একদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচনকালীন সরকারের নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি, যে দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল।আগে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা কখনই গ্রহণযোগ্য হবে না জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসা দরকার।এ বিষয়ে দলগুলোর সঙ্গে কথা না বলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একতরফাভাবে তফসিল ঘোষণা কোনও দলই মেনে নেবে না।

বুধবার (২ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে দলের প্রতিষ্ঠাতার কবরে ফুল দেন ফকরুল।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকার চাই। এই বিষয়টা রাজনৈতিকভাবে নিষ্পত্তি হওয়া দরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এর একটা সুষ্ঠু সমাধান দরকার, যেটা সরকার সবসময় উপেক্ষা করেছে।

তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ সমস্যা (নির্বাচনকালীন সরকার) সমাধানের আগে এ বিষয়ে কোনো কথা না বলে নির্বাচন কমিশন একতরফাভাবে তফসিল ঘোষণা করলে কোনো দলই তা মেনে নেবে না।এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদের নির্বাচন হতে হবে। সেই হিসাবে আগামী নির্বাচন হতে হবে ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে।নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট বর্জন করা বিএনপি এখনও সেই দাবিতে অনড়। অন্যদিকে অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, আগামী নির্বাচনও সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীনদের অধীনেই হবে। আর তাতে অংশ না নিলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে।সেদিকে ইংগিত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাদের (সরকার) লক্ষ্যই হচ্ছে একতরফাভাবে নির্বাচনে যাওয়া, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া।

বিএনপি মহাসচিবের ভাষায়, আওয়ামী লীগ ‘পুরোপুরি জনবিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছে বলেই খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছে।আজকে যদি বিএনপি নির্বাচন করে, বিরোধী দল নির্বাচন করে, তাহলে তাদের (আওয়ামী লীগ) ভরাডুবি হবে। সে কারণে আজকে তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য একরতফা একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে, সেই নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে তারা একটা নির্বাচন করতে চাইছে যেটা কখনোই দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।বর্তমান সরকারকে হটাতে আন্দোলনের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।আগামী নির্বাচনের জন্য ২৫টি আসনের সীমানা পরিবর্তন করে যে গেজেট নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেছে, তারও সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, আমরা বরাবরই বলে আসছি, সরকার যা নির্দেশ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন তাই করছে।একতরফাভাবে নির্বাচন করার যে নীলনকশা, সেদিকেই তারা যাচ্ছে।গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনের আসন্ন র্নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কিনা-সে বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতিকে একটি ভয়াবহ অন্ধকার গহ্বরে দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মে দিবসে শ্রমিক দলকে শোভাযাত্রা করার অনুমতি না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, দেশের প্রধান বিরোধী দলকে দূরে রেখে, খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন করার চেষ্টা করছে সরকার। কারণ আওয়ামী লীগ পুরোপুরি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের জনগণের কাছে যাওয়ার জায়গা নেই। তারা নিশ্চিত বিরোধী দল নির্বাচনে গেলে তাদের ভরাডুবি হবে সে জন্য একতরফা নির্বাচনের জন্যই এ কমিশন গঠন করেছে। যাতে তাদের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় আসতে পারে। কিন্তু এটি কখনও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না আমরা আগেই বলেছি।সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিরোধী দলের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করা, কোনও ডায়ালগ ওপেন না করা, দেশের মানুষের যে ওপেনিয়ন, সেটি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এ সরকার তাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থা পোক্ত করবার জন্য, অন্ধকার গহ্বরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, গাজীপুরের এসপি হারুনকে সরানোর জন্য আমরা চিঠি দিয়েছিলাম কিন্তু কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো আমাদের জোটের ৪৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এমনকি যিনি মেয়র পদে দাঁড়িয়েছিলেন তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব কারণে এ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এটি মনে করার কোনো কারণ আমি দেখছি না।বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লুাহ বুলু, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিমসহ শ্রমিক দলের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।