বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরোনো যে কারাগারে রাখা হয়েছে, সেখানে প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আর বিদ্যুৎ চলে গেলে কোনো বৈদ্যুতিক পাখা কাজ করে না, অন্যান্য বাতি জ্বলে না।মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, বিদ্যুৎ চলে গেলে খালেদা জিয়ার কক্ষে বিকল্প হিসেবে মোমবাতি ও হাতপাখা দিয়ে কাজ চালাতে হয়।এই যে অমানবিকতা,এই যে হৃদয়হীনতা,এর তুলনা নেই। কারাগারে বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের মধ্যে মানবেতর দিনযাপনে খালেদা জিয়া শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে ভুগছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।ফখরুল বলেন, কারাগারে এখন কোনো জেনারেটর নেই। আমরা যখন ছিলাম, তখন শক্তিশালী জেনারেটর ছিল।তখন দেখতাম, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কখনো বিদ্যুৎ যায় না। এখন জেনারেটর নেই। প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বারবার বলেছি, সাধারণ যে নিয়ম আছে, যারা শ্রেণিপ্রাপ্ত, তারা নিজের খরচে অনেক কিছুই নিয়ে আসতে পারে। এটা আমরাও ভোগ করেছি। কিন্তু খালেদা জিয়াকে কোনো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এই সুযোগগুলো না দেওয়ার কারণে তিনি সারা জীবনে যেটায় অভ্যস্ত, মিনিমামটুকু সেখানে পাচ্ছেন না।কারাগারে এখন রান্নার মানও খুব খারাপ হয়ে গেছে বলে দাবি করে বিএনপি নেতা ফখরুল বলেন, এখন বাইরে থেকে কোনো খাবার পরিবারের সদস্যের নিতে দেওয়া হচ্ছে না। নূন্যতম মানবিক আচরণ তাঁর সঙ্গে করা হচ্ছে না। প্রথম শ্রেণির বন্দী হিসেবে যা তাঁর প্রাপ্য, সেটাও তিনি পাচ্ছেন না।

খালেদা জিয়ার স্বজনেরা গতকাল তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বজনেরা দেখেছেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, এই অসুস্থতা এমন পর্যায়ে গেছে যে তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না। আমরা আগে জানিয়েছিলাম, ওনার বাঁ হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিউরো প্রবলেম আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়ে গেছে। আগে থেকেই তিনি নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০ বছর আগে তাঁর দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। দুই চোখে অপারেশন করা হয়েছে। এসব সমস্যার মধ্যে কারাগারে গিয়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সেবা থেকে তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন।এ ছাড়া চিকিৎসকেরা তাঁকে যে পিজিওথেরাপির পরামর্শ দিয়েছেন, তা তিনি পাচ্ছেন না।ফখরুল বলেন, কারাগারে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, গুমোট আবহাওয়া বিশুদ্ধ পানির অভাব ও নিয়মিত বিদ্যুৎহীনতার কারণে খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট ও জ্বর লেগেই আছে। প্রতি রাতেই জ্বর আসছে, জ্বর আর যাচ্ছে না।এই অবস্থায় দ্রুত খালেদা জিয়ার রক্ত পরীক্ষা, বিশেষ এমআরআই ও সঠিক পরীক্ষা দরকার বলে মনে করেন ফখরুল। অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।মির্জা ফখরুল বলেন, মূল মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন হয়ে গেছে। সেই জামিন ঠেকানোর জন্য সর্বোচ্চ আদালতে গেছে। তারপর জামিন পাওয়ার পর একটার পর একটা মিথ্যা মামলা সামনে নিয়ে আসছে। তিনি যেন বেরোতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা তারা নিশ্চিত করতে চাইছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে সরকার কারাগার। আটক রাখতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

জিয়াএতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে গত ৭ ফেব্র“য়ারি থেকে পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া।মির্জা ফখরুল বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও খালেদা জিয়াকে প্রথম শ্রেণির প্রাপ্য সুবিধাদি দেওয়া হচ্ছে না। স্বাভাবিক নিয়মে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিরা অনেক জিনিস নিজ খরচে নিতে পারলেও খালেদা জিয়া সেই সুযোগ পাচ্ছেন না।তিনি সারাজীবনে যেটাতে অভ্যস্ত, সেখানে তার নূন্যতমটা পাচ্ছেন না। সুস্থ মানুষ হিসেবে থাকার জন্য যেটা তার প্রয়োজন, সেটাও তিনি পাচ্ছেন না। তাকে চিকিৎসকরা প্রেসক্রাইব করেছে যে ফিজিওথেরাপি দরকার, সেটাও তিনি পাচ্ছেন না।তিনি বলেন, তার (খালেদা জিয়া) রান্না যে হয়, সেই রান্নার কোয়ালিটি অত্যন্ত খারাপ হয়ে গেছে। বাইরে থেকে, তার পরিবারের থেকে, তার বাসা থেকে খাবার নিতে দেওয়া হচ্ছে না।এই কথাগুলো বলতে বলতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি। নূন্যতম যেটুকু মানবিক আচরণ, যেটা পর্যন্ত করা হচ্ছে না।

খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়ার আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আটকে রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।প্রধানমন্ত্রীকে অনেকে অনুরোধ করেছেন, দেশে-বিদেশে তার কাছে অনেকে অনুরোধ এসছে যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জামিন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা যেন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি (প্রধানমন্ত্রী ) কিছুই করননি।মঙ্গলবার কারাগারে পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করার বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পরিবারের সদস্য কারাগারে গিয়ে দেখেছেন যে, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। অসুস্থতা এমন পর্যায়ে গেছে যে, তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না। তার বাম হাত অত্যন্ত এফেক্টটেড- এটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার নিউরো সমস্যা অনেকগুণ বেড়ে গেছে। আপনারা জানেন যে, দেশনেত্রী আগে থেকেই অস্ট্রিওআর্থারাইটিজ, বেক পেইন, রক্তশূণ্যতাসহ কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০ বছর আগে হাঁটু দুটিতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, দুই চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

এখনই জরুরিভাবে তার রক্ত পরীক্ষা করা দরকার। বিশেষায়িত এমআরআই করা দরকার। তার সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।আমরা মনে করি, কোনো কাল বিলম্ব না করে অবিলম্বে তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে, আমরা বলেছিলাম গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।