মাদক কোথা থেকে আসে-তার উৎস খুঁজে বের করে তা বন্ধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ব্লম বার্নিকাট।বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।মাদকবিরোধী অভিযানে সংঘটিত বন্দুকযুদ্ধের মধ্যে যদি কোন ঘটনা ন্যায়সঙ্গতভাবে না ঘটে থাকে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বুধবার সচিবালয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লম বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

তিনি বলেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট সচিবালয়ে এসে সাক্ষাৎ করে মাদকবিরোধী অভিযান সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তাকে পুরো অভিযানের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে জানানো হয়েছে। তিনি জানতে চেয়েছেন, এ ঘটনায় কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হচ্ছেন কিনা।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ক্রসফায়ারে কেউ মারা যাচ্ছে না। সরকারের পুলিশ বাহিনী কাউকে অহেতুক গুলি করছে না। সরকারের পাঁচটি এজেন্সির তালিকা অনুযায়ী যাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে ধরে এনে আইনের হাতে সোপর্দ করতেই তার বাড়িতে যায়। যারা স্বেচ্ছায় পুলিশের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করে তাদেরকে কখনও আদালতে পাঠানো হচ্ছে কখনও আবার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কেউ নিরপরাধ হলে তাকে ছেড়েও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে তাদের ওপর ফায়ার করছে। পুলিশ তখনই আত্মরক্ষার্থে গুলি করছে। যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে তারা অবৈধ বাণিজ্য রক্ষা করতে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছে। তারপরেও সব হত্যাকা-েরই নির্বাহী তদন্ত (এক্সিকিউটিভ ইনকোয়ারি) হবে। এখানে কোনও কিছুর ভায়োলেট হচ্ছে না। আমরা একজনকেও তুলে আনিনি। এ ধরনের কোনও অভিযোগ আমরা এখনও পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবো।

আমরা তাকে জানিয়েছি, এসময় কেউ যদি কোনও ঘটনা অন্যায়ভাবে, ন্যায়সঙ্গতভাবে না করে থাকেন আর কেউ যদি অন্যায়ভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্ত অনুযায়ী সেটারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বিধান রয়েছে, সেটাও আমরা করছি। আমরা এটাও স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি যেখানে অবৈধ ব্যবসা, সেখানেই অবৈধ অস্ত্র, সেখানেই সন্ত্রাসীরা জড়ো হয়। তারা এই গানফায়ার বা অবৈধ অস্ত্রের যেটা করা হয় সেটা করার চেষ্টা করে আত্মরক্ষার্থে।তিনি বলেন, ‘তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) যেটা জানতে চেয়েছে, আমরা কী কী করেছি। কতজন লোক নিহত হয়েছে, আমরা তাকে পিকচার দিয়েছি। এর মধ্যে কারাগারে কতজন অন্তরীণ হয়েছেন তার তালিকা দিয়েছি। এছাড়াও আমরা সচেতনতামূলক যেসব কাজ করছি যেমন সামাজিক আন্দোলন করছি, ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে সারা বাংলাদেশে জানান দিচ্ছি, মসজিদের ইমাম সাহেব আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, সবাই একসঙ্গে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি এটাও আমরা তাকে জানিয়েছি।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘মাদকের সঙ্গে জড়িত যেই হোক, সে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীই হোক বা সে নির্বাচিত প্রতিনিধিই হোক, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,‘সরকার কাউকেই হত্যার জন্য আমাদের নির্দেশ দেননি। হত্যা না করে অন্য কিছু করা যায় কিনা, বার্নিকাট এমন পরামর্শও আমাদের দিয়েছেন।

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ব্লম বার্নিকাট বলেছেন, সরকারের চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে যারা নিহত হয়েছে তাদের প্রত্যেকের আইনের সুযোগ পাওয়ার অধিকার আছে। বিনা বিচারে একজন মানুষ মারার অর্থ হচ্ছে ওই পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে যাওয়া। মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স আমরাও চাই। তবে অভিযুক্ত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা উচিত বলে আমরা মনে করি। মূল অপরাধী এবং এর উৎস বন্ধ করা দরকার। মাদকের উৎস বন্ধ না করে এ অভিযান পরিচালনা করলে তা সফল হবে কিনা তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, শুধু বন্দুকযুদ্ধে যারা নিহত হচ্ছে আপনারা তাদের বিষয়টি দেখছেন। কিন্তু এসময় মাদকের সঙ্গে অভিযুক্ত ১৩ হাজার অপরাধীকে সাজা দিয়ে জেলখানায় ঢোকানো হচ্ছে। বাংলাদেশে কারাগারগুলোয় ধারণ ক্ষমতা ৩৫ হাজার। কিন্তু বর্তমানে বন্দি অবস্থান করছে ৮৫ হাজার।তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ জেলখানা থেকে বেরিয়ে ইতোমধ্যে দেশের বাইরে চলে গেছেন এমন কোনও তথ্য আপনার জানা আছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জোসেফের ২০ বছরের সাজা হয়েছিল। হয়তো ২০ বছর শেষ হতে এক বছরের কিছু সময় বাকি ছিল। এই সময়টুকু মাফ চেয়ে এবং কিছু অর্থদন্ড পরিশোধ করে রাষ্ট্রপতির কাছে মার্সিপিটিশন করেছিলেন তিনি। জোসেফ অসুস্থ, দেশের বাইরে চিকিৎসা করাতে যেতে চান বলে এই পিটিশনে উল্লেখ ছিল। রাষ্ট্রপতি এটি মাফ করে দিয়েছেন বলে আমি জেনেছি।