শুক্রবার কাঁচাপণ্যের বিক্রেতারা রীতিমতো বেপরোয়া হয়ে যান। নিজের ইচ্ছামতো প্রতিটি পণ্যের দাম একদিনেই ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। সরবরাহ ভালো ও পাইকারি বাজারে দাম ওঠানামা না করলেও খুচরা বাজারে তারা ঠিকই চড়া দাম হাঁকান।ছুটির দিন হওয়ায় কাঁচা বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পণ্যের দাম বেশি নেয়া হয় বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা, পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি বৃদ্ধি করলেই কেবল বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, কাঁঠালবাগান কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথায় ওঠে আসে এসব তথ্য।
কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার কেজি প্রতি আলু বিক্রি হয় ১৮ থেকে ২০ টাকায়, কিন্তু আজ শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। প্রতিকেজি বেগুন বৃহস্পতিবার ছিল ৪০ টাকা আজ তা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শসা প্রতি কেজি বৃহস্পতিবার ছিল ২৫ টাকা আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। পটল প্রতি কেজি বৃহস্পতিবার ছিল ৩০ টাকা, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, কাকরোল বৃহস্পতিবার ছিল ৩৫, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো বৃহস্পতিবার ছিল ৪০ টাকা আজ শুক্রবার তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গাজর বৃহস্পতিবার ছিল ৫০ টাকা আজ শুক্রবার তা ৬০ টাকা। এছাড়া লাউ প্রতি পিছ বৃহস্পতিবার ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা আজ তা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লেবু প্রতি হালি বৃহস্পতিবার ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা আজ তা ২৫ টাকা। এছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার প্রতি শাকের আঁটিতে ৫ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য কাঁচাপণ্যও বিক্রি হয়েছে বেশি দামে।এদিকে বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি পেয়াজ ছিল ৩৫ টাকা, শুক্রবার তা হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, রসুন দেশি ও আমদানি বৃহস্পতিবার ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শুক্রবার তা ১শ থেকে ১শ ১০ টাকা।শুক্রবার দাম বেশি রাখার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের কাঁচা বাজারের বিক্রেতা করিম মিঞা আরটিভি অনলাইনকে বলেন, শুক্রবারে ক্রেতা বেশি থাকে, মাল কম পাওয়া যায়। তাই দাম বেশি হয়। তবে শনিবার আবার দাম পড়ে যায়।
প্রায় প্রতিদিনই কাঁচা বাজার করেন সরকারি চাকরিজীবী কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুক্রবার কারণ ছাড়াই প্রায় প্রতিটি কাঁচাপণ্যের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। ক্রেতাদের সমাগম বেশি হলে দাম আরও বৃদ্ধি পায়। এক ধরণের জিম্মি করেই তারা এভাবে দাম বাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ এ ক্রেতার।বৃহস্পতিবারের চেয়ে শুক্রবার প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেশি বলে জানালেন হাতিরপুল বাজারের বিক্রেতা সানোয়ার হোসেন । তিনি আরও বলেন, শুক্রবারে বেশি সতেজ ও ভালো কাঁচাপণ্য রাখা হয়। এছাড়া বেশি বিক্রি হয় বলে মাল কমেও যায়। সবকিছু ভেবেচিন্তেই দাম একটু বেশিই রাখা হয়। এছাড়া অন্যান্যে দিন কম বিক্রি হয়। ফলে যা আয়ের চিন্তা শুক্রবারকে ঘিরেই। কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে এখনও কিছু কিছু বাজারে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। এর মধ্যে অন্যতম হাতিরপুল, কাঁঠালবাগান ও শান্তিনগর কাঁচাবাজার।
