মাদকবিরোধী অভিযানে কক্সবাজারে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের সঙ্গে টেলিফোনে ‘শেষ কথোপকথনের’ যে অডিও রেকর্ড তার পরিবার প্রকাশ করেছে, তাতে পুরো মাদকবিরোধী অভিযান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

চারটি ক্লিপ মিলিয়ে ১৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ওই অডিও রেকর্ডে কয়েকজনের কণ্ঠ, গুলির শব্দ আর চিৎকার সাংবাদিকদের শুনিয়ে একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগম অভিযোগ করেছেন, তার স্বামীকে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে।একরামের পরিবারের দেওয়া ওই অডিও স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। তার বড়ভাই নজরুল ইসলাম বলেছেন, একরামের ফোন খোলা ছিল বলে এ প্রান্তে পুরো ঘটনাপ্রবাহ রেকর্ড হয়েছে ফোনের অটোরেকর্ডারে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এ ধরনের সব হত্যাকা-ের বিচারিক তদন্ত হওয়া দরকার।

আইনকে পাশ কাটিয়ে’ কাজ করতে গেলে যে বিপদ ঘটতে পারে, একরামের ঘটনায় তা ‘স্পষ্ট হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান।আর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান একে বর্ণনা করেছেন ন্যায় বিচার, আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের জন্য ‘অশনি সংকেত’ হিসেবে।সারা দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে ১৩ দিনে নিহত ১২২ জনের মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক একজন, যিনি গত ২৬ মে রাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য। টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুলকে র‌্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণনা করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী’ এবং ‘ইয়াবার শীর্ষ গডফাদার’ হিসেবে। তবে তার পরিবার বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগম তার দুই মেয়েক নিয়ে বৃহস্পতিবার কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে অভিযোগ করেন, জমি সংক্রান্ত বিষয়ের কথা বলে সেই রাতে তার স্বামীকে ডেকে নিয়ে যায় একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা। পরে মেরিন ড্রাইভে নিয়ে একরামকে গুলি করে হত্যা করা হয়।চারটি অডিও ক্লিপ সংবাদ সম্মেলনে শুনিয়ে আয়েশা বলেন, সেখানে শুরুতে মেয়ের সঙ্গে একরামের কথা, পরে তার নিজের কণ্ঠ রয়েছে। এরপর ও প্রান্তে গুলির শব্দ, পুলিশের সাইরেন, চিৎকার-হাঁকডাক ও গালিগালাজ এবং এ প্রান্তে নারী ও শিশুদের আহাজারি মিলিয়ে রোমহর্ষক এক পরিস্থিতির চিত্র পাওয়া যায় ওই অডিও রেকর্ডে।এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে র‌্যাবের পরিচালক (মিডিয়া) মুফতি মাহমুদ খান কে বলেন,অডিওটা আমরা শুনেছি। অনেক রকমের অডিও হয়, বিষয়টি আমরা দেখছি।

আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমি অডিওটি এখনও শুনিনি। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছে। যেহেতু এরকম একটি কথা এসেছে, এটা তো ইনকোয়ারি ছাড়া কিছু করা যাচ্ছে না। আমি বিষয়টি ইনেকোয়ারি করে দেখব।তদন্তে কেউ যদি দোষী সাবস্ত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন মন্ত্রী।