মহিমান্বিত সৌভাগ্যের রজনী, পবিত্র শব-ই-বরাত আজ (মঙ্গলবার) মুসলমানদের জীবনে মহান আল্লাহ যে কয়টি রাতকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, লাইলাতুল বরাত বা শব-ই-বরাত তার একটি বলে মনে করা হয়।রাতভর ইবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ তা’আলার অন্গ্রুহ, ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। সিয়াম সাধনার প্রস্তুতির এ রাতে কৃতকর্মের জন্য পরম করুণাময়ের দরবারে ক্ষমা চান তারা।

হিজরি বর্ষপঞ্জীর শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। মুসলমানদের জীবনে মহান আল্লাহ যে পাঁচটি রাতকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন শব-ই-বরাত তার একটি।পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা বা আত্মসংযমের প্রস্তুতি হিসেবেই শবে বরাতের রাতটি মুসলমানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিশ্বাস, মহান আল্লাহ তাআলা এ রাতে বান্দাদের জন্য অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন।জীবনের ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-তাপের জন্য পরম করুণাময়ের কাছে কাছে মুসলমানরা ক্ষমা প্রার্থনা করেন। রাতভর নফল নামাজ, জিকির আসকার, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিন¤্র প্রার্থনা করেন ভবিষ্যত জীবনের পরিশুদ্ধতার জন্য।

মসজিদগুলোতে সন্ধ্যার পর থেকেই চলে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত। গভীর রাত পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগীতে মগ্ন থাকেন মুসল্লিরা। নফল রোজাও রাখেন অনেকে।এছাড়া প্রয়াত আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া করা হয়। শবে বরাত হাদিসের চয়ন করা শব্দ নয়। হাদিসে রয়েছে লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান বা মধ্য শা’বানের রজনী। অর্থাৎ শা’বান মাসের ১৪ তারিখ সন্ধ্যার পর যে রাত সেটাই শবে বরাত।এই রাত নিয়ে প্রচুর গবেষণা, মনীষীদের উক্তি ও পক্ষে বিপক্ষে নানা মত রয়েছে। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে কুরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ করে আমাদের প্রত্যেকের কিছু করণীয় ও বর্জনীয় থাকে শবে বরাতকে কেন্দ্র করে। সেই করণীয় ও বর্জনীয় আপনাদের খেদমতে উপস্থাপন করছি।

করণীয়:কুরআন হাদিস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো। কেননা এটার মাধ্যমেই আমরা সকল বির্তকের অবসান ঘটিয়ে একটি সুন্দর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো।এই রাত সম্পর্কে একটি সহিহ হাদিস যা সুনানে ইবনে মাজাহ এর ইকামাতুস সালাত অধ্যায়ে আবু মুসা আল আশআরী থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (স) বলেছেন নিশ্চয়ই আল্লাহ মধ্য শা’বানের রাতে সমস্ত সৃষ্টির দিকে বিশেষ নজর দেন ও মুশরিক (আল্লাহর সাথে শিরককারী) এবং মুশাহিন (হিংসুক) ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন। এই হাদিসের আলোকে আমার করণীয় এই যে, আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি দিনই হিংসা ও আল্লাহর সাথে শিরক করা থেকে বেঁচে থাকবো। তবে যদি এ রাতে আমি ঘুমিয়েও থাকি তবে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।

এ রাতে যেমনভাবে আমরা ইবাদত করার জন্য বিশেষভাবে উদগ্রিব হই আমাদের উচিত রাতের বরকতময় সময়ে ইবাদত করার জন্য উদগ্রিব হওয়া। কেননা প্রতিটি রাতেই একটি বিশেষ সময় আছে যখন আল্লাহ তায়ালা আমাদের ডেকে ডেকে বলতে থাকেন যে, কার কী দরকার সে যেন আমার কাছে চায়, আমি দেবো। কে আছো ক্ষমা চাইবার আমি মাফ করে দেবো। কে আছে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। আর তা হলো প্রতি রাতের এক-তৃতীয়াংশ এর শেষ অংশে যা ফজর পর্যন্ত চলতে থাকে। হাদিসটি সহিহ মুসলিমের মুসাফিরের সালাত অধ্যায়ে হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হয়েছে। সেই অর্থে প্রতিটি রাতই কিন্তু ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সুযোগ নিয়ে আসে একথা আমরা অকপটে বলতে পারি।এই রাতে নিজস্ব পরিসরে নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ও তাসবিহ তাহলিল করা যেতে পারে। এবং এ রাতে কোনো ইবাদত করলে তা নফল হিসেবেই গণ্য হবে। আর নফল সালাত বা ইবাদত ঘরেই করা বেশি ভালো। মাসজিদের জড়ো হয়ে এটাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিলে তা অবশ্যই বিদয়াত বলে গণ্য হবে যা একটি পাপ। তবে অবশ্যই কিছু সময় ঘুমাতে হবে যাতে করে ফজরের নামাজ জামায়াতে আদায় করতে পারি। যদি ঘুমের কারণে নামাজ বাদ পড়ে যায় তবে তা রাত্রের ইবাদতের অর্জনকে ম্লান করে।মূলত সবচেয়ে সেরা রাত হলো রমজান মাসের শেষের ১০দিন। এই রাতকে যেন আমরা সেই সমস্ত রাত থেকে বেশি মর্যাদাপূর্ণ রাত না ভাবি সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।এক কথায় দ্বীনের জ্ঞান রাখতে হবে অবশ্যই। তবেই আমাদের জ্ঞান আমাদের এই রাতে করণীয় সম্পর্কে আমাদের আমল করতে বেশি উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি বর্জনীয় বিষয়গুলোও আমাদের সামনে চলে আসবে।

বর্জনীয়:মসজিদের জড়ো হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দোয়া করা, ভিড় করা, এক কথায় আনুষ্ঠানিক সকল কাজ এ রাতে অবশ্যই বর্জন করা উচিত।লাইটিং করা, হালুয়া রুটি খাওয়া, আতশবাজি ফুটানো, বিশেষ রজনী হিসেবে দলে দলে আনন্দের সাথে উদযাপন অবশ্যই বর্জনীয়।শবে বরাতকে কবর জিয়ারতের জন্য বিশেষভাবে গ্রহণ করা।ইসলাম স্বীকৃত নয়, এমন প্রত্যেকটি কাজ সম্পর্কে সচেতন হওয়া ও তা বর্জন করা।শিরক থেকে নিজেকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা। পাশাপাশি হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিজেকে পুরোপুরি মুক্ত রাখা।ফজরের জামায়াতের সময় ঘুমানো।সারারাত জাগ্রত থাকা। সর্বপরি আমাদের সারা বছর শিরক ও হিংসা থেকে বেঁচে থেকে রাতে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করার অভ্যাস করাটাই হবে এই রাতের আসল উদ্দেশ্য ও অর্জন।