শুক্রবার (২৫ মে) সরেজমিন এ তিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি সবজি পাইকারি ও খুচরা বাজারের বিক্রির ব্যবধান অনেক বেশি। কোনও কোনও পণ্য বিক্রি হচ্ছে দুই গুণ বেশি দরে। তবে এসব বাজারগুলোতে মিডিয়াকর্মীর কোনও গাড়ি বা ক্যামেরা চোখে পড়লে মুহূর্তেই সবজি ভেদে কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ব্যবসায়ীরা এড়িয়ে যেতে থাকেন।
হাতিরপুল কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আলম প্রতি কেজি শসা ৬০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, মরিচ ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ টাকা বিক্রি করছেন। এর সত্যতা পাওয়া গেল ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু মিডিয়াকর্মীর নাম জানা মাত্রই শসার দাম ৬০ টাকা থেকে ৪০ টাকা হয়ে গেল। বেগুন ও মরিচের দাম হয়ে গেল ৫০ টাকা। এ বিষয়ে আলমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরে অবশ্যই স্বীকার করে বলেন, কয়েকদিন ধরে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে আগের দামে সবজি কেনা থাকায় দাম একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে। আলমের মতো এ বাজারের অন্যরাও একইভাবে সবজির দাম বেশি রাখছেন। তবে মিডিয়ার গাড়ি আসার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিটি সবজির দাম কম যায়।সালেহা বেগম নামে এক ক্রেতা বলেন, এইমাত্র আমি বেগুন কিনতে গেলে তারা ৭০ টাকা কেজি দাম চায়। এর কয়েক মিনিট পরই ৩০ টাকা কমে গেল!সালেহা কাছে অভিযোগ করে বলেন, তাদের মামলার ভয় আছে। এজন্য মিডিয়ার কেউ এলেই দাম কমে যায় পণ্যেরশাক বিক্রেতা শাহেদ প্রতি আটি পালং ও লাল শাক বিক্রি করছেন ৩০ টাকা করে। সাদা শাক ২০ টাকা, কলমি ২০ টাকা। এক ফটো সাংবাদিক দেখার পরই শাকের দাম কমে যায়। সে জানায় পালং ২০ টাকা, লাল শাক ২০ টাকা আটি। এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে কোনও উত্তর দেননি।এ বাজারের ঠিক এক কিলোমিটার দূরে অবস্থান কাঁঠালবাগান কাঁচাবাজার। বাজারের পশ্চিম দিকে একটি বাজার তালিকা টাঙানো আছে। বিক্রির সঙ্গে এ তালিকার কোনও মিল পাওয়া যায়নি। তালিকায় মরিচের দাম দেওয়া আছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। কিন্তু দাম চাওয়া হচ্ছে ৮০ টাকা। কাঁচা পেঁপের দাম ২৮ থেকে ৩২ টাকা থাকলে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। টমেটোর দাম ৩৮ টাকা লেখা থাকলে বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকায়। ধনে পাতা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করার কথা থাকলে এখানে ১০ গ্রাম ধনে পাতা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। পটল ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।এ বিষয়ে বাজারের সবজি বিক্রেতা ফয়সাল বলেন, এখানকার তালিকা নিয়মিত হয় না। তাছাড়া তালিকার সঙ্গে কাঁচাবাজারের সম্পর্ক নেই। এটা সব সময় ওঠা-নামা করে। তাই দাম একটু বেশি হচ্ছে। আবার অনেক সময় কম দামেও পাওয়া যায়। যদিও দাম কমার রেকর্ড নেই এখানে।শান্তিনগর কাঁচাবাজারে সংবাদকর্মীর সঙ্গে এক দাম বলা হয়, অন্যদিকে বিক্রির সময় হাকা হয় চড়া মূল্য। এ বাজারে প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। কিন্তু সংবাদকর্মীর পরিচয় জানতে পেরেই লাউটির দাম চাওয়া হয় ৪০ টাকা। এভাবে এক বাজারে দুই রকম তথ্য পাওয়া যায়।মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মুরগির দাম শুক্রবার ৫ টাকা বাড়তি রাখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বয়লার ছিল প্রতি কেজি ১৪০ টাকা আজ তা ১৪৫, প্রতি কেজি কর্ক শুক্রবার বিক্রি হয় ৩১০ টাকা, আজ তা ছিল ৩২০ টাকা, প্রতি কেজি লেয়ার বৃহস্পতিবার ছিল ১৯০ থেকে ১৯৫ আজ তা বিক্রি হচ্ছে ২শ টাকা। এদিকে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫শ টাকা কেজিতে।