এ বছর মার্চ ও এপ্রিল দুই মাসে বজ্রপাতে সারাদেশে ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।এর মধ্যে এপ্রিলের শেষ তিন দিনেই ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সারাদেশ কালবৈশাখী ঝড় আর বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন মন্ত্রী।তিনি বলেন, গত মার্চ মাসে বজ্রপাতে মোট ১২ জনের মৃত্যুর খবর তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পেয়েছেন। আর এপ্রিলে এসেছে ৫৮ জনের মৃত্যুর খবর।সরকার পরিস্থিতি ‘গভীরভাবে’ পর্যবেক্ষণ করছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “আমরা সবাইকে দেখেশুনে ঘর থেকে বের হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রয়োজনে ১০৯০ নম্বরে ফোন করে আবহাওয়ার পরিস্থিতি জেনে নিতে সবার প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।গতবছর পাহাড় ধসে পার্বত্য এলাকায় ১৬৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর এবছর পূর্ব প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে বলে জানান মায়া। যেসব এলাকায় বোরো জমির ধান পেকে গেছে, তা দ্রুত ঘরে তোলার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেন তিনি।বিলুপ্ত সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সুজিত কুমার দেবশর্মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কালবৈশাখীর মৌসুমে বজ্রঝড় বেশি হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে গড়ে দুই থেকে তিনশ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।যখন কিউমুলোনিম্বাস মেঘ তৈরি হয়, তখনই বজ্রঝড় হয়ে থাকে। কিউমুলোনিম্বাস মেঘ হচ্ছে খাড়াভাবে সৃষ্টি হওয়া বিশাল আকৃতির পরিচালন মেঘ; যা থেকে শুধু বিদ্যুৎ চমকানো নয়, বজ্রপাত-ভারি বর্ষণ-শিলাবৃষ্টি-দমকান্ড ঝড়ো হাওয়া এমনকি টর্নেডোও সৃষ্টি হতে পারে।

সচেতনতা: বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ বা উচুঁ স্থানে না থাকাই ভালো।বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা বিপজ্জনক। একান্ত বের হতে হলে রাবারের জুতো ব্যবহার করা উচিত।বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি হাঁটু গেড়ে, কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়া উচিত।যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। টিনের চালা যথা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক তার বা ধাতব খুঁটি, মোবাইল ফোনের টাওয়ার থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ হবে।কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকেও দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে, ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ এড়িয়ে চলতে হবে। সম্ভব হলে গাড়ি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে।বাড়িতে থাকলে বজ্রপাতের সময় জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকা নিরাপদ হবে না।বজ্রপাতের সময় বাড়ির জানালা বন্ধ রাখা উচিত। ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকেও দূরে থাকা প্রয়োজন।মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টেলিভিশন, ফ্রিজসহ সকল বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সেগুলো বন্ধ রাখতে হবে।ধাতব হাতলের ছাতা ব্যবহার না করাই ভালো।বজ্রপাতের সময় ছাউনিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাওয়া নিরাপদ নয়। ওই সময় নদীতে থাকলে নৌকার ছাউনির নিচে থাকা উচিত।বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ না করাই নিরাপদ।বিপদ এড়াতে প্রতিটি ভবনে বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে।