ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার বিছিন্ন অবহেলিত এক দ্বীপের নাম ঢালচর। এখানে সন্ধ্যান পাওয়া গেছে ব্লাক ডায়মন্ডের। মেঘনা-তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌড়াঙ্গ নদী বেষ্টিত বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে রয়েছে এই দ্বীপ। ৩১.৩১ বর্গকিলোমিটার এলাকার ১৭ হাজার মানুষের বসবাস রয়েছে। এই দ্বীপটি নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, সরকারের মধ্যেম আয়ের দেশ ঘোষণার অপেক্ষমান হলেও এ দ্বীপটিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা সেবা রয়েছে অপ্রতুল। নদী ভাঙন কবলিত অসহায় পরিবার গুলোর পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি।
ঢালচরের ভুগর্ভের অভ্যন্তরে থাকা হাজার হাজার কোটি টাকার খনিজ সম্পদ থাকলেও সরকারী ভাবে উত্তোলনের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে মূল্যবান এই খনিজ সম্পদসহ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের এক তৃতীয়াংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত এই খনিজ সম্পদ উত্তোলন না করলে নদীর অতহল গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আঃ ছালাম হাওলাদার বলেন, ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার ভুগর্ভস্থ খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানী দল মাটি পরীক্ষা করে ব্লাক ডায়মন্ড (কালো হিরা) সহ মূল্যবান ১৭টি উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন। কিন্তু ওই সম্পদ উত্তোলনের জন্য সরকারের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধের কথা ছিল। চুক্তির অভাবে আজও মাটির নিচেই রয়ে গেছে এ মূল্যবান সম্পদ ব্লাক ডায়মন্ড।
অপার সম্ভবনা থাকা সত্বেও মূল ভুখন্ডের সাথে উন্নত কোন যোগাযোগ এখনও সৃষ্টি হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগময় কালীন অথবা বৈরী আবহাওয়ায় অসুস্থ্যতাজনিত বিনা চিকিৎসায় অবস্থান করতে হয় ঢালচরের এই সকল মানুষের। দূর্যোগ ও বন্যায় এ অঞ্চলের মানুষের নিত্যাদিনের সাথী। অনেক সময় বৃষ্টি ও নদীর পানি বেড়ে নিম্মাঞ্চল প্রায় পানিতে ডুবে যায়। পরিবার গুলো ঘর থেকে বের হতে পারেনা।
২০০৯-১০ অর্থ বছরে এই ঢালচরটি কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে “ঢালচর” ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি। নদীতে নৌ-ডাকাতির বন্দের জন্য পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঢালচর ইউনিয়নে ১টি দাখিল মাদ্রাসা, ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩ টি সরকারী, ২টি বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা সহ ৪টি হাফেজী ও কওমী মাদ্রাসা রয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষার পরিবর্তে নদীতে মাছ ধরার কাজে সময় কাটাচ্ছে। অভিভাবকদেরও অর্থনৈতিক সাপোটে শিক্ষায় শিশুরা নিরুৎসায়িত হতে চলছে। এই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো মনিটরিংয়ের অভাবেও শিক্ষার মান রয়েছে নিম্ম।নদী ভাঙনের ফলে অনেক পরিবার ভিটে মাটি হারিয়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে।
ঢালচর বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন হাওলাদার বলেন, ঢালচরকে মন্ত্রী মহোদয় অনেক কষ্ট করে ইউনিয়ন করেছেন। আমরা নদী ভাঙন কবল থেকে রক্ষা পেতে চাই? চর সত্যেন নামক চরে ২ হাজার ৯৮২ একর জমি বসবাস ও চাষাবাদের উপযুক্ত থাকলেও বনবিভাগের দাবীর কারনে সেখানে কোন বসতি স্থাপন বা চাষাবাদ করতে পারছেনা। চলতি সপ্তাহে উক্ত জমি উচ্চ আদালত ভূমি মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বন বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিষ কুমার জানিয়েছেন। ওই জায়গা ভূমি মন্ত্রণালয়ের হলে হাজার হাজার মানুষের বসতির ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নাহিদুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ঢালচরকে নদী ভাঙন রোধের জন্য আমাদের পরিকল্পনায় আসেনি। আমরা আনার চেষ্টা করছি।