খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ের পর এবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও বিজয়ী হতে চায় আওয়ামীলীগ। হাই কমান্ডের নির্দেশে গাজীপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মেয়র পদে দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালাতে মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিনই তারা দলীয় প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় সভা ও গণসংযোগ করছেন। সিটি কর্পোরেশনের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে ভোটারদের খোঁজে ছুটে যাচ্ছেন বাড়ি বাড়ি, অফিস ও মিল কারখানায়। নানা কৌশলে তারা নির্বাচনী পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। গত ২০মে টঙ্গীতে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলের বাসায় আওয়ামীলীগের প্রায় ডজন খানেক কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে গাজীপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠকের পর আওয়ামীলীগ পূর্ণদ্যোমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। তারা হিসেব নিকেষ কষে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে মধ্যবর্তী সময়কে (১৮জুন আনুষ্ঠাণিক প্রচারণার আগ পর্যন্ত) কাজে লাগাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নির্বাচনের আনুষ্ঠাণিক প্রচার প্রচারণা আরো একমাস পর ১৮জুন হতে শুরু কথা থাকলেও কোন প্রার্থীই বসে নেই তাদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা থেকে। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই হবে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের (ধানের শীষ) মধ্যে। সবার দৃষ্টিই এখন এ দু’প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী কার্যক্রমের দিকে। স্থানীয় সংসদ সদস্যরা সহ উভয় দলের বেশ কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা প্রায় প্রতিদিনই নানা কৌশলে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। তারা ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করছেন। তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী (ধানের শীষ) হাসান উদ্দিন সরকার আবারো ইফতার মাহফিলের নামে নির্বাচনী সভা করে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ মন্ত্রী-এমপিদের বিরেুদ্ধে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদের প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বৃহস্পতিবার মহানগরের ১৮, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর আওয়ামীলীগ আয়োজিত পৃথক তিনটি আলোচনা সভায় অংশ নেন। ইফতার পূর্ব এসব আলোচনা সভায় তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের কাছে দোয়া ও সমর্থন প্রার্থনা করেন।
এদিন বিকেলে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নগরপাড়ায় এলাকাস্থিত সাগর সৈকত কনভেনশন সেন্টার হলে গাজীপুর মহানগরীর বাসন সাংগঠনিক থানা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা, ইফতার ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক। মাহফিলে আলোচনাকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, তরুণ বয়সেই ইবাদত ও সেবা করার উত্তম সময়। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে একজন যোগ্য এবং কর্মঠ নগর সেবক হিসেবে নগরবাসি সবসময় কাছে পাবেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম একজন ধর্মপ্রাণ, বিণয়ী এবং প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ। তিনি ইতোমধ্যেই শিক্ষা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সেবামূলক কাজ করে গাজীপুরের সর্বস্তরের মানুষের মন জয় করেছেন। মানুষের ভালবাসাই জাহাঙ্গীরকে জয়যুক্ত করবে। তাই নির্বাচনে আপনাদের সেবক হিসাবে জাহাঙ্গীরকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর সোসাইটির সভাপতি ও আওয়ামীলীগ নেতা অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল। এতে বক্তব্য রাখেন মেয়র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর আওয়ামীলীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন বাবুল, গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া, জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান, মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক এসএম মোকছেদ আলম, আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রফেসর আব্দুল বারী, মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, সাবেক ভিপি আব্দুল হালিম সরকার, কাউন্সিলর সফর আলী প্রমুখ।

একইদিন গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল মহানগরের ২৬ এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের উনিশে পার্ক সেন্টার ও লক্ষীপুরা কমিশনার কার্যালয়ের পাশে পৃথক দুটি আলোচনা সভা এবং দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। এসময় তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গাজীপুর ও টঙ্গীর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। ঢাকা-গাজীপুর বিআরটিএ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এখন প্রয়োজন পরিকল্পিত নগরায়ণ। আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমই পারবেন কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগীতায় গাজীপুরকে একটি পরিকল্পিত আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে। এজন্য তিনি আগামী ২৬ জুন নির্বাচনে সকলের স্বতঃস্ফুর্ত এবং শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরকে জয়য্ক্তু করার আহ্বান জানান।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কাজী মোঃ আলিম উদ্দিন বুদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ নয়ন, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মোঃ আতাউল্লাহ মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মুজিবুর রহমান, কাজী ইলিয়াস আহমেদ, আব্দুল হাদি শামীম, রিয়াজ মাহমুদ আয়নাল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি রঞ্জিত কুমার মল্লিক বাবুসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী (ধানের শীষ) হাসান উদ্দিন সরকার বৃহস্পতিবার টঙ্গীস্থ নিজ বাস ভবনে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচনী কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।
এসময় বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে ইফতার মাহফিলের নামে নির্বাচনী সভা করার অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন কমিশনে একের পর এক অভিযোগ করেও কোন কাজ হচ্ছে না। এমনকি গাজীপুর সিটিতে নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের কোন কার্যক্রমও চোখে পড়ছে না। আমরা আচরণবিধি মেনে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছি। অপরদিকে আওয়ামীলীগ নির্বাচনী আচরণবিধিকে কোন তোয়াক্কাই করছে না। সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে মন্ত্রী-এমপিরা প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন। অথচ আমাদেরকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

হাসান উদ্দিন সরকার আরো বলেন, নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার দেখে একটি মহল শুরু থেকেই নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে। উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আমি জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার পর এবার আমার বিরুদ্ধেই নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহল জনমতকে আমার বিপক্ষে প্রভাবিত করতে পরিকল্পিতভাবে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপপ্রচারের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। আমাকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও চরিত্র হননের মাধ্যমে নির্বাচনে জনমতকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে ওই মহলটি এখন উঠে পড়ে লেগেছে। তারা তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করে বিভিন্ন লিংকের মাধ্যমে আমার ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের অপপ্রচার ও গুজব ছড়াচ্ছে। যা সম্পুর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, কদর্য ও অত্যন্ত মানমানিকর। এসময় তিনি এব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ আবারো আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানান।

তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য অপপ্রচার সেল চালু করেছে। ওই সেল থেকে বিভিন্ন ভুয়া আইডি ব্যবহার করে ‘হাসান সরকার ভন্ড দেওয়ান বাগীর মুরিদ’, ‘জাহাঙ্গীরকে হারাতে মহাসচিবের কাছে ১০ কোটি টাকা চেয়েছেন হাসান সরকার’, ‘হাসান সরকার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন’, ‘হাসানকে হারাতে মান্নান-সানাউল্লাহ ঐক্যমত’ সহ নানাভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

তিনি বিকেল ৪টায় টঙ্গীর মুদাফায় নিজের শিক্ষাগুরু বাংলাদেশের প্রথম সংসদের সদস্য মরহুম আব্দুল হাকিম মাস্টারের সহধর্মিনী নূরের নেছা (১০০) এর জানাযায় শরীক হন। পরে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গীর বড় দেওড়া এলাকায় আহসান উল্লাহ সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্সে এতিমখানায় এতিমছাত্রদের সঙ্গে ইফতার করেন।