সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বর্তমানের ট্রাফিক আইন পরিবর্তন করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। তিনি বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া যদি কেউ গাড়ি চালায়, তার সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে চারমাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০০ টাকা জরিমানা। কার্যক্ষেত্রে অনেক সময় দেখেছিÑ তিন দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড বা ৪০০ টাকা জরিমানা। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালিয়ে যদি এইটুকু দন্ড হয়, তাহলে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়ার গরজ তেমন কেউ বোধ করবে না।সোমবার (৩০ এপিল) দুপুরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কী কথা হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে খায়রুল হক বলেন, ‘ট্রাফিক আইন নিয়ে আলোচনা করেছি। ট্রাফিক আইন পরিবর্তন প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। দেশের লোক যদি মনে করে ট্রাফিক আইন পরিবর্তন হওয়া দরকার, পরিবর্তন হবে। আর যদি দেশের লোক মনে করে যে, পরিবর্তন হওয়ার প্রয়োজন নেই, তাহলে হবে না।ট্রাফিক আইন কেন পরিবর্তন দরকার তা জানতে চাইলে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, আজকেই দৈনিক কালের কণ্ঠে আমার একটি ইন্টারভিউ বেরিয়েছে। তাতে অনেক কিছু ব্যাখ্যা করেছি। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া যদি কেউ গাড়ি চালায়, তার সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছেÑ চারমাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০০ টাকা জরিমানা। কার্যক্ষেত্রে অনেক সময় দেখেছি, তিন দিনের বিনাশ্রম কারাদ- বা ৪০০ টাকা জরিমানা। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালিয়ে যদি এইটুকু দন্ড হয়, তাহলে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়ার গরজ তেমন কেউ বোধ করবে না।

তিনি বলেন, ইদানিং তো আরও একটা নতুন বিষয় দেখছি, এক গাড়ি আরেক গাড়ির ওপর উঠিয়ে দিচ্ছে। যেটা আজকাল আসা-যাওয়ার সময় দেখি। সড়ক দুর্ঘটনা কীভাবে বাড়ছে! মানুষের পা চলে যাচ্ছে, হাত চলে যাচ্ছে, মাথা চলে যাচ্ছে। এভাবে তো কোনও সভ্যদেশ চলতে পারে না। এজন্যই দরকার আইনের পরিবর্তন, এর প্রয়োগও। শাস্তি বাড়িয়ে কেবল হবে না, এটার প্রয়োগও প্রয়োজন। আমাদের মনোবৃত্তি, মনোভাবেরও পরিবর্তন করা প্রয়োজন। গাড়ির যে মালিক তার ছেলেও কাল মারা যেতে পারে। যে বিচারক ৪০০ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিচ্ছেন, তার ছেলেও কাল মারা যেতে পারে। তাই আইনের পরিবর্তন বড় প্রয়োজন বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আর কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে সাবেক এই বিচারপতি বলেন, কমার্শিয়াল কোর্ট, কমার্শিয়াল ডিসপিউট ও আর্বিট্রেশন (সালিশি মামলা) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক আর্বিট্রেশন সিঙ্গাপুরে চলে যায়। আমাদের দেশের আর্বিট্রেশন কোর্টগুলো আরও কার্যকর করা, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির আইন পরিবর্তন করার জন্য ফিল্ড ওয়ার্কিং শুরু করে দিয়েছি। যাতে অল্প সময়ের মধ্যে কম খরচে আর্বিট্রেশন হতে পারে।তিনি মনে করেন, দেশে যত ইনভেস্টমেন্ট বাড়বে, তত কমার্শিয়াল ডিসপিউট বাড়বে। বাড়লে তা হয় কোর্টে যাবে, নইলে আর্বিট্রেশনে যবে। আমাদের দেশের কোর্টগুলো সিআরপিসির (ফৌজদারি কার্যবিধি) অধীনে। এখানে কমার্শিয়াল ডিসপিউট সমাধান করতে গেলে অনেক সময় লাগে। তার কারণে কমার্শিয়াল কোর্ট কীভাবে যুগোপযোগী করা যায়, নতুন কোর্ট করার প্রয়োজন আছে কিনা, এ ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করেছি। কারণ, চিফ জাস্টিসের মতামত গুরুত্ব বহন করে।