দুই বাসের পাল্লায় নিহত কলেজছাত্র রাজীব হাসানের দুর্ঘটনার দায় নিরূপণ করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে হাই কোর্ট।তিন সদস্যের এই কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে বুয়েটের পূরকৌশল বিভাগের এক শিক্ষককে কমিটিতে রাখতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ কমিটি গঠনের আদেশ দেয়।কমিটিকে ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী আদালতের পরবর্তী আদেশ হবে ৪ জুলাই।এ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায় সাংবাদিকদের বলেন, স্বজন পরিবহন ও বিআরটিসির দুটি বাসের রেষারেষিতে এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ীকে সেটি চিহ্নিত করতে এবং দায় অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করে দিয়েছে হাই কোর্ট।গত ৩ এপ্রিল ঢাকার কারওয়ান বাজারে দুই বাসের রেষারেষিতে বিআরটিসির যাত্রী রাজীবের ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়; মাথায়ও জখম পান তিনি।দুই বাসের চাপায় ঝুলতে থাকা রাজীবের হাতের ছবি সংবাদমাধ্যমে এলে ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে ৪ এপ্রিল হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, তাতে একটি রুল আসে।যাত্রীদের চলাচলে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকরের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনে আইন সংশোধন ও নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।ওই রুল শুনানির আগেই ১৭ এপ্রিল রাজীবের মৃত্যু হলে অ্যাডভোকেট কাজল ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আদালতে একটি সম্পূরক আবেদন করেন।

এরপর গত ৮ মে রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের মালিককে নির্দেশ দেয় বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চ।ওই এক কোটি টাকার অর্ধেক, অর্থাৎ ২৫ লাখ টাকা করে মোট ৫০ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য দুই পরিবহনের মালিককে এক মাসের সময় বেঁধে দেয় হাই কোর্ট।এর মধ্যে গত ১০ মে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)।আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী নিয়মিত বেঞ্চে আবেদনটি পাঠিয়ে দিলে ২২ মে হাই কোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করে প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে দুই বাস কর্তৃপক্ষের মধ্যে কারা দায়ী এবং ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে একটি ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনে হাই কোর্টকে নির্দেশ দেয়।এই স্বাধীন কমিটি যে প্রতিবেদন দেবে, তা মূল্যায়ন করে রাজীবের দুই ভাইয়ের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে দিতে হাই কোর্টকে নির্দেশ দেওয়া হয় আপিল বিভাগ থেকে। তার পরিপ্রেক্ষিতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হল।