাদ সম্মেলন করেন, সেখানে প্রথমবারের মত দলটি স্বীকার করে নেয় যে, তারেক তার পাসপোর্ট ব্রিটিশ হোম অফিসে জমা দিয়েছেন রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য। ফখরুলের দাবি, তারেক নাগরিকত্ব ত্যাগ করেননি।ওই বিতর্কের সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক জানতে চান, তারেক রহমান এখনও বাংলাদেশের নাগরিক কি না।

উত্তরে মহাপরিচালক বলেন, নাগরিকত্বের সঙ্গে পাসপোর্টের কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশে সবার কি পাসপোর্ট আছে? না থাকলে তারা কি নাগরিকত্ব হারিয়েছে? তা তো না। নাগরিকত্ব একটা আলাদা জিনিস। সে যদি নিজে থেকে বলে যে আমি নাগরিকত্ব সারেন্ডার করব, সেটা আলাদা কথা। বাট পাসপোর্টের সাথে এটা না।তারেকের পাসপোর্ট জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কী কারণ দেখিয়েছেন, সেখানে নাগরিকত্ব ত্যাগের কোনো বিষয় আছে কি না- এসব প্রশ্নে মহাপরিচালক বলেন, বিষয়গুলো তার জানা নেই।তারেকের পাসপোর্ট জমা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার পর এই বিএনপি নেতা নতুন করে আর পাসপোর্টের আবেদন করেননি।আমি ডিটেইল চেক করেছি, অন্য কোনো পাসপোর্ট উনি নেননি। সুতরাং উনি লন্ডনে যে আছেন, পাসপোর্টবিহীনৃ বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়া উনি অবস্থান করছেন।এই অবস্থায় নতুন পাসপোর্টের আবেদন করলে তারেক কেন তা পাবেন না, তার ব্যাখ্যায় ১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট আদেশ থেকে বিধি উদ্ধৃত করেন মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান।

তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট আদেশ অনুযায়ী, আদালতে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে নূন্যতম দুই বছরের সাজা হলে পাঁচ বছরের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায় না।একইভাবে কেউ যদি দেশের কোনো আদালতে কেনো ফৌজদারি মামলায় হাজিরা এড়ান বা এড়ানোর চেষ্টায় থাকেন- তাকেও পাসপোর্ট দেওয়া যায় না।সুতরাং উনি যদি লন্ডন থেকে পাসপোর্টের আবেদন করেন, তিনি তা পাবেন না। আরেকটা বিষয় হল, পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য তার ন্যাশনাল আইডি নিতে হবে। ন্যাশনাল আইডি পেতে তার বাংলাদেশে আসতে হবে।মহাপরিচালক বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে ট্র্যাভেল পাস নিয়ে তার মাধ্যমে দেশে আসতে পারেন। দেশে আসার পর তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে পারেন এবং তারপর নতুন করে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন। নতুন আবেদন পেলে পাসপোর্ট অধিদপ্তর তখন নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।