বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম। -‘পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোন পূণ্য নেই; কিন্তু আসল কল্যাণ হচ্ছে একজন মানুষ ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর, পরকালের ওপর।’ ফেরেস্তাদের ওপর, কেতাবসমূহের ওপর, নবী ও রাসূলগণের ওপর এবং আল্লাহ্র দেয়া কেতাবসমূহের ওপর। নবী ও রাসূলগণের ওপর এবং আল্লাহ্র দেয়া মাল সম্পদ তাঁরই ভালবাসা পাইবার মানসে আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকীন ও পথিক মুসাফিরের জন্য ব্যয় করবে, সহায্যপ্রার্থী (অভাবগ্রস্ত দুস্থ) মানুষদের (দাস ও দাসত্বের) বন্দিদশা থেকে মুক্তি ও মুক্ত করার কাজে অর্থ ব্যয় করবে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে, প্র“তিশ্র“তি দিয়ে তা পালন করলে, অর্থ সঙ্কটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য্যধারণ করলে, (মূলত:) এরাই হচ্ছে সত্যবাদী এরাই হচ্ছে প্রকৃত আল্লাহ্ভীরু মানুষ।’ -(সূরা- বাকারা, আয়াত নং- ১৭৯)।

ওপরের আয়াতে মহান আল্লাহ্পাক তার বান্দাকে ঈমান আনার জন্য সূত্র বাতলিয়ে দিয়েছেন এবং যারা ওই সূত্র সঠিকভাবে পালন করবে তাদের জন্য আছে মহাশান্তি এবং তার কোন পরিসমাপ্তি নেই। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্তায়ালা নিজেই পবিত্র কোরানের সূরা বাকারা এর ২৫ নং আয়াতে এরশাদ করেন- ‘অত:পর যারা ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে তাদের তুমি (হে নবী) সুসংবাদ দাও এমন এক জান্নাতের, যার নিচ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হতে থাকবে; যখনই তাদের কোনো একটি ফল দেয়া হবে তখনই তারা বলবে; এ ধরনের (ফল)-তো ইতোপূর্বে আমাদের দেয়া হয়েছিল, (মূলত:) তাদের এ ধরনের জিনিষই সেখানে দেয়া হবে; তাদের জন্যে (আরো) সেখানে থাকবে পবিত্র সঙ্গিনী ও সহধর্মীনী এবং তারা সেখানে অনন্তকাল ধরে অবস্থান করবে।’
মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর ঈমানদার বান্দার কাছে অঙ্গীকার করেছেন, তাঁর বান্দাকে পুরস্কৃত করার। মূলত: বেহেস্ত ও দোজখের সম্পূর্ণ ব্যাখা কোন বান্দার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা বেহেস্তবাসী হবেন তারা অপরিসীম এবং অনন্তকাল ধরে সীমাহীন সুখ-শান্তি ভোগ করতে থাকবেন।

সহীহ্ হাদীসের আলোকে জান্নাত সম্পর্কে বর্ণনায় এসেছে, নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘জান্নাতবাসিনী কোন হুর যদি এ পৃথিবীর দিকে একবার উঁকি দিতো তা হলে পৃথিবী ও তার মধ্যে যা কিছু আছে (তার রুপের কারণে) সবকিছু আলোকিত হয়ে যেত এবং সব পৃথিবী সুগন্ধিতে ভরে যেত এবং তাদের একটা ওড়নার মুল্য পৃথিবী ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’- (বুখারী ও মুসলিম)।

