সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ, শুরু হয়ে গেছে সময় গণনাও। অপেক্ষা উৎক্ষেপণের। বিশ্বের ৫৭ তম দেশ হিসেবে মহাশূন্যে বাংলাদেশর নাম লেখাতে বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। শেষ মুহূর্তে প্রযুক্তিগত কোন সমস্যা দেখা না দিলে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ২ টা ১২ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্সের ফ্যলকন- ৯ রকেটে করে মহাকাশে যাবে বাংলাদেশের নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১। উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে স্যাটেলাইটটির কক্ষপথে পৌছাতে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার পথ।

বুধবার ফ্লোরিডার একটি হোটেলে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বিষয়ে কথা বলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেন, মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইটে সাধারণত কোনো কিছুই লেখা থাকে না বা লেখার নিয়ম নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে আরেকটি ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গায়ে লেখা থাকছে- ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’।

কয়েক মাস আগে সরেজমিন স্যাটেলাইট কার্যক্রমের অগ্রগতি দেখতে ফ্লোরিডা যান তারানা হালিম। তখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থালাস অ্যালেনিয়া জানায়, সাধারণত স্যাটেলাইটের কোথাও কিছু লেখা যায় না বা লেখার কোনো নিয়মও নেই। কিন্তু ৫৭তম স্যাটেলাইট প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে তারা স্মৃতি হিসেবে কিছু লেখার সুযোগ দিতে চান।

তখন তারানা হালিম প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ অমোচনীয় কালিতে নিজ হাতেই স্যাটেলাইটের গায়ে লিখে দেন- ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। স্যাটেলাইটের পুরো মেয়াদকাল ১৫ বছরেও মুছবে না এ লেখা।

বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি অত্যন্ত জটিল একটি প্রযুক্তি। যেকোনো সময়ে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। অতীতে দেখা গেছে, লাস্ট কাউন্টডাউনের সময়েও উৎক্ষেপণ থেমে গেছে। গাজীপুরে আমাদের মূল গ্রাউন্ড স্টেশনে কাজ করার জন্য ফ্রান্স থেকে ৩০ জন দক্ষ প্রকৌশলীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। এই প্রকল্প সম্পন্ন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বয়সসীমা ১৫ বছর ধরা হলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন ৬ থেকে ৭ বছরের মধ্যেই উঠে আসবে পুরো বিনিয়োগের টাকা।

বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমরা ছয় থেকে সাত বছরের মধ্যে লাভজনক অবস্থানে চলে আসতে পারব। এটির ডিটিএইচ, ভিডিও ডিস্ট্রিবিউশন, ভিসেট নেটওয়ার্ক এবং ট্রান্স কমিউনিকেশন আছে। বিপণনের জন্য এরই মধ্যে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন। ৩ দশমিক ৭ টন ওজনের এই স্যাটেলাইটটি নিজস্ব কক্ষপথে পৌঁছানোর পরেই এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পাবে গাজীপুরে নির্মিত স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন। এছাড়া ব্যাকআপ গ্রাউন্ড স্টেশন হিসেবে থাকবে রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ার ভূ-উপগ্রহ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।