গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী তফশিল অনুযায়ী আগামী ১৫ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের কথা। এ নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণাও বেশ জমে উঠেছিল। রবিবার সকাল থেকে প্রার্থীরা কর্মী সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু সীমানা জটিলতা নিয়ে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ভোট গ্রহণের তারিখের মাত্র আটদিন আগে রবিবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের এ আদেশের প্রেক্ষিতে নির্বাচনী সকল প্রচার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। নির্বাচন স্থগিতের সংবাদ পেয়ে বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীরাসহ সকল প্রার্থীরা তাদের গণসংযোগ কার্যক্রম বন্ধ রেখে ফিরে আসে। এলাকায় এলাকায় মাইকিংও বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে উচ্চ আদালতের দেয়া আদেশে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন স্থগিতের খবর পেয়ে দুপুর হতে ১৪ দলীয় জোটের নেতা কর্মী ও সমর্থকরা আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের (নৌকা) ছয়দানা হাজীর পুকুর এলাকার বাসার সামনে এবং ২০ দলীয় জোটের নেতা কর্মী সমর্থকরা বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের (ধানের শীষ) টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকার বাসার সামনে জড়ো হতে থাকে। এসময় ধানের শীষের বিক্ষুব্ধ কর্মী সমর্থকরা হাসান উদ্দিন সরকারের বাসার সামনে বিক্ষোভ করে।

দুপুরের পর নগরীর টঙ্গীস্থ নিজ বাড়ীতে নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হঠাৎ করে উচ্চ আদালতের একটি রায় গাজীপুরবাসীকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। আমার জীবনের সর্বস্ব দিয়ে হলেও এ গাজীপুরবাসীর মনের কথা, জনগণ যাতে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তার জন্য আইনী লড়াই, মাঠের লড়াই, রাজনীতির লড়াই জনগণের পক্ষে এ লড়াই করে যাব। এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিকেলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গাজীপুর শহরস্থ বিএনপি’র জেলা কার্যালয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিতের ব্যাপারে মন্তব্য করে বলেন, এটা সরকারের ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্র করে এ নির্বাচন বেশি দিন স্থগিত রাখা যাবে না। আমরা আদালতে যাব। আইনী লড়াইয়েও আমরা বিজয়ী হব, জনগণের সমর্থনেও বিজয়ী হব। আমাদের নেতা-কর্মীদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে। ঐক্য ছাড়া আমাদের তো আর কোন পুঁজি নেই। আমাদের আবেগকে বেগে পরিনত করতে হবে।

তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, তারা মানুষের রায় ছিনিয়ে নিতে পারবে না। তাই মানুষকে নির্বাচন থেকে দুরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এটা নোংরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা, নজির স্থাপন করেছেন জাতির সামনে। আমরা ধিক্কার জানাই, নিন্দা জানাই, ঘৃণা জানাই। আমরা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করি। আইনী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এ নির্বাচন যাতে আবার অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য আমরা আদালতে লড়াই করব। সমস্ত অস্ত্র, সমস্ত গোলাবারুদ, সমস্ত অত্যাচার, নীল নকশা, নির্যাতনের সমস্ত হাতিয়ার সরকার কুক্ষিগত করেছে । সেই হাতিয়ার প্রতিরোধ করার উপায় হচ্ছে নেতা-কর্মীদের সুদৃঢ় ঐক্য, ইস্পাত কঠিণ ঐক্য। সেই ঐক্যকে ধারণ করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। নির্বাচনের তারিখ পুনরায় ঘোষনা না করা পর্যন্ত আমরা নিন্দা, প্রতিবাদ আমরা অব্যাহত রাখব।

এসময় বিএনপির সহ-সাংগঠণিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সাবেক এমপি কে এম সেলিম রেজা হাবিব, কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহবুবুল হক গোলাপ, পৌর বিএনপির সভাপতি মীর হালিমুজ্জামান ননী, জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান এলিচ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে ১৪ দলীয় জোটের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) নির্বাচন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, জনগণ ভোট চায়। আমরা নির্বাচনমূখী। আমরা আইনের সহযোগীতা নিয়েই নির্বাচন করবো।

এর আগে নির্বাচন স্থগিতাদেশের খবর পেয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ কার্যক্রম বন্ধ করে গাজীপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। তিনি সকালে বাসন সড়ক এলাকায় ম্যাট্রিক্স কারখানায় বিজিএমইএ, এফবিসিসিআই ও বিকেএমইএ এর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, গাজীপুর ও নুরুল ইসলাম, টঙ্গী