বুখারী ও মুসলিম শরীফ হতে আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে প্রবেশকারী প্রথম দলটির চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল, তার পর যে দলটি প্রবেশ করবে তাদের চেহারা হবে আকাশে দীপ্তমান সর্বাধিক উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায়। তথায় তারা ফেলবে না কোন থু থু। থাকবে না তাদের নাকের ময়লা। অসুখ-বিসুখ এবং প্রসাব-পায়খানা। যা খাবে তা ঢেকুর ও ঘামে হজম হয়ে যাবে। তাদের শরীর হতে মেশকো-আম্বরের সুঘ্রাণ বের হবে। তাদের বর্তনগুলো হবে স্বর্ণের, চিরুনীগুলো হবে স্বর্ণের ও রৌপ্যের। আর সুগন্ধির জন্য তাদের আংটিগুলো হবে উদ-কাঠের। তাদের থাকবে দু’জন করে স্ত্রী এবং তাদের রুপ লাবণ্য এরুপ হবে যে, রুপের কারণে তাদের পায়ের গোছার হাড্ডির ভেতরের মজ্জা পর্যন্ত দেখা যাবে। তাদের মধ্যে থাকবে না পরস্পর পরস্পরের শত্র“তা এবং মতবিরোধ। তাদের আত্মা হবে এক অভিন্ন এবং তারা সকলে সকাল সন্ধ্যা আল্লাহতায়ালার তাসবীহ পড়তে থাকবে। সকলেই আদি পিতা আদমের দেহাকৃতি লাভ করবে। আকাশের দিকে উচ্চতায় হবে ষাট হাত লম্বা।’

-রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, ‘যখন জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবেন, আল্লাহ্ তায়ালা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদের আরো কিছু পাইবার ইচ্ছে আছে কি? আজ তোমরা যা চাইবে তাইই পাবে।’ তখন তারা বলবে, ‘হে আমাদের আল্লাহ্ তুমি আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছ। জান্নাতবাসী করিয়েছ এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি দিয়েছ। আমাদেরকে যা দিয়েছ, আর কোন জিনিস আমাদিগকে দেবে? তখন মহান রাব্বুল আলামিন পর্দা ওঠাবেন এবং আল্লাহ তায়ালাকে তারা দেখতে থাকবে। আল্লাহর দীদার হতে আর কি উৎকৃষ্ট হতে পারে?’-(মুসলিম শরীফ)। জান্নাতে সবচেয়ে ও পাওয়া হল মহান আল্লাহপাকের দীদার। আল্লাহর দীদার বান্দা পাইবার পরে সব কিছু ভুলে যাবে।

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে ১০০টি দরজা আছে এবং এক একটি দরজার দূরত্ব হবে আসমান ও যমীনের দুরত্বের সমান। জান্নাতুল ফেরদাউস হবে- সবার ওপরে। তা হতে চারটি নহর প্রবাহিত হচ্ছে। তার ওপর রয়েছে আল্লাহর আরশ। জান্নাতের মধ্যে সব চাইতে উচ্চ মর্যাদার হবে জান্নাতুল ফেরদাউস। আর যখন তোমরা আল্লাহর দরবারে জান্নাত চাইবে, তখন জান্নাতুল ফেরদাউস কামনা করবে।’ -(বুখারী ও মুসলিম)।

