সর্বনিম্ন মজুরি আঠারো হাজার টাকা এবং শ্রম বান্ধব আইন তৈরির দাবিকে সামনে রেখে উৎসবের আমেজে রাজধানীতে পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই, সোনার বাংলা গড়তে চাই’ এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান মে দিবস পালিত হয়েছে।

দিবসটি পালন উপলক্ষে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে।দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এম আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাগণ জানান, সেসব কর্মসূচীর মধ্যে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ছাড়াও ছিল উল্লেখযোগ্য নানা কর্মসূচী।

রাজপথে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আর সমাবেশে শ্রমজীবী মানুষের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ। এত বছর পরও তাদের অধিকার নিশ্চিত না হওয়ার আক্ষেপ শ্রমিকদের।আর সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্য উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছাতে হলে শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্কের পাশাপাশি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিনটিকে স্মরণ করতে কর্মজীবি নারী, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ,ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ, জাতীয় শ্রমিক জোটসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নারী-পুরুষসহ সকল খেটে খাওয়া মানুষ নেমে আসেন রাজপথে।জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশ সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা বলেন, শত বছররেরও বেশি সময় আগে শ্রম দিবসের সূচনার ফসল এখনকার অনেক শ্রমিকরাই পাচ্ছেন তবে এখনো কর্ম পরিবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ন্যুনতম মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের আজো লড়াই করে যেতে হচ্ছে।শ্রমিকদের জন্য শ্রম বান্ধব কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে কখনোই উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

আর নিজেদের অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিকদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়ার ওপর জোর দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।মালিক-শ্রমিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই একটি সুন্দর কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব বলে মনে করেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।শ্রমিকদের দাবি ও অধিকার আদায়ের দাবিতে আজ মুখরিত হয়ে উঠেছে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন মিছিল, র‌্যালি, মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করে।

ঢাকা মহানগরীর প্রাইভেট কার ও ট্যাক্সি ক্যাব ড্রাইভার্স ইউনিয়ন, জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়ন, দি সিটি ব্যাংক কর্মচারী পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী মটরচালক লীগ, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম, রেডিমেট গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ফেডারেশন, জাগো বাংলাদেশ শিশু কিশোর ফেডারেশন, বাংলাদেশ ট্রাস্ট গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, কারিতাস সেফ প্রকল্প, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ, গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক, ওয়্যারবী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন নিজ নিজ ব্যানারে দিবসটি উপলক্ষে সমাবেশ ও র‌্যালীর আয়োজন করে।
শ্রমিকের কর্মেই দেশ আজ উন্নত হচ্ছে বলে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশকে আরও সমৃদ্ধশালী করতে হলে শ্রমিকদের উন্নতির বিকল্প নেই।’দৈনিক কাজের সময় ৮ ঘণ্টা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ‘শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, অতিরিক্ত কাজের বিনিময়ে অতিরিক্ত পারিশ্রমিক প্রদান, আইনি সুরক্ষা দিয়ে জাতীয় নূন্যতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা ঘোষণা করতে হবে।

এদিকে রাজধানীর গুলিস্তানে জাতীয় শ্রমিক জোট আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা দাবির প্রতি সমর্থন করে বলেন, ‘আমরা কারখানা রক্ষা করতে চাই, শ্রমিকদেরও হাসি মুখে রাখতে চাই। এবারের মে দিবসের অঙ্গীকার হোক নূন্যতম মজুরি নিশ্চিত করার একটি স্থায়ী ব্যবস্থা হোক, সুস্থ শ্রমিক মালিক সম্পর্ক হোক, নিরাপত্তা হোক, মর্যাদা পাই, সম্মান হোক এবং শ্রমিকরা হাসি-খুশি থাক।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত ভালো শিল্পায়ন হয় না। তাই উৎপাদন বাড়াতে হলে শ্রমিকদের হাসিমুখে রাখতে হবে। উপযুক্ত সম্মানজনক মজুরি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে শ্রমিকরা হাসিখুশি থাকলে, মর্যাদাপূর্ণ মজুরি পেলে উৎপাদন বাড়বে, শিল্পাঞ্চল ভালো থাকবে, দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।তথ্যমন্ত্রী বলেন, উন্নতি করতে হলে শান্তি দরকার। আর সেই শান্তি নিশ্চিত করতে হলে দুর্নীতি, লুটপাট বন্ধ করতে হবে। তেমনি জঙ্গিবাদী তেতুল হুজুরদেরও বাংলাদেশের রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে। জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা নারী শ্রমিকের শত্র“, শ্রমিক সমাজের শত্র“, বাংলাদেশের শত্র“, গণতন্ত্রের শত্র“।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান মতিঝিলে আজ এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, দুর্ঘটনা রোধে শ্রমিক মালিক ও যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন হতে হবে। চালকের অবহেলা ও অদক্ষতায় যেন দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য চালকদের আরো বেশি সাবধানতার সাথে গাড়ি চালাতে হবে।
তিনি বলেন, গাড়িতে যাতে অদক্ষ চালক ও শ্রমিক কাজ করতে না পারে সেজন্য মালিকদের সতর্ক থাকতে হবে। জাল লাইসেন্স নিয়ে শ্রমিক ভাইয়েরা গাড়ি চালাবেন না। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলবেন না।বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন মহান মে দিবস উপলক্ষে এ শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করে। পরে একটি র‌্যালী বের হয়।

অপর এক র‌্যালিতে অংশ নিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে সব ধরণের শ্রমিকদেরকে সহযোগিতা দেয়া হবে।তিনি বলেন, সরকার শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করেছে। বর্তমানে ফাউন্ডেশন তহবিলে ৩শ’ কোটি টাকার মতো রয়েছে। রিকশাচালক হোক, কৃষি শ্রমিক হোক সব ধরণের শ্রমিকদের এই তহবিল থেকে সহযোগিতা দেয়া হবে। কর্মস্থলে কোনো শ্রমিক মারা গেলে তার পরিবারকে ২ লাখ টাকা দেয়া হবে। এছাড়া শ্রমিকদের সন্তান মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে তাদেরকে ৩ লাখ টাকা দেয়া হবে। নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

বরগুনা সংবাদদাতা জানান, বরগুনায় বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে মহান মে দিবস পালিত হয়েছে। জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের আয়োজনে সকালে টাউন হল মোড়ে মহান মে দিবসের কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন বরগুনা ১ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।

একই ধরণের নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে খুলনা, সিলেট, লালমনিরহাট, কুমিল্লা, জয়পুরহাট, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুড়া, গোপালগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, ফরিদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, সিরাজগঞ্জ, নোয়াখালি, মেহেরপুর, মাদারিপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মহান মে দিবস পালিত হয়েছে।ভোলা সংবাদদাতা জানান, মে দিবস উপলক্ষেজেলা শ্রমিক লীগের এক কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকালীন সরকার থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তাঁর অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর এদেশে আসবে না। কোন সহায়ক সরকারও আর আসবে না। তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান।