বেড়েই চলেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ।সদ্য বিদায়ী এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৩২ কোটি ৭১ লাখ ডলারেরও বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ কোটি ডলারেরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এতথ্য তুলে ধরা হয়েছে।প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবছরের এপ্রিলে দেশে ১৩২ কোটি ৭১ লাখ ডলারেরও বেশি রেমিটেন্স এসেছে। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১০৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার। গত মার্চ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১২৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার বেশি রেমিটেন্স এসেছে। আর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন এক হাজার ২০৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার।প্রসঙ্গত, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আগের বছরের (২০১৫-১৬) চেয়ে প্রায় ১৪.৪৮ শতাংশ কম রেমিটেন্স আসে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা মাত্র ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠান। রেমিটেন্স প্রবাহের মাস হিসেবে গত ছয় বছরের মধ্যে এটিই ছিল সর্বনিম্ন। শুধু সেপ্টেম্বরই নয়,বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এই রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে রেমিটেন্স বাড়াতে নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়।বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগের কারণে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় ফেরে। গত অক্টোবর মাসে ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে, যা গত সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে ৩০ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি।রেমিটেন্স বাড়ার পেছনে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ার ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ার কারণে একদিকে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন। অন্যদিকে পণ্য আমদানি বাড়ায় ডলারের সংকট কাটাতে ব্যাংকগুলো নিজেদের প্রয়োজনে রেমিটেন্স আনতে অতি বেশি উৎসাহী হচ্ছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী সাইদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী জুন (২০১৮) নাগাদ অর্থাৎ এই অর্থবছর শেষে রেমিটেন্স প্রবাহ একহাজার ৫০০ কোটি বা ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। হুন্ডি প্রতিরোধে অবৈধ মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বর্তমানে ডলারের দাম কিছুটা বেড়েছে, এর প্রভাবেও রেমিটেন্স বাড়ছে। ডলারের চাহিদা মেটাতে ব্যাংক তার নিজের স্বার্থেই ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের রেমিটেন্স আনার চেষ্টা করছে। সে কারণেও রেমিটেন্স বাড়ছে।এছাড়া, শ্রমশক্তি রফতানিও বেড়েছে। এরও একটা প্রভাব পড়বে পুরো ২০১৮ সাল জুড়ে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৩২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দু’টি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে এককোটি ৯ লাখ ডলার এসেছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এক কোটি ৪১ লাখ ডলার এসেছে। বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৬ কোটি ৬১ লাখ মার্কিন ডলার। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩ কোটি ৩ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ডলার এবং জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৯৯ ডলার এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, সদ্য বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা একহাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার সমপরিমাণ মূল্যের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা এর আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল একহাজার ৪৯২ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে ২১৬ কোটি ১৭ কোটি ডলার বা ১৪.৪৭ শতাংশ।বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রবাসীরা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পাঠিয়েছেন ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। দ্বিতীয় মাস আগস্টে পাঠান ১৪১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে পাঠিয়েছেন ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, অক্টোবরে পাঠিয়েছেন ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার ও নভেম্বর মাসে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো এই বৈদেশিক মুদ্রা।