বেহেস্ত সম্পর্কে আল্লাহপাক সূরা আদদাহর এর রুকুতে এরশাদ করেছেন, ‘১. কালের পরিক্রমায় কোন একটি সময় মানুষের ওপর দিয়ে এমন অতিবাহিত হয়েছে কি- যখন সে উল্লেখ করার মতো কোন বিষয়ই ছিল না? ২. আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি (নারী পুরুষের) মিশ্রিত শুক্র থেকে। যেন আমি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন করে পয়দা করেছি। ৩.আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি, সে চাইলে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় কাফের হয়ে যাবে। ৪. কাফেরদের জন্য আমি শেকল, বেড়ি ও আগুনের লেলিহান শিখার ব্যবস্থা করে রেখেছি। ৫. নিঃসন্দেহে যারা সৎকর্মশীল তারা (জান্নাতে) এমন সূরা পান করবে যার সাথে (সুগন্ধযুক্ত) কর্পূর মেশানো থাকবে। ৬. এ পানি হবে প্রবাহমান ঝর্ণা। যার (প্রবাহ) থেকে আল্লাহর নেক বান্দারা সদা পানীয় গ্রহণ করবে। তারা এ (ঝর্ণাধারা)-টা প্রবাহিত করে নেবে। ৭. যারা ‘মানত’ পূরণ করে এবং এমন এক দিনকে ভয় করে, যে দিনের ধ্বংসলীলা হবে সুদূরপ্রসারী। ৮. এরা শুধু আল্লাহর ভালবাসায়, মিসকীন, এতিম ও কয়েদীদের খাবার দেয়। ৯. (খাবার দেয়ার সময় বলে,) আমরা শুধু আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য তোমাদের খাবার দিচ্ছি, (বিনিময়ে) আমরা তোমাদের কাছ থেকে কোন রকম প্রতিদান চাই না, না (চাই) কোনো রকম কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। ১০. আমরা তো সে দিনটির ব্যাপারে আমাদের প্রতিপালককে ভয় করি। যে দিনটি হবে অতীব ভয়ঙ্কর। ১১. আল্লাহতায়ালা আজ তাদের সে দিনের যাবতীয় অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন। তিনি তাদের সজীবতা ও আনন্দ দান করবেন। ১২. এরা যে কঠোর ধৈর্য্য প্রদর্শন করেছে তাদের জান্নাত ও রেশমী বস্ত্র দান করবেন। ১৩. তারা (সুসজ্জিত) আসনে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে সূর্যের (তাপ) যেমন তারা দেখবে না, তেমনি দেখবে না কোনরকম শীত। ১৪. তাদের ওপর (জান্নাতে) তার গাছের ছায়া ঝুঁকে থাকবে। তার ফলপাকড়াকে তাদের আয়ত্ত্বাধীন করে দেয়া হবে। ১৫. তাদের (সামনে খাবার) পরিবেশন করা হবে রৌপ্য নির্মিত পাত্রে আর কাচের পেয়ালায় এবং তা হবে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ। ১৬. রূপালী স্ফটিক পাত্র, পরিবেশনকারীরা যথাযথভাবে পূর্ণ করে রাখবে। ১৭. সেখানে তাদের এমন এক সূরা পান। যার সাথে মেশানো হবে ‘যানজাবীল’। ১৮. তাতে রয়েছে (জান্নাতে) এক (অমিয়) ঝর্ণা, যার নাম রাখা হয়েছে ‘সালসাবীল’। ১৯. তাদের চারদিকে ঘোরাঘুরি করবে একদল কিশোর বালক, যারা চিরকাল কিশোর থাকবে, যখনই তুমি তাদের দিকে তাকাবে মনে হবে এরা বুঝি কতিপয় ছড়ানো ছিটানো মুক্তা। ২০. সেখানে যখন যেদিকে তুমি তাকাবে, দেখবে শুধু নেয়ামতেরই সমারোহ। আরও দেখবে এক বিশাল বিশাল সাম্রাজ্য। ২১. বেহেস্তবাসীদের পরনের কাপড় হবে অতি সুক্ষ্ম সবুজ রেশম ও মোটা মখমল, তাদের পরানো হবে রুপার কঙ্কন, (তাদের মালিক সেদিন তাদের শরাবান তহুরা পান করাবেন। ১২. তাদের মালিক বলবেন, হে আমার বান্দারা,) এ হচ্ছে তোমাদের জন্য (আমার) পুরস্কার এবং তোমাদের (যাবতীয়) চেষ্টা সাধনার স্বীকৃতি।

