কোটা বাতিলে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার ২৭ দিন পার হলেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। কোটা বাতিলসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে কাল বুধবার দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোয় একযোগে মানববন্ধন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে এ ঘোষণা দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কাল বেলা ১১টায় সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোয় একযোগে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করা হবে।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান ও ফারুক হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রজ্ঞাপন জারি নিয়ে কোনো টালবাহানা ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১৭ ফেব্র“য়ারি থেকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। গত ৮ এপ্রিল শাহবাগে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বিনা উসকানিতে পুলিশ রাতভর কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও ছররা গুলি ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে। এর প্রতিবাদে ৯ এপ্রিল সারা বাংলার ছাত্রসমাজ ফুঁসে ওঠে। এই অবস্থায় সরকারের পক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ১৮ সদস্যের একটি দল সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করে। সেখানে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, ৭ মের মধ্যে কোটাপদ্ধতির সংস্কার করা হবে। অথচ এখনো তার বাস্তব কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তাই কোটা সংস্কারের দাবিতে কাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে শেষে আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিতে থাকেন।সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পর ২৭ দিন হয়ে গেলেও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। বিষয়টি ছাত্রদের ক্ষুদ্ধ করেছে, হতাশ করেছে।অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করে ছাত্রদের মধ্যে যে শঙ্কা তা দূর করতে হবে। প্রজ্ঞাপনের জন্য ছাত্রদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ বিভিন্ন কোটায় সংরক্ষণের যে নিয়ম রয়েছে তা সংস্কার করে কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে এপ্রিলের শুরুতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে আসছিল শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে তাদের বিক্ষোভ ও অবরোধের মতো কর্মসূচিও ছিল সেখানে।তাদের ওই আন্দোলনের সমালোচনা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের কোটা পদ্ধতি একেবারেই তুলে দেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে তিনি বলেন, বারবার এই আন্দোলন ঝামেলা মেটাবার জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল; পরিষ্কার কথা; আমি এটাই মনে করি, সেটা হল বাতিল।বর্তমানে সরকারি চাকরির ৩০ শতাংশ পদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলা কোটায় ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর দাবি ছিল, কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। আর কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করতে হবে।২ মে গণভবনে সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে কোটা প্রসঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, তারা কোটা চায় না, তাদের দাবি মেনে নিয়েছি। এখন আর আলোচনার কী আছে? তারা কোটা চায় না, এতে ক্ষুব্ধ হওয়ার কী আছে? এই আন্দোলন, এই সংগ্রাম মেনে নিয়েছি। সব কোটা বন্ধ।মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুইবার ঘোষণা করেছে, কোটা থাকবে না। কিন্তু প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও প্রজ্ঞাপন এখনো জারি করা হয়নি।বাংলার ছাত্র সমাজের সাথে নাটক করা হচ্ছে, তাদের সাথে প্রহসন করা হচ্ছে।২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠকে ‘প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর’ প্রজ্ঞাপন জারির আশ্বাস দেওয়া হলেও সেটার কোনো ‘লক্ষণ নেই’ অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।মামলা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে যুগ্ম আহবায়ক নূর বলেন, আমাদের আন্দোলনে যারা নেতৃত্বে আছে, তাদের আত্মীয়দের তথ্য নেওয়া হচ্ছে। ফলে আমরা বুঝতে পারছি, আমাদের ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন উপস্থিত থাকলেও বক্তব্য দেননি।