চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে সারাদেশে বৃহস্পতিবার দিনগত রাতেও একাধিক কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় রাজধানীসহ সারাদেশে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন।

ঢাকা
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১২টার দিকে র্যা বের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কামরুল ইসলাম (৪০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। কামরুল মহাখালী দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা। শিল্পাঞ্চল থানার এসআই মিজান জানান, রাতে র্যা বের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের দাবি, কামরুল ১৫টির বেশি মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামি ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. বাচ্চু মিয়া জানান, কামরুলের লাশ ঢামেক জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে।

কক্সবাজার
কক্সবাজারে বৃহস্পতিবার রাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দু’জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন উখিয়া টেকনাফের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি আব্দুর রহমান বদির বড় বোন শামসুন্নাহারের দেবর এবং টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য রয়েছেন। পুলিশের দাবি, দু’জনই ইয়াবা ব্যবসায়ী। প্রতিপক্ষের সঙ্গে গোলাগুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জেলার মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের পাহাড়তলীতে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দু’পক্ষের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মোস্তাক আহমদ নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হন।

ঘটনাস্থল থেকে এক হাজার পিস ইয়াবা ও ৩টি বন্দুক উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। তিনি আরও জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ওই সময় অন্যান্যরা পালিয়ে গেলেও এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদেহটি একই এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে মোস্তাকের বলে সনাক্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র এবং মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান ওসি। এদিকে, শুক্রবার ভোরে কক্সবাজার মেরিনড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর ২ নাম্বার ব্রিজ এলাকা থেকে আকতার কামাল (৪১) নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নেত্রকোনা
নেত্রকোনায় মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে অজ্ঞাত পরিচয়ের দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্য। বৃহস্পতিবার দিনগত রাত একটার দিকে নেত্রকোনা উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের মনাং গ্রামে বন্দুকযুদ্ধের এ ঘটনা ঘটে। অভিযানের সময় ঘটনাস্থল থেকে ২টি পাইপ গান, ৩ হাজার পিস ইয়াবা ও ৭০৭ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি বোরহান উদ্দিন খান জানান, উক্ত স্থানে মাদক বেচা-কেনা হচ্ছে- এমন গোপন সংবাদে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের ওপর গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে অজ্ঞাত পরিচয়ের দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন।

বন্দুকযুদ্ধে আহত নেত্রকোনা মডেল থানার এসআই জলিল, এএসআই জাকির ও কনস্টেবল ওয়াহিদকে নেত্রকোনা সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওসি।

কুমিল্লা
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কামাল হোসেন ওরফে ফেন্সি কামাল নিহত হয়েছেন। এ সময় তার দুই সহযোগীকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সোয়া ১২টায় বন্দুকযুদ্ধের এ ঘটনা ঘটে। কামাল হোসেন কুমিল্লা সদর উপজেলার রাজমঙ্গলপুর গ্রামের মৃত হিরন মিয়ার ছেলে। তিনি শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন থানায় তার নামে ১২টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন জানান, গোপন সংবাদে রাতে কুমিল্লা-বুড়িচং সড়কের মহেশপুরে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে মাদক ব্যবসায়ী ফেন্সি কামালকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বন্দুকযুদ্ধের সময় কামালের সহযোগী মাদক ব্যবসায়ী সদর উপজেলার ছাওয়ালপুর গ্রামের মফিজ মিয়ার ছেলে হানিফ মিয়া ও চান্দিনার কোরপাই গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে ইলিয়াছকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ১টি পাইপগান, ১ রাউন্ড কার্তুজ ও ৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।

বন্দুকযুদ্ধের সময় ডিবি পুলিশের এসআই নন্দন চন্দ্র সরকার, এএসআই সাহাবুল হোসেন ও কনস্টেবল সুমন মিয়া আহত হন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন ইমন।

ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শামীম সরদার (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শামীম সরদার উপজেলার শিবনগর এলাকার মোমিন সরদারের ছেলে। পুলিশের দাবি, শামীম এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি। বন্দুকযুদ্ধের সময় এসআই শামীম, এএসআই অমিত, কনস্টেবল নাজিম ও রতন আহত হয়েছেন। তবে নিহত শামীমের স্ত্রী শামছুন্নাহার দাবি করেন, গত মঙ্গলবার বিকেলে একটি মাইক্রোবাসে করে আড়পাড়া বিহারী মোড়ের একটি দোকান থেকে কয়েকজন তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যান।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান খান জানান, মাদক কেনা-বেচা হচ্ছে- এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আড়পাড়া এলাকায় মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ফার্মের মাঠে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে শামীমকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, ১৭ বোতল ফেনসিডিল ও ৪৮০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। শামীমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান ওসি মিজানুর রহমান খান।

সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে ইউনুস আলী দালাল নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিনগত রাত পৌনে দুইটার দিকে উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর-বড়ালি গ্রামে বন্দুকযুদ্ধের এ ঘটনা ঘটে। ইউনুস আলী উপজেলার দক্ষিণ ভাদিয়ালি গ্রামের আব্দুল্লাহ দালালের ছেলে। পুলিশের দাবি, ইউনুস আলী এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শ্যুটার গান, দুই রাউন্ড গুলি ও ৭০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।

কলারোয়া থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ জানান, রাতে রামকৃষ্ণপুর-বড়ালি সীমান্তে দু’দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে খবর পেয়ে টহলে যান। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঁচ রাউন্ড গুলি করা হয়। এতে দু’পক্ষই বিলের মধ্য দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে বাচাঁও বাঁচাও বলে চিৎকার শুনে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইউনুসকে পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ইউনুস আলী দালাল শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তিনি বিচারাধীন একাধিক মাদক মামলার আসামি ছিলেন বলেও জানান ওসি।

ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ শহরের পুরোহিত পাড়ায় বৃহস্পতিবার দিনগত রাত পৌনে দুইটার দিকে ডিবি পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে রাজন নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ডিবির ওসি আশিকুর রহমান জানান, শহরের পুরোহিত পাড়া রেলওয়ে কলোনি ভাঙ্গা ওয়াল এলাকায় রেনু বেগমের বাড়ির সামনের পুকুর পাড়ে জেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আলাল সহযোগীদের সঙ্গে মাদক ভাগাভাগি করছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি অভিযানে যায়।

উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে মাদক কারবারিরা গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে এক পর্যায়ে তারা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাজনকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা, তিনটি গুলির খোসা, ১টি চাইনিজ কুড়াল ও ১টি ধারালো হাসুয়া উদ্ধার করা হয়। বন্দুকযুদ্ধে ডিবির ওসি আশিকুর রহমান ও কনস্টেবল কাওছার আহত হন। তাদের পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন। রাজনের বিরুদ্ধে মাদকসহ অন্যান্য আইনে ৯টি মামলা রয়েছে বলেও জানান ওসি আশিকুর রহমান।

গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মো. জুয়েল মিয়া (২৮) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোর চারটার দিকে ফুলছড়ি উপজেলার বালাসিঘাট এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের এ ঘটনা ঘটে। জুয়েল গাইবান্ধা শহরের ব্রিজ রোড়ের কালিবাড়ি পাড়ার মৃত নছিম উদ্দিনের ছেলে। গাইবান্ধা পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া জানান, জুয়েল একজন মাদক ব্যবসায়ী। বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের ৩ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে গত তিন দিনে গাইবান্ধায় র্যা ব-পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দু’জন নিহতের ঘটনা ঘটল।

পুলিশ সুপার জানান, ফুলছড়ি উপজেলার বালাসিঘাট এলাকায় শুক্রবার ভোরে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক পাচার করছিলেন- এমন সংবাদে সদর থানা পুলিশ অভিযান চালায়। উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক চোরাচালানিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় ঘটনাস্থলে মারা যান জুয়েল। তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে ১টি দেশি পিস্তল, ২ রাইন্ড গুলি ও ৫০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পুলিশের আহত সদস্যরা হলেন- এএসআই আব্দুর রহিম, এএসআই মসিউর রহমান ও কনস্টেবর আব্দুর রাজ্জাক। জুয়েলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান আব্দুল মান্নান মিয়া।

শেরপুর
এ ছাড়া শেরপুরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালু নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বন্দুকযুদ্ধের এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, কালু শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। বন্দুকযুদ্ধের সময় তিন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।