জান্নাতের বর্ণনা কোন সৃষ্টিজীবের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়, যা পূর্বেও বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করা প্রযোজন। আবু হুরায়রা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন, ‘আল্লাহ্তায়ালা বলেন, ‘আমি আমার সৎ বান্দাদের জন্য এমন রহমত ও নিয়ামত প্রস্তুত রেখেছি যা কেউ চোখে দেখেনি, কানে শুনেনি এবং অন্তরে কল্পনাও করেনি।’ -(বুখারী)।
মুগীরা ইবনে শু’বা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘হযরত মুসা (আ.) তার মহিমান্বিত প্রতিপালককে জিজ্ঞাসা করেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! সর্বনিু পর্যায়ের জান্নাতীদের মর্যাদা কি?’ উত্তরে মহান আল্লাহ্পাক বলেন, ‘সর্বনিু পর্যায়ের জান্নাতী হ’ল ওই ব্যক্তি যে সমস্ত জান্নাতীর জান্নাতে চলে যাওয়ার পরে আসবে। তাকে বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ করো।’ সে বসবে, ‘হে আল্লাহ্! কোথায় যাবো? সকলেতো নিজ নিজ স্থান দখল করে নিয়েছে এবং নিজ নিজ সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে।’ তাকে বলা হবে, ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট হবে যে, তোমাকে এতোটা দেয়া হবে যতোটা দুনিয়ার কোনো বাদশাহ্র ছিলো?’ সে উত্তরে বলবে, ‘হে আমার আল্লাহ্! হ্যাঁ আমি তাতেই সন্তুষ্ট হবো।’ তখন আল্লাহ্ রাব্বুল আল্ আমিন বলবেন, ‘যাও তোমাকে ততটা দেয়া হল এবং আরো ততটা, আরও ততটা, আরও ততটা ও আরও ততটা।’ সে তখন বলবে, ‘হে আমার আল্লাহ্ যথেষ্ট হয়েছে। আমি এতেই সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম।’ আল্লাহপাক বলবেন, ‘যাও, আমি তোমাকে এগুলো সবই দিলাম এবং আরো দশগুণ দিলাম। তোমার জন্য আরও রয়েছে, যা তোমার মন চাইবে এবং তোমার চোখ শীতল হবে। সে বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমারতো আশা পূর্ণ হয়ে গিয়েছে এবং আমি খুবই খুশী।’

মুসা (আ.) তখন বলবেন, ‘হে আল্লাহ্! তা হলে সর্বোচ্চ পর্যায়ের জান্নাতীদের অবস্থা কি? উত্তরে আল্লাহপাক বলেন, ‘তারা ওইসব লোক যাদের কারামত আমি স্বহস্তে বপন করেছি এবং তার ওপর আমার মোহর লাগিয়েছি। অতএব তা কেউ দেখতে পায়নি। না শুনতে পেরেছে, না কেউ অন্তরে ধারণা করেছে। এর স্বরূপ মহামান্বিত আল্লাহ্র কিতাবে উল্লেখিত সূরা আস্ সাজেদার ১৭ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। -(মুসলিম শরীফ)।

জাহান্নাম সম্পর্কে পাক কালামে যা বর্ণিত রযেছে তা হতে কয়েকটি উল্লেখ করা হল : পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারা এর ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, ‘ওই আগুন হতে বেঁচে থাকো যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর। যা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সে আগুনকে সকলে ভয় করে চলো।’ সূরা-আন নিসা এর ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘যখনই তাদের চামড়া একবার আগুনে জ্বলে যাবে, তৎক্ষণাৎ আমি তাদের পূর্বের চামড়ার স্থলে নতুন চামড়া সৃষ্টি করে দেবো, যেন তারা কেবল আযাবই ভুগতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’। সূরা ইবরাহীম এর ১৬ ও ১৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ‘তার একটু পেছনেই রয়েছে জাহান্নাম। (যেখানে) তাকে গলিত পুঁজ পান করানো হবে’। ১৭. সে অতি কষ্টে তা গলাধকরণ করতে চাইবে। কিন্তু গলাধকরণ করা তার পক্ষে কোনমতেই সম্ভব হবে না, চারদিক থেকেই তার ওপর মৃত্যু আসবে। কিন্তু সে কোনমতেই মরবে না; বরং তার পেছনে থাকবে কঠোর আযাব।

