২০১৬ সালে দুটি জলজ অমেরুদণ্ডী প্রাণী আবিষ্কার করে হৈচৈ ফেলে দেয়া, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষক এবং সমুদ্র বিজ্ঞানী ড. মো: বেলাল হোসেন এবার নোয়াখালী উপকূলীয় অঞ্চল থেকে Neumania nobiprobia (নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া) ও Arrenums smiti (অ্যারেনুরাস স্মিটি) নামে আরো দু’টি নতুন অমেরুদণ্ডী প্রাণী আবিষ্কার করলেন । এবার তার সাথে সহগবেষক হিসেবে ছিলেন মন্টেনিগ্রোর বিখ্যাত একারলজিস্ট ড.ভস্নাদিমির, ভারতের ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রফেসর তাপাস চ্যাটার্জী , পোলেন্ডের শেচিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আন্দ্রজেল জয়েল এবং ড. মো: বেলাল হোসেনের ছাত্র মো: সাইফুল ইসলাম । চার দেশের পাঁচ গবেষকের সমন্বিত গবেষণায় এই দু’টি প্রজাতি আবিষ্কৃত হয় ।

প্রাণীজগতের আর্থোপোডা পর্বের একারিয়া বর্গের অন্তর্গত প্রাণী দু’টি অত্যন্ত ছোট এবং দেখতে কিছুটা ছোট মাকড়শার মত । এরা মাইটস নামে পরিচিত । এদের আকার ২ থেকে ৩ মি.মি. এবং হাল্কা লাল ও হলুদ বর্ণের হয় । তাছাড়া দুটি শুড় ছাড়া ও চারজোড়া সন্তরন পা থাকে । খাবার হিসেবে উদ্ভিদকণা গ্রহণ করে । তবে লার্ভা অবস্থায় এরা অন্য জলজ প্রাণীর দেহে পরজীবী হিসেবে বাস করে তাদের থেকে খাবার সংগ্রহ করে । ড. বেলাল বলেন, গত বছর এপ্রিল থেকে অগাস্ট পর্যন্ত তিনি ও তার ছাত্র সাইফুল নোয়াখালীর বিভিন্ন পুকুর, খাল, এবং নদী থেকে মাইটসের নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের ল্যাবে প্রাথমিক সনাক্ত করণের কাজ সম্পন্ন করেন । তবে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতীর অপ্রতুল হওয়ায় এবং চুড়ান্তভাবে নতুন প্রজাতি হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য নমুনাগুলো ভারতে পাঠানো হয় । ভারতের ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা যায় এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত মাইটসের

অন্য কোন প্রজাতির সাথে মিল না থাকায় এগুলো নতুন প্রজাতি হিসেবে গণ্য হয় । প্রজাতি দু’টির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য গত বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক জার্নাল বায়োটাক্সায় (biotaxa.org) পাঠানো হয় । গত ১৪ মে শিরোনামে গবেষণাটি জার্নালে প্রকাশিত হয় । একই দিনে বিশ্ব স্বীকৃত ডাটাবেজ Zoobank(যোব্যাংক) এ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে প্রজাতি দু’টি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে ।

ড. বেলাল আরো বলেন, ”স্থলজ মাইটস যেমন ছাড়পোকা, মাকড়শা ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা হলেও জলজ মাইটস নিয়ে এই প্রথম বাংলাদেশে গবেষণা হয়েছে । আমাদের উপকূলীয় বা সামুদ্রিক অঞ্চল অত্যন্ত জীববৈচিত্রপূর্ণ । গবেষণার অপ্রতুলতার কারণে আমাদের দেশের জীববৈচিত্রের সম্পূর্ণ তালিকা এখনো তৈরি করা সম্ভব হয়নি । এ পর্যন্ত আমি যতটুকু গবেষণা করেছি সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত উদ্যোগে এবং নিজস্ব অর্থায়নে। খুশীর ব্যাপার হচ্ছে দু’টি প্রজাতির মধ্যে Neumania nobiprobia (নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া) এর নামকরন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ নোবিপ্রবি এর সঙ্গে মিল রেখে করেছি” ।

সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের জীববৈচিত্র নিয়ে আরো ব্যাপক আকারে গবেষণা সম্ভব হবে বলে এই সমুদ্র বিজ্ঞানী জানান ।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে Nephtys Bangladeshi (ন্যাফটাইস বাংলাদেশী) নামে অমেরুদ্ডী পলিকীটের নতুন একটি প্রজাতি এবং দেশের বাইরে ব্রুনাই এর সমুদ্র এলাকা থেকে Victoriopisa bruneiensis (ভিক্টোরিওপিসা ব্রুনেইয়েনসিস) নামে অমেরুদণ্ডী পলিকীটের নতুন দু’টি প্রজাতি আবিষ্কার করেন ।