মানবাধিকারকর্মীদের অব্যাহত সমালোচনার মধ্যেও মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।চলমান অভিযানে নিহতের ঘটনাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সমর্থনের প্রকাশও ঘটিয়েছেন তিনি।ভারত সফর করে আসা প্রধানমন্ত্রী বুধবার বিকালে গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলনে এলে সাংবাদিকরা তাকে মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে প্রশ্ন করেন।

মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে হতাহতের ঘটনায় সমালোচনা করে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, অভিযানে আইনের চেয়ে বন্দুকের ব্যবহার বেশি ঘটছে।বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, মাদক সমাজে একটা ব্যাধির মতো, আপনারাই পত্রপত্রিকায় লিখেছেন এটা। আপনারা কি চান অভিযান চলুক, না কি বন্ধ হয়ে যাক?আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে সমর্থন রেখে সরকার প্রধান বলেন, খুব স্বাভাবিক যে এই ধরনের অভিযান চালাতে গেলে কিছু ঘটনা ঘটতেই পারে।নিরাপরাধ কেউ এই অভিযানের শিকার হচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত যে কয়টা ঘটনা হয়েছে, মনে হয় না একটাও নিরীহ ব্যক্তি শিকার হয়েছে।

গণমাধ্যমে গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলোকে বাদ দিয়ে শুধু নিহতের ঘটনাগুলোকেই সামনে আনা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।অভিযানে এই পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।মাদকের বিস্তারে যাদের ভূমিকা রয়েছে, তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে- এক সাংবাদিক জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, কাকে গডফাদার বলছেন?তবে যে যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, কাউকে ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আমি যখন যা ধরি, ভালো করেই ধরি।এই অভিযান হঠাৎই শুরু হয়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য নিয়ে নজরদারি চালিয়ে এরপরই এই অভিযান চালানো হচ্ছে। মাদক নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান সাঁড়াশি অভিযান চলবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মাদকের সঙ্গে যে-ই জড়িত থাক, গডফাদার-ডন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমি যখন ধরি, ভালো করেই ধরি।

মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে অভিযোগের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদক সমাজে একটা ব্যাধির মতো। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে দীর্ঘদিন কাজ করেছে। আপনারা (সাংবাদিক) নিজেরাও মাদকের বিরুদ্ধে লিখেছেন, এখন যে-ই অভিযান শুরু করলাম, আবার এটা নিয়ে কথা উঠলো। এটা কেন? আর কে গডফাদার, ডন, কে কার ভাই -আত্মীয়, এসব আমি কখনো দেখিনি, দেখবো না। কেউ ছাড় পাবে না। তিনি বলেন, এ অভিযানে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের ওপর গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু কোনো পত্রিকা কি লিখেছে তা? তা কিন্তু বলা হয় না।আর যখন কোথাও পুলিশ- র‌্যাব অভিযানে যায়, সেখানে যদি কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে, কোনো নিরীহ ব্যক্তি শিকার হয়, তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেবো। যদি বলেন, ভেজালবিরোধী-মাদকবিরোধী অভিযান বন্ধ করে দিই। ছেলে মাকে, বাবাকে হত্যা করছে মাদকের কারণে। এ ধরনের অভিযান চালাতে গেলে কিছু ঘটনা ঘটে।ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানমন্ত্রীকে এ সফরে ডি.লিট ডিগ্রিতে সম্মানিত করে।এজন্য অভিনন্দন জানিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আপনি পুরস্কার আরও পেয়েছেন, আরও পাবেন, কিন্তু যে পুরস্কারের প্রাপ্য আপনি, তা এখনও পাননি, সেটা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। এজন্য এখন থেকেই প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানাই। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো পুরস্কারের প্রতি আমার প্রবৃত্তি নেই। বরং টাকা থাকলে আমার গরিবের মাঝে বিলিয়ে দিতে চাই। সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, এতে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কথা হয়েছে কি-না, প্রশ্ন করা হলে সরকারপ্রধান বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সফরে গিয়েছি বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনে, সেদিকেই আমাদের গুরুত্ব ছিল। আর তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আমাদের দু’দেশের যৌথ নদী কমিশন আছে, সেখানে আলোচনা চলছে। এই সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে। তার সফর নিয়ে বিএনপি নেতাদের সমালোচনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তারা বলে, আমরা নাকি এক বালতি পানিও আনতে পারিনি। অথচ গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি আমরাই করেছি। যারা মুচলেকা দেয়, আমি সে দলে নই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমন্ত্রণে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ও সেখানে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করতে ২৫ ও ২৬ মে কলকাতা সফর করেন শেখ হাসিনা। সফরে বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে যোগদান ও বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনে তার সঙ্গে ছিলেন মোদী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী যান পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে। যেখানে জন্ম নেওয়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে’র বিশেষ সমাবর্তনে যোগ দিয়ে সম্মানসূচক ‘ডি. লিট’ ডিগ্রি গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এরপর কলকাতায় ফিরে নগরীর ভবানীপুরে ‘নেতাজী ভবন’ পরিদর্শনে যান শেখ হাসিনা। দু’দিনের সফর শেষে ২৬ মে রাতে ঢাকায় ফিরে আসেন সরকারপ্রধান।