কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ঘোষণা এ মাসের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ। তা না হলে আগামী মাস থেকে আবার আন্দোলনে নামবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তাঁরা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ছাত্রদের হয়রানি করার জন্য অজ্ঞাতনামা হিসেবে পাঁচটি মামলা হয়েছে। এগুলোর প্রত্যাহার চান তাঁরা। যারা প্রকৃত অপরাধী, তাদের নামে মামলা দায়ের করার দাবি জানান তাঁরা।কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী এই সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘আমরাও চাই, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গেজেট আকারে প্রকাশ হোক। আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চাই। আমরা ১৭ ফেব্র“য়ারি থেকে কোটা সংস্কারের জন্য অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু অল্প কিছু মিডিয়া আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে রাশেদ খান বলেন, কোটা আন্দোলন নিয়ে এর আগে একটি পত্রিকা মিথ্যা সংবাদ ছেপে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল। ২০ এপ্রিল আরেকটি পত্রিকা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে আরও একটি মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছে। এটি বিকেলের মধ্যে প্রত্যাহার করা না হলে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক খান, নুরুল হক, আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের অভিযোগ, সম্প্রতি তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে হুমকি দিয়েছে। এ ধরনের আর কোনো শিক্ষার্থীকে তুলে না নিয়ে যাওয়ার দাবি জানান তাঁরা। বলেন, এ রকম হলে ছাত্রসমাজ বসে থাকবে না।

আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার দুই সপ্তাহ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বুধবার বলেছেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে তাঁরা কোনো লিখিত নির্দেশনা পাননি। এমনকি এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের যে কথা ছিল তা-ও হয়নি।আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এ বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি হবে। একই সঙ্গে তাঁরা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে করা মামলাগুলোর প্রত্যাহার চান।

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারে পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। সর্বশেষ ৮ এপ্রিল ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে, যা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। এরপর আন্দোলনকারীরা কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফরে যাওয়ায় প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি পিছিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী সোমবার দেশে ফিরেছেন। আন্দোলনকারীরা আশা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দেশে আসার পরপরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁরা নির্দেশনা পাননি। ফলে এখনো আগের অবস্থাতেই আছেন।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে লিখিত নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারছেন না। কারণ সেই নির্দেশনাতেই বলা থাকবে কী করতে হবে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিদেশ সফরে গেছেন।

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেও ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও প্রতিবন্ধীদের মতো অবহেলিত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটির মাধ্যমে এই বিষয়টি ঠিক করার কথা। কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল জানিয়েছেন, কোটা ও কমিটির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।এদিকে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার কোনো পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা না গেলে সেগুলো মেধাতালিকা পূরণের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে যে স্পষ্টীকরণ প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সেটা ২১ এপ্রিল গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেছেন, পুরোনো সিদ্ধান্তের আলোকে এই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এটা নতুন কোনো সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলবে না। বরং নির্দেশনা পাওয়ামাত্রই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। নতুন প্রজ্ঞাপন জারি হলে পুরোনো সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা থাকবে না। গত ৬ মার্চ কোটার কোনো পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা না গেলে সেগুলো মেধাতালিকা থেকে পূরণের বিষয়ে ওই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। পরে ৫ এপ্রিল বিষয়টি স্পষ্ট করে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কোটা বাতিল ধরে নিয়েও তাঁরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। তবে ইতিমধ্যে যেসব চাকরির বিজ্ঞাপন হয়ে গেছে, সেগুলো হয়তো আগের নিয়মেই হবে।