গাজীপুরে তিন সেমিস্টার একাডেমিক পদ্ধতি বাতিল করে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালুসহ তের দফা দাবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের (বশেমুরকৃবি) বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ করেছে। রাতে তারা হামলা চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ট্রেজারের অফিস কক্ষ ও গাড়িসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। এঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্ততঃ ২৫/৩০ জনকে আটক করেছে।

বশেমুরকৃবি’র প্রক্টর ড. মোঃ আরিফুর রহমান খান ও শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে বহিরাগতদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সালনাস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় তারা তিন সেমিস্টার একাডেমিক পদ্ধতি বাতিল করে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করণ, অত্র বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএস ডিগ্রী প্রাপ্ত (সিজিপিএ ২.৫০-৪.০০) সকল শিক্ষার্থীকে এমএস কোর্সে ভর্তির সুযোগ এবং আবাসন সংকট সমাধানসহ তের দফা দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন ক্লাশে গিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের বাইরে আনার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আন্দোলনরতরা প্রধান গেইটে অবস্থান নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের সড়ক অবরোধ করে শ্লোগান দিতে থাকে। এসময় তারা দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে অনশন ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেয়। সন্ধ্যায় খবর পেয়ে জয়দেবপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে আন্দোলনরত কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে হামলা চালায়। তারা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় উপাচার্যের অফিস কক্ষে প্রবেশের জন্য কলাপসিবল গেইট ভাঙ্গার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ট্রেজারের গাড়িসহ অফিস কক্ষের দরজা জানালা এবং বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর করতে থাকে। ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. গিয়াস উদ্দিন মিয়া ও ট্রেজারার প্রফেসর তোফায়েল আহমেদ তাদের অফিস কক্ষে ছিলেন। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এসএম ফজলে রাব্বি বাধন ও সাধারণ সম্পাদক শাওনসহ অন্ততঃ ২৫ জনকে আটক করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আটককৃতদের মধ্যে বাধনসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগতও রয়েছে।

বশেমুরকৃবি’র প্রক্টর আরো জানান, এসএম ফজলে রাব্বি বাধন বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়। সে কয়েক বছর আগে এ বিশ্ববিদ্যালয় হতে অনার্স শ্রেণী হতে উত্তীর্ণ হয়। গুটি কয়েকজন ছাড়া আন্দোলনরতদের অধিকাংশই বহিরাগত। সেমিস্টার সিস্টেমটা পরিবর্তন করাটা এ মুহুর্তে সম্ভব না হলেও আন্দোলনরতদের দাবীসমূহের অধিকাংশই পর্যায়ক্রমে সমাধানের পথে। এখানে কোন আবাসন সংকট নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৪০০ শিক্ষার্থীর সবারই আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।

জয়দেবপুর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, বশেমুরকৃবি’তে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে বাধন ও শাওনসহ ২৫ থেকে ৩০জনকে আটক করা হয়েছে।

এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর তোফায়েল আহমেদ জানান, আইন ও সংবিধান অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অব্যহত রাখতে বশেমুরকৃবি কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর।