খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরাজিত প্রার্থী বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, ‘ভোট ডাকাতির’ নির্বাচনে যে প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, তার পাশে থেকে সহযোগিতা করার কোনো মানসিকতা তার নেই।নির্বাচনে মেয়র পদে জয় পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার আব্দুল খালেক তার প্রতিদ্বন্দ্বী মঞ্জুকে পাশে নিয়েই এগোতে চান- গণমাধ্যমে আসা এমন খবরের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার তিনি ওই কথা বলেন। মঙ্গলবার ওই নির্বাচনে মঞ্জুকে প্রায় ৬৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক মন্ত্রী খালেক। ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৮৬টির ঘোষিত ফল অনুযায়ী, খালেকের এক লাখ ৭৪ হাজার ৮৯১ ভোটের বিরপীতে মঞ্জু পেয়েছেন এক লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট।
অন্তত একশ কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতি হয়েছে অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার রাতেই সেসব কেন্দ্রের ফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন মঞ্জু।বুধবার নগরীর কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসে বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী হতে সরকার সকল শক্তি নিয়োগ করেছে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।মঙ্গলবার রাতে ভোটের ফল প্রকাশের মধ্যেই জয় নিশ্চিত হয়ে গেলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খালেক বলেন, নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে সঙ্গে নিয়েই তিনি খুলনার উন্নয়নে কাজ করতে চান।এর প্রতিক্রিয়ায় বুধবারের সংবাদ ব্রিফিংয়ে মঞ্জু বলেন, তিনি (খালেক) ডাকাতির নির্বাচনের প্রধান ডাকাত। তাদের পাশে থেকে সহায়তা করার কোনো মানসিকতা আমার নেই।এই বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, খুলনার মানুষ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। কেন্দ্রে গেলে বলা হয়েছে ব্যালট শেষ হয়ে গেছে। কারও কারও অঙুলে কালি লাগিয়ে বলা হয়েছে, বাড়ি চলে যান আপনারা, ভোট হয়ে গেছে। কারও হাত থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মেরে বাক্সে ফেলা হয়েছে। যে শহরের মানুষ ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করেনি, তিনি কীভাবে ওই ভোটারদের সামনে যাবেন? তিনি কীভাবে তাদের সামনে মুখ দেখাবেন?”
মঞ্জু বলেন, ভোটের আগে তিনি নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে দাবি পূরণ না হওয়ায় ভোট ‘প্রহসনে’ পরিণত হয়েছে।সিটি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে মঞ্জু বলেন, সেনাবাহিনী ছাড়া এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি আমি আগেই করেছিলাম, আমার সে দাবির যথার্থতা প্রমাণিত হয়েছে।তিনি বলেন, ভোট গ্রহণের দিন র‌্যাব-বিজিবি গাড়িতে বসে ঘুমিয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে পুলিশ ছিলো প্রচন্ড সক্রিয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ছিলেন নির্বিকার, বিশেষ একটি ব্যাচের সকল পুলিশকে খুলনায় এনে একটি অভিজাত হোটেলে রাখা হয়। খুলনায় ডিউটি না থাকার পরও তারা ভোটের দিন সরকারি পোশাক পড়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নৌকার পক্ষে ভূমিকা পালন করেছেন। বিএনপির পোলিং এজেন্ট, কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দিতে তারা কাজ করেছেন।এই নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশন হেরেছে এবং বিএনপির চলমান আন্দোলনের বিজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মঞ্জু। নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের ‘শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু’ ভোটের দাবিকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আখ্যায়িত করে মঞ্জু বলেন, অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করতে রিটার্নিং অফিসারকে অসংখ্যবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। কেন্দ্রে না গিয়েই তারা বলে দিলেন, দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ।অন্যদের মধ্যে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ প্রচার সম্পাদক কৃষিবীদ শামীমুর রহমান শামীম, ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী ও প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।