পেঁয়াজ বীজ চাষে হাসি ফুটেছে ফরিদপুরের কৃষকদের। এবছর বাম্পার ফলনের সাথে দাম বেশি হওয়ায় বীজ চাষে লাভবান হচ্ছেন তারা। আর তাই একে তুলনা করছেন সোনার সঙ্গে। ে পঁয়াজ বীজের দানা কালো হওয়ায় চাষীরা একে ‘কালো সোনা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বৃষ্টি শুরুর আগেই চাষীরা তাদের কালো সোনা ঘরে তুলতে পারায় বেজায় খুশি। এদিকে ফরিদপুরে উৎপাদিত এই কালো সোনা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

ফরিদপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে আড়াই হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে পেঁয়াদ বীজ।কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় জেলার প্রতিবছরই বাড়ছে পেঁয়াজ বীজের চাষ। চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় ১ হাজার ১শ ২৭ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে।ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ কিংকর চন্দ্র দাস বলেন, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর অঞ্চলে চার হাজার মণের বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদিত হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ২৮ কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ১ হাজার ১শ ২৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বীজ শুধু ফরিদপুর জেলাতেই উৎপাদন হবে। তিনি জানান, সরকারের বিএডিসির সংগৃহিত মোট পেঁয়াজ বীজের ৬০ শতাংশ ফরিদপুর জেলা থেকে সংগ্রহ করে থাকে।সরেজমিনে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ও ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার কৃষান ও কৃষানীরা পেঁয়াজ বীজ ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে।

অম্বিকাপুর এলাকার গোবিন্দপুর মাঠের কৃষক হারিজ মোল্লা, জুলেখা বেগম, ফাতেমা খানমের মতো আরো অনেকেই জানালেন, এই মৌসুমে আমরা বীজ তোলার কাজ করে থাকি। বিভিন্ন চাষীর পেঁয়াজ বীজ তুলে দিয়ে মুরিকাটা পেঁয়াজ পেয়ে থাকি। যা পাই তা দিয়ে সংসারের সারা বছরের পেঁয়াজের চাহিদা মিটে যায়।ওই মাঠে গিয়ে দেখা যায়, অনেক কৃষক এসেছে রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর জেলা থেকে। এদের মধ্যে আব্দুর রহমান, হাফিজুর শেক জানান, পেঁয়াজ বীজ তোলার সময় আমাদের মতো অনেকেই ফরিদপুরে আসে জন বিক্রীর কাজে। এই সময়টায় ভাল আয় হয় আমাদের।

এলাকার পেঁয়াজ বীজ চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হয়েছে এবছর। বিঘা প্রতি তিন মণের বেশি বীজ উৎপাদন হবে। বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি মণ পেঁয়াজ বীজের দাম ৭০ থেকে ৮০ হাজারের অধিক টাকা। আর খরচ হয়েছে প্রতি বিঘায় ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে বিঘা প্রতি দেড় লাখ টাকার বেশি লাভের আশা করছেন কৃষকরাফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামের বিএডিসির তালিকাভূক্ত পেঁয়াজ বীজ চাষি মো. আকবর খান বলেন, এবছর চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করছি। খুব ভালো হইছে ক্ষেত। আশা করছি ১২ মণের বেশি বীজ উৎপাদন হবে।

একই গ্রামের বীজ চাষী মো. বক্কার খান বলেন, পেঁয়াজ বীজের কালো দানা আমাদের এলাকায় ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাজারে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পেঁয়াজ বীজ আমাদের কাছে সোনার মত। তিনি জানান, আমাদের এই অঞ্চলের বীজ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকার বিএডিসির মাধ্যমে সরবরাহ করছে। তিনি দাবি করেন, বিএডিসি প্রতিবারের ন্যায় এবারও যেন সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে এই বীজ সংগ্রহ করে। তবেই চাষীরা লাভবান হবে এবং উৎসাহিত হবে এই বীজ চাষাবাদে।

গোবিন্দপুর গ্রামের আরেক পেঁয়াজ বীজ চাষী শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাগো আবহাওয়া বীজ উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। এবছর জমিতে যে ফলন দেখছি তাতে বাম্পার উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। তিনি বলেন, আগামীতে আরও জমিতে ‘কালো সোনার’ চাষ করবো।তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ব্যাংকগুলো শুধু জমির মালিকদের লোন দেয়, আমার মতো বর্গা চাষীদের লোন দেওয়া হয় না। আমরা বাধ্য হয়ে এনজিও’র কাছ থেকে অধিক সুদে ঋন নিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ করি। সরকার বর্গা চাষিদের ঋন দেওয়ার ব্যবস্থা করলে অন্য জমির মালিকদের মতো আমরাও আরো বেশি লাভের মুখ দেখতামফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, ‘এ বীজ উৎপাদন করে রবি মৌসুমে চাষীরা অধিক মুনাফা লাভ করে, এ কারনে এই ফসলকে কালো সোনা হিসাবে অভিহিত করা হয়। তিনি জানান, কৃষি বিভাগ জেলার পেঁয়াজ বীজ চাষীদের নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে, যে কারনে দিন দিন পেঁয়াজ বীজের আবাদ বাড়ছে। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ বিএডিসির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও এ বীজ চাষে অনেক বেকার যুবকরা তাদের কর্মস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে। কারণ অল্প খরচে অধিক মুনাফা লাভ করার সহজ উপায় হলো পেঁয়াজ বীজ চাষ। ফরিদপুর সদর, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সদরপুর ও সালথা উপজেলার পেঁয়াজ বীজ চাষীদের এখন আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।