গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাত মেয়র প্রার্থীকে জনগণের মুখোমুখি করেছে সুজন।এসময় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাত মেয়র প্রার্থী এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে আধুনিক ও পরিকল্পিত নগর গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। সোমবার গাজীপুর জেলা শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে প্রার্থীরা এ অঙ্গীকার করেন।

এতে সভাপতিত্ব করেন সুজনের গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম। সভাটি সঞ্চালনা করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক মো. বদিউল আলম মজুমদার ও সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দীলিপ কুমার সরকার। এখানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুজনের জেলা সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সজীব।

অনুষ্ঠানে লটারির মাধ্যমে প্রার্থীদের বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। এছাড়া উন্মুক্তভাবে নাগরিকদের নানা প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হয়।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের প্রতি দুটি বিষয়ের সর্বোচ্চ প্রত্যাশার কথা উঠে এসেছে জনতার কাছ থেকে। এর একটি মাদকের ছড়াছড়ি বন্ধ করা ও অপরটি ছিনতাই-সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করা।

শুরুতেই বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ফজলুর রহমান বলেন, মেয়রের দায়িত্ব পেলে তা আমানত বলে মনে করে নাগরিকদের জন্য কাজ করব। শুধু নাগরিক নয় আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা রয়েছে বলে কাজ করব। মসজিদে ইমামদের সম্মানীর ব্যবস্থা করব। সিটিতে মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত করব।

এখানে আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছি। আমি গাজীপুর সিটিকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করে আধুনিক শহরে পরিণত করতে চাই। ৫টি অর্থনৈতিক জোন ও ৮টি শ্রমিক আবাসন গড়ে তুলব। নারী-পুরুষের সমান অধিকারসহ সকল পেশা-বর্নের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করবেন। এছাড়া যানজট মুক্ত করতে ঢাকার এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত ডাবল লাইনের রেলপথ স্থাপন সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাইপাস সড়ক স্থাপনে উদ্যোগ নেবেন।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, নির্বাচিত হলে নাগরিকদের কল্যাণমূলক কাজ করব। গাজীপুর সিটির নাগরিকদের সমস্যা চিহ্নিত করে তাদের আশা-আকাঙ্খা পূরণের চেষ্টা করব এবং পরিকল্পিত নগরী গড়ে তুলব। হাসান উদ্দিন বলেন, স্থানীয় সরকারের কাজে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ থাকে। এতে অনেকের সদইচ্ছা থাকলেও স্বাধীনভাবে কাজ করা যায় না। বর্তমান মেয়র এমএ মান্নানেরও ওই সমস্যা হয়েছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী কাজী মো. রুহুল আমীন বলেন, গাজীপুর একটি শিল্প সমৃদ্ধ জেলা। তিনি মানুষে-মানুষে বৈষম্য দূর করতে চান। সিটিকে যানজট মুক্ত, বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরিত করতে চান।

বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট প্রার্থী মো. জালাল উদ্দিন বলেন, গাজীপুরকে আধুনিক ও পরিবেশ বান্ধব তিলোত্তমা নগরী করে গড়তে চাই। তিনি শিশুপার্ক ও প্রবীন নিবাস স্থাপন, কলকালখানায় নারী শ্রমিকদের শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনেরও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাদক নির্মূল করতে চান এবং বিজ্ঞানমনস্ক নগরী গড়তে চান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের জন্য যা বাজেট হবে তার শতভাগই নগরীর উন্নয়ন কাজে ব্যয় হবে। কোন দূর্নীতি হবে না। আমি নাগরিকের খাদেম হিসেবে তাজ করতে চাই। আমার দায়িত্বে প্রতি আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করব।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে সিটির প্রতি ওয়ার্ডে বেকারদের কর্মর্সস্থানের ব্যবস্থা করবেন, প্রতি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি সাংবাদিকদের জন্য একটি ডিজিটাল প্রেস ইনস্টিটিউট ভবনও করে দেয়ার প্রতিশ্রুতির কথাও জানান।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে প্রার্থীদের সঙ্গে নাগরিকদের উন্মুক্ত প্রশ্ন ও উত্তরের আয়োজন করে সুজন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৫,২৬,২৭ নং ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছে প্রশ্ন করে বলেন, নারী কাউন্সিলররা অবহেলিত হয়ে থাকে। তিনটি ওয়ার্ডের ভোটারদের ভোটে তাদের নির্বাচিত হয়ে থাকেন। অর্থাৎ সাধারণ ওয়ার্ডের চেয়ে অধিক ভোটে তাদের নির্বাচিত হয়। তাদেরকে বিভিন্ন কমিটিতে প্রধান করা হয় না।

অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধি নাগরিক নুর মোহাম্মদ জানতে চান, যিনি মেয়র নির্বাচত হবে তিনি তাদের মত অসহায়দের জন্য তারা কি করবেন।

২৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলী হাওলাদার প্রশ্ন রাখেন তার এলাকা পড়েছে গাজীপুর ক্যান্টনমেন্টের কাছে থাকায় সিটির কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তারা পাশ করলে এ ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেবে।
এবার সিটি নির্বাচনে ২৫,২৬,২৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাবিহা খাতুন জানতে চান, তারা অসহায় নারী ও এলাকার ড্রেনেজ, মাদকরোধ ও যানজটের জন্য কি উদ্যোগ নেবেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রার্থী ও নাগরিকসহ উপস্থিত সকলেই জাতীয় সঙ্গীতে অংশ নেন। পরে সুজনের দেয়া অঙ্গীকারনামায় প্রার্থীরা স্বাক্ষর করেন।