টঙ্গীতে পুলিশের সঙ্গে ’বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত রেজাউল ইসলাম ওরফে বস্তি রনির (২৮) মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত পুলিশের তদন্ত কমিটি বুধবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষৎ করেছেন। এসময় তদন্ত কমিটির সদস্যরা এলাকাবাসীর সঙ্গেও কথা বলেন।

রনি নিহতের ঘটনায় মঙ্গলবার পুলিশ সদর সপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ঢাকা রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় । কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ঢাকা রেঞ্জ অফিসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকতারুজ্জামান এবং গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখকে সদস্য করা হয়। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

নিহত রনির পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, এডিশনাল ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বুধবার দুপুরে টঙ্গীর এরশাদ নগর তিন নং ব্লকের বাসায় গিয়ে রনির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তদন্ত কমিটির সদস্য ছাড়াও গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদও এসময় উপস্থিত ছিলেন।

নিহত রনির মা পারভীন বেগম বলেন,‘পুলিশের ওই কর্মকর্তা বুধবার তাদের বাসায় আসেন। গাজীপুরের ডিবি পুলিশ ও টঙ্গী পুলিশ তাদের কাছ থেকে কিভাবে টাকা নিয়েছে তা জানতে চান।’তিনি আরো বলেন, গত শনিবার দুপুর দুইটার দিকে টঙ্গী এরশাদ নগরের বটতলা এলাকা থেকে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ রনিকে তুলে নিয়ে যায়। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে গাজীপুর ডিবির কার্যালয়ে যান তারা। পরে তিন দফায় আড়াই লাখ টাকা দেওয়ার পর একটি সাদা কাগজে রনির মা পারভীনের স্বাক্ষর রেখে রনিকে ছেড়ে দেয় ডিবি পুলিশ। এসময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা কাগজে তার বক্তব্য লিখে নেন বলে তিনি জানান। তারা রনিকে নিয়ে বের হওয়ার সময় ডিবি কার্যালয়ের মূল ফটক থেকে তাকে আবারও গ্রেফতার করে টঙ্গী থানার এসআই আবু বকর সিদ্দিক।

নিহত রনির বোন শান্তা আক্তার বলেন,‘ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) অচিন্ত কুমার তাদের কাছ থেকে প্রথমে ৫০ হাজার পরে দেড় লাখ ও বিকাশের মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার টাকা নেন। পরবর্তীতে টঙ্গী থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু বকর সিদ্দিক তাদের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে।

নিহত রনির বাবা মোঃ হাফিজুল ইসলাম জানান, বেলা ১২টার দিকে পুলিশ সদস্যরা এসেছিলেন। তারা রনির ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি জানান, পুলিশ সদস্যরা তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছাড়াও পাড়া-প্রতিবেশিদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

এ বিষয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, আমরা সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছি। কথা বলার চেষ্টা করছি। আরও বলব। তারপর যথাসময়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

তবে এডিশনাল ডিআইজি আনোয়ার হোসেনের টঙ্গীতে আসার কথা স্বীকার করলেও তিনি রনির পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি টঙ্গী থানার ওসি মো. কামাল হোসেন।

উল্লেখ্য, মাদক কেনা-বেচার খবর পেয়ে পুলিশ রবিবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে টঙ্গীর নিমতলী মাঠ এলাকায় অভিযানে যায়। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়িরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। পরে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে রনি গুলিবিদ্ধ হয়। অন্যরা পালিয়ে যায়। এসময় তাদের ধরতে গিয়ে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। রনিকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রনির বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় মাদকের ১৪টি মাদক মামলা রয়েছে বলে টঙ্গী থানার ওসি মো. কামাল হোসেন জানান।