ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিরোধিতা এমনকি অনুরোধ সত্ত্বেও ইসরায়েলে তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে দূতাবাস সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর হচ্ছে সোমবার। নতুন ঠিকানায় দূতাবাস উদ্বোধন করতে এরই মধ্যে ইসরায়েল পৌঁছেছেন হোয়াইট হাউজের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ইভানকা ট্রাম্প ও জ্যারেড কুশনার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তারা। এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী ও সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশ হিসেবে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকীর দিনই ঘটতে যাচ্ছে এই স্থানান্তর।

দূতাবাস স্থানান্তর অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সরাসরি যোগ না দিলেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেবেন বলে আশা করছে ইসরায়েল। মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরকে ‘উদযাপনের বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে একে ‘শতাব্দীর চপোটাঘাত’ বলেছেন ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।গত ৭ ডিসেম্বর নিজ দেশসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে সমালোচনার মুখেও তেল আবিবের বদলে জেরুজালেম শহরকে একপক্ষীয়ভাবে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার পর ২১ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিশাল ভোটের ব্যবধানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে।

সাধারণ পরিষদে জেরুজালেমকে রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা বাতিল করার প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১২৮টি রাষ্ট্র, ভোটদান থেকে বিরত থাকে ৩৫টি রাষ্ট্র, আর বিপক্ষে ভোট দেয় মাত্র ৯টি রাষ্ট্র। গুয়াতেমালা ছিল ঐ ৯টি রাষ্ট্রের একটি। এর আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও একইরকম একটি প্রস্তাবের পক্ষে ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪টি রাষ্ট্র ভোট দেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।

এরপর গত জানুয়ারিতে ইসরায়েল সফরে গিয়ে ইসরায়েলি পার্লামেন্টে এক ভাষণে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স জানান, দূতাবাস জেরুজালেমে সরানোর বিষয়ে আগের সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাইবেলের সূত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী। আর এ কারণেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পররাষ্ট্র বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করা হয়। তখনই পেন্স প্রতিশ্রুতি দেন, আগামী বছর শেষ হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমে দূতাবাস খুলবে।

ইসরায়েল সমগ্র জেরুজালেমকে নিজেদের অধিকারভুক্ত বলে দাবি করে। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের এ দাবি স্বীকার করে না। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেম, যেখানে আল-আকসা মসজিদসহ বৃহত্তম হারাম শরিফ অবস্থিত। ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের পর থেকে তা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে।