বাংলাদেশে গণমাধ্যম পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ’ করছে উল্লেখ করে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনকে তথ্যভিত্তিক সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ।বুধবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার জন্য ‘বজলুর রহমান স্মৃতিপদক ২০১৭’ প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান।তিনি বলেন, গণমাধ্যম ও গণতন্ত্র একে অপরের পরিপূরক। সংবাদপত্র জনগণের মতামত ও আশা-আকাঙ্খাকে তুলে ধরে এবং গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সরকারের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়। বর্তমানে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন থেকে তাদের মতামত প্রকাশের পূর্ণ অধিকার ভোগ করছে। এই পরিবেশে সংবাদপত্র ও মিডিয়ার দায়িত্ব অপরিসীম।

দায়িত্বশীল সাংবাদিকতাই পারে একজন সাংবাদিককে পেশাগত উৎকর্ষের শীর্ষে নিয়ে যেতে। আপনারা সরকারের এমনকি আমার নিজেরও সমালোচনা করবেন। তবে মনে রাখতে হবে তা যেন তথ্যভিত্তিক হয়। কোনোভাবেই যেন একপেশে না হয়।রাষ্ট্রপতি বলেন, গঠনমূলক সমালোচনা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সংবাদ ও মতামত পরিবেশনে মিডিয়া দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে-এটাই সকলের প্রত্যাশা।দৈনিক সংবাদের সাবেক সম্পাদক বজলুর রহমানের স্মৃতির উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার’ জন্য এই পদক দেয়।ঢাকার আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি প্রয়াত বজলুর রহমানের সাথে তার পরিচয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রয়াত বজলুর রহমানের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয়ের সুযোগ হয়েছিল ৭০ এর দশকে। তার নির্মোহ ও দৃঢ়চেতা লেখনী সবসময়ই আমাকে আকৃষ্ট করত। তিনি নিজে যা বিশ্বাস করতেন তাই লিখতেন। আদর্শ ও বিশ্বাসের সাথে কখনো আপস করেননি। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিপক্ষে যেকোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তার কলম ছিল সবসময়ই সোচ্চার।

তিনি মনেপ্রাণে চাইতেন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চলার পথ মসৃণ হোক। তাই যখনই এ দেশে অশুভ শক্তির উত্থান ঘটেছে, গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত এসেছে তখনই বজলুর রহমান এর প্রতিবাদ করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বজলুর রহমান ঝুঁকি নিয়ে নির্ভেজাল গণতন্ত্রের জন্য কলম ধরেছেন ও বক্তব্য রেখেছেন।আবদুল হামিদ বলেন, সজ্জন ও রুচিশীল ব্যক্তিত্বের অধিকারী বজলুর রহমান সহজ সরল জীবন যাপন করে গেছেন। অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চেতনা এবং বস্তুনিষ্ঠতাই ছিল বজলুর রহমানের সাংবাদিকতার আদর্শ। গণতন্ত্রের পক্ষে জনমত তৈরিতে এই কলম সৈনিকের অবদান গণতন্ত্র প্রিয় মানুষের কাছে সবসময়ই অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।এবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার জন্য প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে পদক পান দৈনিক যুগান্তরের ‘সুরঞ্জনা’ পাতার বিভাগীয় সম্পাদক রীতা ভৌমিক এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি সোমা ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী, পদক প্রদান জুরি বোর্ডের সদস্য সারা যাকের প্রমুখ।এর আগে রাষ্ট্রপতি জাদুঘরে পৌঁছে শিখা চির অম্লানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অনুষ্ঠান শেষে জাদুঘরের গ্যালারি পরিদর্শন করেন তিনি।