ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে জুন মাসের প্রথম দিন থেকে। ওইদিন ১০ জুনের ট্রেন যাত্রার টিকেট বিক্রি শুরু হবে বলেরেলমন্ত্রী মুজিবুল হক জানিয়েছেন।বৃহস্পতিবার রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী বলেন, ১৬ জুন ঈদের সম্ভাব্য দিন ধরে ১ জুন থেকে টিকেট বিক্রির সূচি ঠিক করেছেন তারা।এবার ট্রেন ছাড়তে দেরি হলে বিকল্প ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

এর আগে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন মন্ত্রী। বৈঠকে রেল সচিব মোফাজ্জেল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব (আইন) মজিবুর রহমান, বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহানসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিলম্ব ট্রেন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নির্দিষ্ট সময়ে এবার ট্রেন ছাড়বে। অন্য রুটেও তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে ট্রেন ছাড়তে একটু বিলম্ব হয়। এটা নিরসনে আমরা বিকল্প ট্রেন রেখেছি। বিলম্ব হলেই বিকল্প ট্রেন পরিচালনা করা হবে।

ঈদে ট্রেন যাত্রা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এবার ঈদে ১০ থেকে ১৫ জুন রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি থাকবে না। যাত্রা নির্বিঘœ করতে সব কর্মকর্তা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন।রেলপথে মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। আমাদের সীমিত সম্পদ দিয়ে যাত্রীদের সর্বোত্তম চাহিদা পূরণ করবো।রেলে নাশকতা ও কালোবাজারি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, রেলে কেউ নাশকতা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিষয়ে সব জেলা ও থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। ঈদের পাঁচদিন আগ থেকেই ট্র্যাক পেট্রোলিং করা হবে। এছাড়া র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, স্থানীয় প্রশাসন ও অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নাশকতাকারীদের কঠোর হাতে দমন করবে। তিনি আরও বলেন, সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। কালোবাজারি ধরতে জেলা প্রশাসকের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ঢাকা স্টেশনে ২৬টি কাউন্টার খোলা থাকবে। এর মধ্যে দুটি কাউন্টার নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এবার পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে ৯৪টি মিটার গেজ ও সৈয়দপুর থেকে ৯০টি (৩১টি এমজি ও ৫৯টি বিজি) সহ মোট ১৮৪টি আউট টার্ন হবে। ঈদে মোট ১ হাজার ৪০৫টি কোচ চলাচল করবে। ঈদে ২২৯টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ব্যবহার করা হবে। ঈদে সারাদেশে দৈনিক ২ দেলোয়ার হোসেন বাদল লাখ ৭৫ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে। আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঈদের পাঁচ দিন আগ থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত সব আন্তঃনগর ট্রেন সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও চলবে। যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ঈদের তিন দিন আগ থেকে কনটেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া কোনো মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে না।বাংলাদেশ রেলওয়ে এর আগে ২ জুন থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রির পরিকল্পনার কথা জানালেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে তা একদিন এগিয়ে আনা হল। রেলমন্ত্রী বলেন, ১ জুন থেকে ৬ জুন পর্যন্ত ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকেট বিক্রি করবে রেলওয়ে। ঈদের পরের ফিরতি যাত্রার টিকেট বিক্রি হবে ১০ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত।প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে। চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। কমলাপুর স্টেশনে ২৬টি কাউন্টার থাকবে। এর দুটি থাকবে নারীদের জন্য। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকেট কিনতে পারবেন।এবার বৃষ্টির পাশাপাশি সড়কপথের অবস্থা বিবেচনা করে ট্রেনে বর্ধিত চাপ সামলাতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী বলেন, এবার ১৫ হাজার টিকেট বাড়ানো হয়েছে।
সাধারণত ঈদের মওসুমে প্রতিদিন ২ লাখ ষাট হাজার টিকেট বিক্রি হত। এবার প্রতিদিন ২ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি যাত্রী যেন ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারেন- সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে মুজিবুল হক জানান।আমরা আগের চেয়ে বেশি কোচ-বগি সংযোজন করেছি। আশা করছি এবার সারাদেশে অন্যবারের চেয়ে ১৫ হাজার বেশি যাত্রী প্রতিদিন বহন করতে পারব।যে কোনো ধরনের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা রোধ করতে নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।পুলিশ, র‌্যাব, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত আছে। যেখানেই কালোবাজারি, যেখানেই নাশকতা সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।ঈদের পর ১০ জুন থেকে ফিরতি টিকেট বিক্রি শুরু হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রাজশাহী,খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ফিরতি টিকেট বিক্রি করা হবে।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার ঈদের তিন দিন আগে থেকে সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। এছাড়া ঈদের পর আরও ৭দিন এসব বিশেষ ট্রেন চলবে। এর মধ্যে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে দুটি করে, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-পার্বতীপুর, ভৈরব-কিশোরগঞ্জএবং ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জ রুটে এসব ট্রেন চলবে।