চলন্ত বাস থেকে যাত্রীকে নামাতে গিয়ে তাকে পিষ্ট করেছে সরকারি পরিবহন কোম্পানি বিআরটিসির একটি বাস। এই ঘটনায় ৫০ বছর বয়সী ওই নারী যাত্রী পা থেঁতলে গেছে। তার বাম পা কেটে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না চিকিৎসকরা। দুর্ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা বাসচালক ও তার সহকারীকে পিটুনি দিয়ে স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে সোপর্দ করে। কিন্তু সেখান থেকে তারা পালিয়ে যান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইফতারের পরপর সাতটার দিকে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর মোড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ওই নারীর নাম স্বস্তি ইসলাম।

দুর্ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ওই নারী গাজীপুর থেকে বিআরটিসি বাসে করে উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে আসেন। পরে বাস থেকে তিনি নামার জন্য এক পা ফেলার পর অন্য পা ফেলার আগেই বাসটি চলতে শুরু করে। ‘পরে ওই নারীর এক পায়ের উপর দিয়ে বাসের চাকা গিয়ে এক পায়ের হাটুর নিচে হাড় মাংস ভেঙে এক হয়ে ঝুলে যায়।’ স্বস্তিকে প্রথমে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিলে স্বজনরা তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পা হারা নারী উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের ৩৩ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাসায় থাকতেন। খবর পেয়ে তারা দুর্ঘটনা স্থলে ছুটে আসেন।

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, ভুক্তভোগী নারীর বাম পায়ের হাটুর নিচ থেকে পুরো অংশই থেঁতলে গেছে। এছাড়াও পায়ের এঙ্কেল জয়েন্ট সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তার পা কেটে ফেলা ছাড়া বিকল্প নেই। এ জন্যই তারা তাকে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠাতে বলেছিলেন। ভুক্তভোগী স্বস্তির জামাতা প্লাবন বলেন, ‘এ ঘটনার পর বাসের ড্রাইভার ও হেলপারকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশ বক্সে দিয়ে আসে স্থানীয়রা। পরে পুলিশ তাদের কী করেছে তা জানি না।’

আব্দুল্লাহপুরে কর্তব্যরত সার্জেন্ট তানভীর আহমেদ বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর বাসটিকে আটক করে উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। ওই বাসের নম্বর ঢাকা মেট্রো ব ১৪-৪৬৪৩।’ আটক হওয়া বাস চালক ও তার সহকারী কীভাবে পালিয়ে গেলেন, সেই বিষয়টি জানতে উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিকী ও এয়ারপোর্ট জোনের সহকারী কমিশনার সাহিদুর রহমানকে ফোন করা হলে তারা দুই জনই কল কেটে দেন। এর আগে ২০ এপ্রিল বনানী চেযারম্যান বাড়ি মোড়ে বিআরটিসি বাসের চাপায় পা হারান রোজিনা আক্তার নামে এক তরুণী। পরে পঙ্গুতে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তারও আগে ৩ এপ্রিল কারওয়ানবাজার এলাকায় বিআরটিসি এবং স্বজন পরিবহনের বাসের চাপায় হাত হারান তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হাসান। ১৬ এপ্রিল তিনি মারা যান।

এই ঘটনায় রাজীবের দুই ভাইকে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে ৫০ লাখ করে মোট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ এসেছিল হাইকোর্ট থেকে। তবে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে বিআরটিসি। পরে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত হয়। আপিলে বিআরটিসির আইনজীবী দাবি করেন, ওই দুর্ঘটনায় তাদের বাসের চালকের কোনো দায় ছিল না। তারা কেন ক্ষতিপূরণ দেবেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আবদুল্লাহপুরের দুর্ঘটনার পুরো দায় বিআরটিসি বাসের চালকের।