বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা কেউ যেন আর বানচাল করতে না পারে। কারণ যখন তারা ভোট পারে না, তখন তারা ষড়যন্ত্রের পথ খোঁজে। যেটা খুঁজেছিল ২০১৪ সালে।’

বৃহস্পতিবার (১৭ মে) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের বিএফইউজে’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্রাবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকতা করতেন সেই বিষয়টি তুলে ধরে নিজেকে সাংবাদিক পরিবারের একজন ‘ধরে নিতেও’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর যে অত্যাচার নির্যাতন এই দেশে হয়েছে এবং ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা তো আসলে মূলত এই দেশের স্বাধীনতাই চায়নি। বিএনপি খুব জোর গলায় গণতন্ত্রের কথা বলে। নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠ-নিরপেক্ষ হলো কিনা, সেই বক্তব্য দেয়। কিন্তু আমরা যদি প্রশ্ন করি এই দেশে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ কারা করেছে? জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, তার হ্যাঁ/না ভোট বা তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন; সেই ৭৯ সালের সংসদ নির্বাচন প্রত্যেকটি নির্বাচনে ভোটচুরির প্রক্রিয়াটা সেই শুরু করেছিল। এই দেশের দুর্নীতি এবং ঋণখেলাপি কালচার, এটা তো তারই তৈরি করা। অবৈধ ক্ষমতা দখল করে একটা এলিট শ্রেণি তৈরি করে, তাদের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা, এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই যারা অন্ধকার পথে ক্ষমতায় আসে, অস্ত্র ঠেকিয়ে রাষ্ট্রপতি সায়েমকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসে, তারা আবার গণতন্ত্রটা কিভাবে দেয় বা গণতন্ত্রের চর্চা কিভাবে হয়, সেটা আমি জানি না। তখন প্রতিদিন তো কারফিউ ছিল। আমি ১৯৮১ সালে ফিরে এসেছিলাম। এই দিনে। ফিরে এসে কি দেখেছিলাম। তার মানে কারফিউ গণতন্ত্র তারা দিয়েছে জনগণতন্ত্র তারা দেয় নাই। এটা হলো বাস্তবতা। গণতন্ত্রের ভাষাও তারা বোঝে না।’

বিএনপি শাসনামলের বিভিন্ন নির্বাচনের ভোট জালিয়াতি ও অনিয়মের কথা কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই যারা সবসময় জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, তাদের মুখে নির্বাচন, গণতন্ত্র আবার নির্বাচনে সুষ্ঠতার কথা আমাদের শুনতে হয়? আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম আমরাই করেছি এবং তার প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের এই সরকারের আমলে প্রায় ৬ হাজারের মতো নির্বাচন হয়েছে (স্থানীয় নির্বাচনসহ উপ-নির্বাচন) একটা নির্বাচন নিয়েও তো কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে নাই। কারণ সেখানে আমরা হস্তক্ষেপ করি নাই। করবোও না। কারণ জনগণের এটা অধিকার। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই।’

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে এটা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পরেই কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থানটা আন্তর্জাতিকভাবে মোড় ঘুরে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমাদের বুঝতে হবে, আগে তো মনে করতো বাংলাদেশ একটা দরিদ্র দেশ। হাত পেতে চলবে। আমরা কেন হাত পেতে চলবো? আমাদের মধ্যে কেন এই আত্মবিশ্বাস থাকবে না? জাতির পিতাই তো বলেছেন, আমার মাটি আছে, আমার মানুষ আছে। আমরা সেটা দিয়েই নিজেরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবো। ইনশাল্লাহ আমরা তা দাঁড়িয়েছি। আমরা তা করতে পেরেছি, আমরা পারবো।’

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের প্রসঙ্গসহ সমুদ্রসীমা জয়, স্থলসীমা চুক্তির ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এবিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা মর্যাদায় উঠে এসেছি। আজ আর আমরা কারো কাছে ভিক্ষা চেয়ে চলি না। এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশ। আর সরকারের উন্নয়নের যত পরিকল্পনা এটা একেবারে তৃণমূল থেকে মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি যাতে হয় সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’

সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন এবং দেশের মানুষের কল্যাণে যে কাজগুলি আমরা করছি সেইগুলি যেন সঠিকভাবে উঠে আসে সেই বিষয়টা একটু আপনারা ভাল করে দেখবেন। আমরা মর্যাদার সাথে চলতে চাই। মাথা উঁচু করে চলতে চাই। আমাদের দেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই বিজয়ী জাতি হিসেবে, উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। ইনশাল্লাহ আমরা তা করবো।’

আর আমরা সব সময় একটা দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা নিয়ে চলি দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই সাথে এখন থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি আগামী ২০৪১ সালের বাংলাদেশকে আমরা কেমন দেখতে চাই। ইতোমধ্যে একটা ফাস্ট ড্রাফট হয়ে গেছে এবং আমরা আরও কিছু ইনপুট দিয়েছি। এভাবে এখন থেকেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেইভাবেই আমরা দেশকে গড়তে চাই।’

বিএফইউজে’র সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ের সভাপতি আবু জাফর সূর্যসহ সারাদেশের বেশ কয়েকটি সাংবাদিক ইউনিয়ের সভাপতিরা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক।