প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া কোটা বাতিলের ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনসহ ধর্মঘট পালন করছেন আন্দোলনকারীরা। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে মিছিল করে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নিয়েছেন। প্রজ্ঞাপন জরি না হওয়া পর্যন্ত তারা এখানে অবস্থান করেন। এদিকে আন্দোলকারীদের অবস্থানের কারণে শাহবাগ ও এর আশেপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে সোমবার (১৪ মে) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে হাজারো আন্দোলনকারী এসে জড়ো হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিতে থাকেন। ঢাবি ক্যাম্পাসে কয়েকবার মিছিল নিয়ে প্রদক্ষিণ করার পর তারা বেলা পৌনে ১২ টার দিকে অবস্থান নেন শাহবাগ মোড়ে। এতে অংশ নিয়েছেন কয়েকহাজার শিক্ষার্থী। শাহবাগ মোড়ে চার দিক থেকে আসা যানবাহনগুলো আটকা পড়ে। পল্টন থেকে শাহবাগে নতুন করে কোনও যানবাহন আসছে না। তবে জরুরি সেবার অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও ফার্মগেট রুটের যানবাহন মিন্টোরোড দিয়ে বাংলা মোটর হয়ে যাতায়াত করছে। শাহবাগকে ঘিরে আশপাশের এলাকায় প্রচুর যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেওয়ার পরও প্রজ্ঞাপন জারি করতে কালক্ষেপণ করে মন্ত্রণালয় ছাত্রসমাজকে উসকে দিচ্ছে। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। স্লোগানে শিক্ষার্থীরা বলন, আর নয় কালক্ষেপণ, দ্রুত চাই প্রজ্ঞাপন। বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন বলে জানা যায়। এছাড়া, ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ধর্মঘট চলে।জানতে চাইলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আসিফুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী এটি বাতিল ঘোষণা করলেও, তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়নি। আমরা এজন্য বরাবার সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক ড.একেএম গোলাম রব্বানি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়েরে সবকিছু স্বাভাবিক আছে। আজ (সোমবার, ১৪ মে) থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা, তা যথা সময়ে শুরু হবে।

সোমবার বেলা ১১টা থেকে শতাধিক আন্দোলনকারী শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে নিজেদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন।শাহবাগ মোড় আটকে থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, এলিফেন্ট রোড, মৎস ভবন, বাংলামোটর এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়।মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে; প্রেসক্লাব থেকে হাই কোর্ট হয়ে আসা যানবাহনকে মৎস্য ভবন মোড় থেকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। মালিবাগ ও কাকরাইল মোড়ে সৃষ্টি হয় যানজট।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগ হয়ে আসা যানবাহনকে শাহবাগ থানার সামনে আটকে দেওয়া হয়েছে। গাড়িগুলো নীলক্ষেত মোড়, কাঁটাবন ঘুরে আসার চেষ্টা করার কারণে নীলক্ষেত মোড়েও যানজট তৈরি হয়েছে।মিরপুর, গাবতলী এবং উত্তরামুখী যানবাহনের চাপ বেড়েছে রমনা পার্কের পাশের সড়কে। কাকরাইল, হেয়ার রোড এবং রূপসী বাংলা হোটেলের সামনে যানজট লাগে।

শাহবাগের দিক থেকে যানবাহন কম আসায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বাংলামোটর, কারওয়ানবাজার ও ফার্মগেইটে অপেক্ষায় থাকা মানুষের ভিড় দেখা গেছে। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন মিরপুরের যাত্রীরা।বিকাল ৪টার দিকে ফার্মগেইটে মিরপুরের বাসের অপেক্ষায় থাকা কায়সার আহমেদ বলেন, প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে বাসের অপেক্ষায় আছেন তিনি। ওইদিক থেকে গাড়ি আসছে না। মাঝে মাঝে একটা গাড়ি আসলে তাতে ওঠার জন্য ধাক্কাধাক্কি লেগে যাচ্ছে।শাহবাগমুখী কিছু বাস সার্ক ফোয়ারার সামনে থেকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, “আমরা ধৈর্য্য ধরে আছি। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে কলা ভবন, মল চত্বর, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, প্রশাসনিক ভবন, আইইআর, আইন অনুষদ, কার্জন হল ঘুরে প্রদক্ষিণ করেন তারা। পূর্বঘোষিত ধর্মঘটের কর্মসূচি পালনের অংশ হিসেবে তারা কলাভবনের গেইটে তালা লাগায়।

আন্দোলনকারীদের মঞ্চ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা দিয়েছেন- কোটা বাতিল। আমরা মেনে নিয়েছি। ওই ষোঘণার পর তেত্রিশ দিন পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। এই ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজের আশঙ্কা- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন হবে কী না।৭ মে এর মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডেডলাইন পার হয়ে যাওয়ার পরও আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেননি। তাই সকাল থেকে সারা দেশে আমরা ধর্মঘট ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি। এবং কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগে অংশ নিয়েছি।প্রজ্ঞাপণ জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলকারীরা রাজপথ ছাড়বে না বলে ঘোষণা দেন তিনি।ধর্মঘটের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল এবং সাইকোলজি বিভাগের মিডটার্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে।বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবি তুলেছিল। কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণের দাবিও জানিয়েছিল তারা। কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দৃশ্যত ক্ষুব্ধ শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বলেন, বারবার এই আন্দোলন ঝামেলা মিটাবার জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল; পরিষ্কার কথা; আমি এটাই মনে করি, সেটা হল বাতিল। কোটা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করার কথাও ওই দিন বলেন সরকারপ্রধান।প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের কথা বলার পর তারা এখন সেই প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দাবিতে তারা ফের রাজপথে নেমেছেন।