খুলনা সিটি করপোরেশনের চলমান ভোটগ্রহণে নানা অনিয়মের বিষয়ে জানানো হলেও নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ তুলেন। নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন ও বেলাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন,এ পর্যন্ত আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, খুলনার মোট ভোটকেন্দ্রের প্রায় ৫০ ভাগ কেন্দ্রে নানা ধরনের অনিয়ম-অনাচার, পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়া, ধানের শীষের প্রার্থীর সমর্থকদের মারধর করা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ঘটনা ঘটেছে। এই সকল অভিযোগ স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের গোচরে আনা হলেও তারা এক চোখ বন্ধ করে কাজ করছে আওয়ামী প্রার্থীর অনুকুলে।নির্বাচন কমিশন নিজেদের স্বাধীনতা অস্বীকার করে সরকারের পরাধীন হওয়ার জন্য আত্মসমর্পণ করেছে। এই কমিশন সরকারেরই ফটোকপি, তাদের কম্প্রোমাইজড কপি। নির্বাচন কমিশনের একরম ভূমিকার কারণে ক্ষমতাসীনরা ‘বেপরোয়া’ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া, ভোটারদের ভোট কেড়ে নিতে বাধাহীন।এখন পর্যন্ত খুলনা সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে ভয়ভীতি, রক্তছটায় পরিব্যাপ্ত।
এর আগে সকালে ১১টায় নয়াপল্টনে দলীয় অফিসে সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতাসীনদের কল্যাণে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে চিরাচরিত উৎসবের আমেজ নেই জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, অশান্তি আর নিগ্রহে ভরপুর কেসিসি নির্বাচন। শেখ হাসিনার আমলে নির্বাচন মানে বিরাট ধাপ্পা। নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছে, তাদের মারধর করা হচ্ছে। রিজভী বলেন, বিএনপি মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানিয়েছেন সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পুলিশের সহায়তায় ৪০টি ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। সকাল ৮টায় ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচটি ভোটকেন্দ্রসহ নুরানিয়া মাদ্রাসাকেন্দ্রের এজেন্টদের তালিকা নিয়ে যাওয়ার সময় মনির নামে এক বিএনপিকর্মীকে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। নজরুল নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে বিএনপি এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
খালিসপুর-১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি এজেন্ট লিলি এবং লিমা আক্তারকে মধ্য পালপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এলাকায় মারধর করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তাদের এজেন্ট কার্ড ছিঁড়ে ফেলা হয়, মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে এইচ আর এইচ প্রিন্স আগাখান উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সাধারণ ভোটারদের বের করে দিয়ে নৌকা মার্কায় সিল মেরেছে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা স্কুল ও নতুন বাজার চর কেন্দ্রে যেতে ভোটারদের ব্যাপকভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে।এছাড়া ৪ নম্বর ওয়ার্ডে দেয়ানা উত্তরপাড়া কেন্দ্রে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর হামলা এবং বিএনপি কর্মী মিশুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৩০ নম্বর রুপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে ধানের শীষের সমর্থকদের মারধর করে বের করে দিয়েছে। রিজভী বলেন, পাইওনিয়ার স্কুল ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের হামলা, মারধর করে প্রশাসনের সামনেই বের করে দিয়েছে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের। সদর থানা কয়লাঘাট স্কুল ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে বিএনপি এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। এছাড়া গল্লামারি লায়ন্স স্কুল ও নিরালায় স্কুল কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টকে প্রশাসনের সামনে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ৮০ নম্বর কেন্দ্রে বিএনপি এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭৯ নম্বর কেন্দ্রের সামনে থেকে যুবদলের কর্মী সেলিমকে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিশনার প্রার্থী বিকু কাজী ধরে নিয়ে গেছে। একই কেন্দ্রে বিএনপি নেতা খান মঈনুল হাসান মিঠু ও আলী আকবরকে হামলা চালিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।