জনপ্রিয় আওয়ামীলীগ নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনসহ আওয়ামীলীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন সংগঠন গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় দিনব্যাপী নানা কর্মসুচি পালন করেছে।

শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সোমবার সকালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পূবাইল হায়দরাবাদ গ্রামে শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের কবরে পু®পার্ঘ্য অর্পণ, কোরান খানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও খাদ্য বিতরণের আয়োজন করা হয়। সকালে শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের কবরে পু®পার্ঘ্য অর্পণ করেন প্রয়াত নেতার ছেলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, আব্দুল হাদী শামীমসহ আওয়ামীলীগের ও বিভিন্ন সংগঠণের নেতা কর্মীরা। এসময় সেখানে এক স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।

সভায় প্রয়াত নেতার ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল এমপি বলেন, বাবার হত্যা মামলায় উচ্চ আদালতের রায়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। তাই সুবিচার পেতে আবার সুপ্্রীম কোর্টে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হয়। তিনি বলেন, আমরা আশা করি সেখানে ন্যায় বিচার পাব। এমপি পুত্র সুপ্রীম কোর্টের অ্যাপীলেড ডিভিশনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন যেন দ্রুত শুনানি শেষ করে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা হয়। তিনি সরকারের প্রতি বিদেশে পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে শাস্তির মুখোমুখি করে সর্বেŸাচ্য শাস্তি কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।

স্মরণসভায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি মোঃ আখতারুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো. গিয়াস উদ্দিন, জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর,গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন সবুজ, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. আজমত উল্লাহ খান, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ওয়াজ উদ্দিন, সহসভাপতি আমানত হোসেন খান সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছোট ভাই মোঃ মতিউর রহমান মতি, টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ ফজলুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ রজব আলী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। এর আগে অতিথিবৃন্দ ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কালো ব্যাজ ধারণ ও আহসান উল্লাহর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। স্মরণসভার পর নিহতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।

এদিকে একইদিন দুপুরে প্রয়াত আহসান উল্লাহ মাস্টারের স্মরণে টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রয়াত সাংসদ আহসান উল্ল¬াহ মাস্টারের ছোট ভাই মামলার বাদী মতিউর রহমান জানান, গাজীপুরের জনপ্রিয় নেতা সংসদ সদস্য আহসান উল্ল¬াহ মাস্টার ২০০৪ সালে ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলন চলাকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। এসময় গুলিতে ওমর ফারুক রতন নামের আরও একজন কিশোর মারা যান। ঘটনার পরদিন নিহতের ছোট ভাই মো. মতিউর রহমান বাদী হয়ে ১৭জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০-১২জনের বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে ওই বছরের ১০ জুলাই ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই বছরের ২৮ অক্টোবর ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ৩৪ এবং আসামিপক্ষে দুজন সাক্ষ্য দেন। এ মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে প্রধান আসামী বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ আসামিকে মৃত্যুদন্ড, ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং দুইজনকে খালাস দেয়া হয়। পরবর্তীতে কয়েক আসামী তাদের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করেন। শুনানী শেষে সর্বশেষ ২০১৬ সালের জুন মাসে উচ্চ আদালতের রায়ে ছয়জনের মৃত্যুদন্ড, ৮জনের যাবজ্জীবন দন্ডাদেশ দেন। রায়ে দ্রুত বিচার আদালতে মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছিল এমন ১১জন আসামিকে খালাস দেয়া হয়। দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকার, মাহবুবুর রহমান ও সোহাগ এবং যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত মোহাম্মদ আলী ও নুরুল আমিনসহ ৮জন বিভিন্ন কারাগারে বন্দী রয়েছে। বাকি দন্ডপ্রাপ্তরা ভারত, ইতালি, বেলজিয়া, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে।

উল্লেখ্য, আহসান উল্লাহ মাষ্টার গাজীপুর-২ (গাজীপুর সদর-টঙ্গী) আসন হতে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে দু’বার সংসদ সদস্য, ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ সালে দ’ুদফা পূবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯২ সালে উপজেলা পরিষদ বিলোপের পর চেয়ারম্যান সমিতির আহবায়ক হিসেবে উপজেলা পরিষদের পক্ষে মামলা করেন ও দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলেন। এক পর্যাযে তিনি গ্রেফতার হন ও কারাভোগ করেন। আহসান উল্লাহ মাষ্টার শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ও সাধারণ সস্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য, শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।