এবার রোজার মাসে রাজধানীতে দেশি গরুর প্রতি কেজি মাংসের সর্বোচ্চ দাম ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে সোমবার দক্ষিণ সিটির মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এই দর নির্ধারণ করা হয়।এই দাম গতবছর রোজায় বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ২৫ টাকা কম। গত বছর প্রতি কেজি গরুর মাংসের জন্য ৪৭৫ টাকা দাম ঠিক করে দিয়েছিল নগর কর্তৃপক্ষ।

মেয়র জানান, এবার ভারতীয় গরুর মাংস প্রতি কেজি ৪২০ টাকা, মহিষের মাংস ৪২০ টাকা, খাসির মাংস ৭২০ টাকা এবং ভেড়া ও ছাগলের মাংস ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।এই দাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বাজারগুলো ছাড়াও সুপারশপগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে।উত্তর সিটি করপোরেশন এই দর মেনে চলবে কি না-এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, সাধারণত আমরা যে দর নির্ধারণ করি তারাও সেটাই করে। গত বছরও দুই সিটি করপোরেশনের মাংসের দাম একই ছিল।এই দাম না মানলে মাংস বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন মেয়র খোকন।তিনি বলেন, এবার মাংসের দাম গতবারের চেয়ে একটু কম। আজকে এই নির্ধারিত দরই সর্বোচ্চ দর হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু বিভিন্ন সময় অভিযোগ আসে যে নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে মাংস বিক্রি করেন অনেকে। সিটি করপোরেশনের মূল্য তালিকা মানেন না। এবার কেউ বেশি রাখলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।গত বছর প্রতি কেজি দেশি গরুর মাংসের দাম ঠিক হয়েছিল ৪৭৫ টাকা। এ ছাড়া ভারতীয় গরুর মাংস প্রতি কেজি ৪৪০ টাকা, মহিষের মাংস ৪৪০ টাকা, খাসির মাংস ৭২৫ টাকা এবং ভেড়া ও ছাগলের মাংস ৬২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৬ সালের রোজায় গরুর মাংস ৪২০, মহিষ ৪০০, খাসি ৫৭০, ভেড়া ও ছাগলের মাংস ৪৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।প্রতি বছর রোজায় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠলেও এবার বাজার সহনীয় থাকবে বলে আশা করছেন মেয়র।তিনি বলেন, আমরা বলতে পারি- পণ্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। অধিকাংশ পণের দাম স্থিতিশীল আছে। আশা করি এমনটা পুরো রোজা জুড়ে থাকবে।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মেয়র বলেন একটি মাস আমরা মুনাফা কম করলাম। এটা করলে হয়ত আল্লাহ আরও উন্নতি দিতে পারে আমাদের ব্যবসায়। একটি মাস মাংসের মূল্য এবং গুণগত মান নিশ্চিত করি। ওজন যেন ঠিক দিই। সাধারণ ক্রেতা যেন না ঠকে। এ ব্যাপারে আমাদের ধর্মেও কঠোর অনুশাসন আছে। এ তিনটি জিনিস আমরা নিশ্চিত করি।ঢাকা মহানগর মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রবিউল আলম সভায় দাবি করেন, ব্যবসায়ীরা ওজনে মাংস কখনও কম দেন না। সিটি করপোরেশন যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে তা মেনে চলারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।রমজানে রাজধানীর মাংসের বাজার স্থিতিশীল থাকবে। আমরা যে কোনো মূল্যে এটা মেনে চলার ব্যবস্থা করব। তবে কোনো আধুনিক জবাইখানা নাই বলে মাংসের মান নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতায় গাবতলী পশুরহাটে মাংস ব্যবসায়ীরা ‘নির্যাতনের শিকার’ হচ্ছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, এর পেছনে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা জড়িত।একটি গরুর হাটের জন্য আমরা বেইজ্জতি হচ্ছি। ইজারাদারের সন্ত্রাসীরা মাংস ব্যবসায়ীদের বেঁধে রাখে। রাতের আঁধারে তাদের কাছে টাকা আদায় করে। আর ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা লুটের টাকার অংশ নিচ্ছে, কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে।দক্ষিণের মেয়রের উদ্দেশে রবিউল আলম বলেন, গাবতলীর সন্ত্রাসীদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আপনি উত্তরের মেয়রকে একটা ফোন করুন। আমাদের অন্য কোনো দাবি নাই। সরকার যে রেট নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা সেই রেটে টাকা জমা দিতে চাই। এটা করলে তিনশ টাকা কেজি মাংস বিক্রি করা সম্ভব।মাংস ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় একটি স্থায়ী গরুর হাট করার দাবি জানালে মেয়র সাঈদ খোকন তা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।কামরাঙ্গীরচরে একটি পশুর হাট করে দেওয়া হবে। একটা প্রস্তাব দেওয়া আছে। এটা আমার কাছে গেলে আমি অনুমোদন দিয়ে দেব।রমজানে জবাইখানায় সিটি করপোরেশনের বিধি অনুযায়ী স্বাস্থ্যসম্মত এবং হালাল উপায়ে পশু জবাই নিশ্চিত করা এবং পচা বাসি মাংস বিক্রি না করতে ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেন মেয়র।তিনি বলেন, ডিজিটাল মেশিনে ওজন করা, মাংসের বর্জ্য অপসারণসহ দোকানের আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মাংসের মূল্য তালিকা প্রদর্শন করার নিয়মও মানতে হবে।সভায় ব্যবসায়ীরা গরুর মাংস ৫০০ টাকা, বিদেশি গরু এবং মহিষের মাংস ৪৮০, খাসির মাংস টাকা ৭৫০ টাকা ছাগী ও ভেড়ার মাংস ৬৮০ টাকা রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

এ সময় ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এবং কয়েকজন সংবাদকর্মী মেয়রকে জানান, বর্তমান বাজারদর আরও কম।পরে সিটি করপোরেশন রোজার জন্য দর ঠিক করে দেয়।সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শেখ সালাহউদ্দিন। করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার, গোলাম মর্তুজা মন্টু, শেখ আবদুল বারেকসহ মহানগর এলাকার মাংস ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা এ সভায় অংশ নেন।