বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল শহরে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৬ মে) কবি নজরুলের জন্মদিনে যাবেন তিনি।
ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত বিশেষ সমাবর্তন উৎসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেওয়া হবে ‘সাম্মানিক ডি-লিট’।এ ছাড়া এদিন আরও দুই ব্যক্তিত্বের হাতে তুলে দেওয়া হবে সাম্মানিক ডি-লিট। তাঁরা হলেন বলিউড তারকা শর্মিলা ঠাকুর ও ভারতের ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এস এম ইউসুফ।কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাধন চক্রবর্তী শনিবার দুপুরে জানান, ২৬ মে বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হবে এই সমাবর্তন উৎসব। প্রথম পর্বে থাকবে বিশেষ সমাবর্তন। এই অনুষ্ঠানেই শেখ হাসিনাসহ তিন গুণীর হাতে তুলে দেওয়া হবে সাম্মানিক ডি-লিট। এরপর মূল সমাবর্তন উৎসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ জন স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃতী ছাত্রছাত্রীকে বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এরপর ৪৫০ জন ছাত্রছাত্রীর হাতেও তুলে দেওয়া হবে ডিগ্রি সনদ।

আসানসোলের অদূরেই চুরুলিয়া গ্রামে নজরুল ইসলামের জন্মভিটে। তবে এবার শেখ হাসিনা চুরুলিয়ায় যাবেন কি না জানা যায়নি। ১৯ বছর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির আমলে নজরুল জন্মশতবর্ষ উৎসবে এসেছিলেন শেখ হাসিনা।উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ভারতীয় সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য শর্মিলা ঠাকুরকে এবং বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এস এম ইউসুফকে দেওয়া হচ্ছে এই সম্মান।এবার এটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় সমাবর্তন উৎসব। গত বছর বাংলা একাডেমির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এই উপাধি দেয়।২৫ মে শেখ হাসিনা বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে যাবেন। সেখানে তিনি বিশ্বভারতী চত্বরে নির্মিত বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করবেন। ২৫ কোটি রুপি ব্যয়ে এই ভবন নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সরকার।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক সবুজকলি সেন বলেন, ২৫ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিনিকেতনে আসছেন বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের জন্য। তবে তিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো চিঠি পাননি। আবার সেদিন শান্তিনিকেতনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসারও কোনো নিশ্চিত খবর নেই।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের আগে দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল শান্তিনিকেতনে আসবে।বাংলাদেশ ভবনের নির্মাণকাজের অগ্রগতি দেখতে গত ১৭-১৮ এপ্রিল শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি ১৮ এপ্রিল বিশ্বভারতীর উপাচার্যের সঙ্গে একটি বৈঠকও করেছিলেন। সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিল ঢাকা থেকে আগত বাংলাদেশের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বাংলাদেশ ভবনের নির্মাণকাজের অগ্রগতি সম্পর্কে বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে জানান। উপাচার্য বাংলাদেশের মন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, এই ভবন নির্মাণের কাজ মোটামুটি শেষ হয়েছে। এখন কাজ বাকি রয়েছে গ্রন্থাগার, সংগ্রহশালা ইত্যাদি সাজানোর। এটা অবশ্য করবে বাংলাদেশ সরকার।বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের জন্য বিশ্বভারতী দুই বিঘা জমি দিয়েছে। আর বাংলাদেশ সরকার এই ভবন নির্মাণের জন্য ২৫ কোটি রুপি দিয়েছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হয়। বাংলাদেশ ভবনে থাকছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত নানা ঐতিহাসিক তথ্য, গ্রন্থাগার, মিলনায়তন, বাংলাদেশ সম্পর্কে গবেষণার নানা তথ্য, চিত্রশালাসহ বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নানা স্মারক। থাকবে রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশ অবস্থানের নানা তথ্য, ইতিহাস, স্মারক ও চিত্রাবলি।