গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে এবারের নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। ভোট গ্রহণের দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে, ততোই বাড়ছে প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের ব্যস্ততা, বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। নির্বাচনী আমেজ ও উত্তাপ সিটি এলাকাসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার সরকারী ছুটির দিনেও ঝড় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে প্রার্থীরা ভোটারদের খোঁজে হন্যে হয়ে ছুটে গেছেন শহরের অলিগলিসহ বিভিন্ন মহল্লায়, বাজারে ও বাড়িতে। তারা ভোটারদের কাছে ভোট ও সমর্থন চেয়ে এদিনটি ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। প্রত্যন্ত এলাকায় কর্দমাক্ত পথে পায়ে হেঁটে আগের দিনের নির্বাচনী প্রচারণার কাজ শেষ করতে দেরী হওয়ায় এবং পরদিন ভোর থেকে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ শুরু করার সুবিধার্থে কর্মী সমর্থকদের কয়েক প্রার্থী রাত কাটিয়েছেন স্থানীয় কর্মী ও ভোটারদের বাড়িতে। যেন কোন প্রতিবন্ধকতাই তাদেরকে থামাতে পারছেনা। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এ নির্বাচনে মেয়র পদের সাতজন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আলোচনায় রয়েছেন দেশের প্রধান দুই জোট তথা আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র মনোনীত দুই মেয়র প্রার্থী। সবার দৃষ্টিই এখন এই দুই মেয়র প্রার্থীর দিকে। উভয় জোটের নেতা-কর্মীরা নিজেদের অস্তিত্বের লড়াই মনে করে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নানা কৌশলে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। পোষ্টার, মাইকিং, কেন্দ্রীয় নেতাসহ নেতা-কর্মীদের পদচারনায় ইতোমধ্যে জমে ওঠেছে গাজীপুর সিটির এবারের নির্বাচন। মে দিবস ও পবিত্র শবেবরাতের ছুটিকে কেন্দ্র করে ঝড় বৃষ্টির মাঝে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলররাও দিন রাত প্রচারনায় ব্যস্ত রয়েছেন। তারা এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাছে টানার চেষ্টা করছেন ভোটারদের। এসব নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগে স্থানীয় নেতা কর্মী ও সমর্থক ছাড়াও আশেপাশের জেলাগুলো হতে এসে অনেক নেতা-কর্মী অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রতীকসহ সকল প্রার্থীদের পোস্টারে পুরো নগরী ছেয়ে গেছে। তবে গত কয়েকদিনের ঝড় ও বৃষ্টিপাতের কারণে প্রার্থীদের বিপুল সংখ্যক পোস্টার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও ঝড় বৃষ্টির কারণে প্রার্থীদেও গণসংযোগ কার্যক্রমে ব্যহত হচ্ছে। এদিকে দেশে প্রথমবারের মতো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের নির্বাচনী এজেন্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন।

গণসংযোগ ॥
আওয়ামীলীগ ॥ এদিকে আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা প্রতীক) গাজীপুরকে ক্লিন এবং গ্রীন সিটি হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে মহানগরের আটটি অঞ্চলে শ্রমিকদের জন্য স্বল্প ভাড়ার আবাসিক কমপ্লেক্সসহ পরিকল্পিত স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মার্কেট এবং বিনোদন পার্ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বুধবার সকালে মহানগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাধবপুর থেকে দিনের গণসংযোগ কর্মসুচি শুরু করেন। এদিন তিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণা করেন। এসময় তিনি দক্ষিণ পানিশাইল, নুরুন নগর, মামুন নগর, চক্রবর্তি, ডালাস সিটি, লতিফপুর, হাতিমারা, সারদাগঞ্জ, স্কয়ার গেট, সুলতান মার্কেট, সুরাবাড়িতে অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এর আগের দিন মঙ্গলবার তিনি যোগীতলা নতুন বাজার, চান্দনা মধ্যপাড়া, সাধু কাচা বাজার, নলজানী, দক্ষিণ তেলিপাড়া, বাড়িয়ালী, টেকনগরপাড়া, তেলিপাড়া আশরাফিয়া মাদ্রাসার সামনে , বারবৈকা, দিঘিরচালা ও চান্দনা চৌরাস্তাসহ ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ ও পথসভা করেন। পরে রাতে তিনি স্থানীয় লোহাকৈর মাজারে দোয়া করেন। মঙ্গলবারের নির্বাচনী প্রচারণা শেষে তিনি কাশিমপুর এলাকায় রাত্রিযাপন করেন।