জাহান্নামে এতো কঠোরতম আযাব রক্ষিত আছে, যাতে জাহান্নামীরা সাজা খাটতে বাধ্য হবে কিন্তু মরবে না। আজীবন তাদেরকে জাহান্নামের কষ্ট ভোগ করতে হবে। এখানে আরও একটি পাক কোরআনের আয়াত প্রযোজ্য। আল্লাহপাক বলেন, ‘নি:সন্দেহে যাক্কুম বৃক্ষই গুরুতর অপরাধী লোকদের খাদ্য হবে। যা তৈলের ন্যায় কুৎসিত হবে। আর তা উদরের মধ্যে ফুটতে থাকবে। যেরূপ উত্তপ্ত পানি ফুটতে থাকে। (তখন ফেরেস্তাদের প্রতি আদেশ হবে যে,) তাকে ধরো, তারপর জাহান্নামের মধ্যস্থলে হেঁচড়াইয়ে নিয়ে যাও। তারপর তার মাথার ওপর যন্ত্রণাদায়ক গরম পানি ঢালো। (তাকে বিদ্রুপ করা হবে যে,) আস্বাদন করো, তুমিতো মহাপরাক্রান্ত সম্মানিত ব্যক্তি। তা হচ্ছে সে বস্তু যা সম্বন্ধে সন্দেহ এবং অবিশ্বাস করতো।’ -(সূরা- আদ্-দুখান: আয়াত নং ৪৩-৫০)।

জাহান্নাম সম্পর্কে হাদীসে যা বর্ণনা করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এ দুনিয়ার আগুনের তাপের চেয়ে জাহান্নামের আগুনের তাপ ৬৯ গুণ অধিক হবে।’ -(বুখারী ও মুসলিম)। নুমান ইবনে বাশীর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জাহান্নামীদের মধ্যে সহজতর শাস্তি ওই ব্যক্তির হবে, যাকে আগুনের ফিতাসহ দুটি জুতা পরানো হবে। এতে তার মাথার মগজ এমনিভাবে টগবগ করে ফুটতে থাকবে। যেমনিভাবে তামার পাত্রে পানি ফুটতে থাকে। সে ব্যক্তি ধারণা করবে তার অপেক্ষা কঠিন আজাব আর কেউ ভোগ করতেছে না। অথচ সে হবে সর্বাপেক্ষা সহজতর শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি।’ -(বুখারী ও মুসলিম)। -‘জাহান্নামের মধ্যে উটের মতো শক্তিশালী সাপ এবং খচ্চরের আকৃতির বড় বড় বিচ্ছু রয়েছে। এগুলোতে একবার দংশন করলে ৪০ বৎসর পর্যন্ত বিষের জ্বালা থাকবে।’ -(আহমাদ)।

যারা আল্লাহ্র বিধান এবং রাসুলের নির্দেশিত পথে চলছে। তাদের প্রতি অনুরোধ এখনও সময় আছে সেরাতাল মুস্তাকিমের পথে চলে আসুন। এ দুনিয়াটা একটা খেলাঘরের চাইতেও অধম। তাই স্থায়ী ঠিকানা কেয়ামতের জন্য প্রস্তুতি নিন। আসুন সকলে মহান আল্-আমিনের কাছে জাহান্নাম হতে রক্ষা পাইবার জন্য সালাতের সাথে দোয়া করি- আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান নারি। (তিরমিজী)। বাংলা অর্থ- ‘হে আল্লাহ্ আমাকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করো।’ নামাজান্তে আল্লাহর কাছে জাহান্নামের শাস্তি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ -(বুখারী ও মুসলিম) এ দুদিনের দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে আখেরাতের জন্য প্রন্তুত নেই এবং তা আজই। এখনই। আল্লাহ্ আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমিন।

মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন, সাংবাদিক ও কলাম লেখক, ফোন নং- ০১৭১-০৮৮৩৪১৩,