রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলায় দুজনের মৃত্যুদন্ড ও তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শিরীন কবিতা আখতার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বগুড়ার শিবগঞ্জের মাসকাওয়াত হাসান ওরফে আবদুল্লাহ ওরফে সাকিব ও শরিফুল ইসলাম। শরিফুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন নীলফামারীর মিয়াপাড়ার রহমত উল্লাহ, রাজশাহী নগরের নারিকেলবাড়িয়া এলাকার আবদুস সাত্তার ও তাঁর ছেলে রিপন আলী। তাদের মধ্যে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী’ শরিফুল ইসলাম এখনও পলাতক। বাকি চারজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান এ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু।২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগরের শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করা হয় রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে।তার ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ পরে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ইংরেজির শিক্ষক কোমলগান্ধার নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। সুন্দরম নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। দক্ষ সেতার বাদক রেজাউল শালবাগানে একটি গানের স্কুল খোলার জন্যও কাজ করছিলেন।ব্লগার, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট এবং মুক্তমনা লেখক, প্রকাশক শিক্ষকদের ওপর একের পর এক হামলা, হত্যার মধ্যে রেজাউল হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। তদন্তে নেমে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংঘবদ্ধ জঙ্গিরাই অধ্যাপক রেজাউলকে হত্যা করেছে।আলোচিত এ হত্যাকান্ডের তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সেখানে আসামি হিসেবে জেএমবির আট জঙ্গির নাম উল্লেখ করা হয়।

ওই আটজনের মধ্যে খায়রুল ইসলাম বাঁধন, নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান ও তারেক হাসান ওরফে নিলু ওরফে ওসমান অভিযোগপত্র দেওয়ার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।এদের মধ্যে ওসমান শিক্ষক রেজাউল করিম হত্যায় সরাসরি অংশ নেন এবং নিজের হাতে কুপিয়ে হত্যা করেন বলে সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে বাকি পাঁচ আসামির বিচার শুরুর পর ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৩২ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জনের সাক্ষ্য শোনে আদালত। গত ১১ এপ্রিল দুইপক্ষের আইনজীবীর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক মামলাটি রায়ের জন্য রাখেন।