এ গণসংযোগে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল আলম (আসকর), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম মোকসেদ আলম, উপদেষ্টা আয়নাল হোসেন, কার্যকরী সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন, কাশিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মো. কলিমউদ্দিন, কালিয়াকৈর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রাসেল, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ফারুক হাসান তুহিন, আশুলিয়া থানা সাবেক যুবলীগ সভাপতি শাহাদৎ হোসেন খান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. আবুল কাশেম, এড সিরাজুল ইসলাম, এড. আতাউর রহমান, ১ নং ওয়ার্ড সভাপতি মো. খলিলুর রহমান সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

বিএনপি ॥
অপরদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বুধবার সকালে তার নিজ বাসায় বিভিন্ন পেশাজীবি ও আগত নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি গাজীপুরকে পরিকল্পিত ও মাদকমুক্ত নগর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিকেলে টঙ্গীর বিসিক, ফকির মার্কেট, ঝিনুমার্কেট, সালামের আটারকল, টিএন্ডটি, শিলমুন, গোপালপুর ও মরকুন প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করে ভোট প্রার্থনা করেন। আগের দিন মঙ্গলবার তিনি কাশিমপুর এলাকার সুরাবাড়ি রাইসমিল, সারদাগঞ্জ মনি ফ্যাশন, লতিফপুর প্রাইমারি স্কুল, হালিম মার্কেট, ফরচুন প্লাজা, জিরানি বাজার, বারেন্ডা, সাকের লেন এলাকায় গণ সংযোগ করেন।

এছাড়াও এদিনটিতে ২০ দলীয় জোট প্রার্থীর পক্ষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ওবাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা.এজেডএম জাহিদ হোসেন ৪২ নং ওয়ার্ডের পূবাইল করমতলা এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এলবার্ট পি কস্তা, ড্যাব কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম, ডা. মো. সফিউল্লাহ, ডা. আব্দুল কাদের,বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, গাজীপুর জেলার সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, পেশাজীবী নেতা ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশিদ স্থানীয় বিএনপি নেতা মনির, সাইফ, খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে ২০দলীয় জোটের অপর একটি টিম নগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকাসহ ১৪ নং ওয়ার্ডের জেকে মার্কেট, পলা মার্কেট, হক মার্কেট, হারুন মার্কেট মন্ডলপাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মিডিয়া সেলের প্রধান ডা. মাজহারুল আলম, পেশাজীবী নেতা সাংবাদিক এম আব্দুল্লাহ, ডিআরইউ সেক্রেটারী সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক রাশেদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এসময় শওকত মাহমুদ বলেছেন, ভোট বিপ্লবের জন্য জনগণ মুখিয়ে আছে। জনগণ ভোট দিতে চায়, ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়।সুষ্ঠু নির্বাচন হলে গাজীপুরে বিএনপি প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে বলে আমরা আশা করছি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুকসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি শহীদ সারোয়ার, খালেদ মাহবুব শ্যামল, রমিজ উদ্দিন রুমী, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ মোল্লা, ডা. মতিজুল কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নগরীর ২৯ নং ওয়ার্ডের তরতপাড়া দীঘির পাড়, ভোড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন। বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম মিয়া, জাকির হোসেন, জাভেদ চৌধুরী, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য ফারজানা আফরোজ পারুল নগরীর ২৩নং ওয়ার্ডের পোড়াবাড়ি এলাকায় প্রচার কাজ করেন। গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহবুবুল হক গোলাপের নেতৃত্বে নগরীর দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকায় প্রচারে অংশ নেন জেলা বিএনপি নেতা এড. মেহেদী হাসান এলিস, এমএইচ রহমান হাফিজ, এড. শফিকুল আলম মিলু, এড. পারভীন আক্তার, জিএস সোহেল রানা, ছাত্রনেতা ফারহাজ বিন ফয়েজ প্রবাল, মারজুক আল আমীন প্রমুখ।

এবারই প্রথম প্রার্থীর এজেন্টদের প্রশিক্ষণের আয়োজন

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবারই প্রথম প্রার্থীদের নির্বাচনী এজেন্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রতি মেয়র প্রার্থীদের চারজন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রতি কাউন্সিলর প্রার্থীদের দুজন এবং প্রতি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের একজন এজেন্টকে ওই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

নির্বাচনের রিটানিং অফিসার মো. রকিব উদ্দিন মন্ডল জানান, প্রার্থীদের অনেক এজেন্ট কেন্দ্রে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নয়। তাদের ওই সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ও সচেতন করতেই প্রতি প্রার্থীর মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। তারা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে অন্য এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেবেন। আগামি ৫মে জেলা শহরের জকি স্মৃতি হাইস্কুলে মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী এজেন্টদের নিয়ে এ ধরণের প্রশিক্ষনের আয়োজন এবারই প্রথম। এতে প্রার্থীদের ৪৫১জন মাস্টার ট্রেইনারকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।